পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয় একনেক সভায় মোট ৩ হাজার ১৭১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) শেরেবাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই অনুমোদন দেয় সরকার।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মোট নতুন আটটি প্রকল্পকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মোট ব্যয়ের মধ্যে জিওবি ২ হাজার ৫৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৫৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
পাবনার পাকশীর কাছাকাছি নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি সমুদ্রবন্দর থেকে পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হবে নৌ-পথ। এজন্য ‘মংলা হতে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌ-রুটের নাব্যতা উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে। এর ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী মালামাল পরিবহন নিরাপদ ও সহজতর হবে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থেকে নৌ-পথে রূপপুর পর্যন্ত নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করাই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য।
এর মধ্যে রয়েছে নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন (আর-২০৩)। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর উপজেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগযোগ স্থাপিত হবে। এর মূল উদ্দেশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরকে প্রধান সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা, যানবাহন চলাচল, মালামাল পরিবহন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত ও ট্রাফিক নিরাপত্তা উন্নততর করা।
অনুমোদিত আরেকটি প্রকল্প হলো ৫৯ কিলোমিটার জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর-কদমতলা (রৌমারী) জেলা মহাসড়ক (কামালপুর স্থল বন্দর লিংকসহ) প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো— কামালপুর স্থলবন্দর এবং তুরা স্থলবন্দরকে সওজ নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন, যানজটমুক্ত নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর পুরোটাই জিওবি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়ন হবে এটি।
সিলেট টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন প্রকল্পটিও অনুমোদন পেয়েছে একনেকে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আরএমজিসহ বস্ত্রশিল্প খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের রপ্তানি খাতে বস্ত্র খাতের অবদান প্রায় ৮০ শতাংশ। এ খাতে উত্তরোত্তর অগ্রগতির সঙ্গে প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবলের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বস্ত্র পরিদফতর কর্তৃক প্রণীত ‘২০১৪-১৫ সাল থেকে ২০২০-২১ সাল নাগাদ দেশ-বিদেশে টেক্সটাইল দক্ষ জনবলের চাহিদা সরবরাহ গ্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (ডিপিপি পৃষ্ট:৮২-৮৩) দেখা যায়, ২০২০-২০২১ সাল নাগাদ এক্সিকিউটিভ লেভেলে (বিএসসি পাশ) বস্ত্র প্রকৌশলীর চাহিদা থাকবে ২৫ হাজার ৩০৩ জনের। কিন্তু পাওয়া যাবে ১৭ হাজার ৫০০ জন। অর্থাৎ ঘাটতি থাকবে ৭ হাজার ৮০৩ জনের। আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ১২০ জন বিএসসি ডিগ্রিধারী বস্ত্র প্রকৌশলী তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কলেজটির নামকরণ হবে ‘শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সিলেট’।
মঙ্গলবারের একনেকে উপস্থাপিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো— রাজবাড়ী শহর রক্ষা (দ্বিতীয় পর্যায়), টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলাধীন যমুনা নদীর বামতীরবর্তী কাউলীবাড়ি ব্রিজ থেকে শাখারিয়া (ভরুয়া-বটতলা) পর্যন্ত তীর সংরক্ষণ এবং মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে চাঁদপুর জেলার হরিণা ফেরিঘাট এবং চরভৈরবী এলাকার কাটাখাল বাজার রক্ষা। তিনটিই পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার ৯৫ কিলোমিটার, মিয়ানমারের ২৫৬ কি.মি. এবং উপকূলীয় এলাকায় ৫৮০ কি.মি. আন্তর্জাতিক সীমারেখা রয়েছে। এসব সীমারেখার মধ্যে অনেক স্থলবন্দর রয়েছে যেখান দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। এছাড়া প্রতিনিয়ত অনেক পর্যটক স্থলবন্দরগুলো দিয়ে চলাচল করে। এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১: শেওলা, ভোমরা, রামগড় স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে একনেকে।
প্রকল্পটি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে শেওলা, ভোমরা, রামগড় ও বেনাপোল স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি। পাশাপাশি ভোমরা, শেওলা ও রামগড় স্থলবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনপূর্বক পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি করা। গত মাসে কাজ শুরু হওয়া প্রকল্পটি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।