1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দেশের রাজনীতিতে ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতি

অরুণ কর্মকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩

মাত্র অর্ধ শতক পেরিয়ে আসা এই দেশ রাজনীতির কতশত লীলাখেলাই যে দেখেছে! এখনো দেখে চলেছে। সুদূর ভবিষ্যতেও দেখবে বলে নিশ্চিত আশা করা যায়। কারণ এ দেশের রাজনীতিকেরা সব ওস্তাদ খেলোয়াড় (সারা দুনিয়ার রাজনীতিকেরাই বোধ হয় একই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত)। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই দেশটা এই ওস্তাদ খেলোয়াড়দের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।

এ দেশের রাজনীতিকেরা যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য-স্বাধীন একটি দেশে জনপ্রিয় বুলি আর মুখরোচক স্লোগান তুলে স্বাধীনতাবিরোধী সব শক্তিকে এক কাতারে সমবেত করে মুক্তিযুদ্ধের ধারাকে পাল্টে দেওয়ার কৌশল জানেন। তাঁরা পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ এক করে দিয়ে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিতে চান এবং তার কলাকৌশল জানেন। সামরিক স্বৈরাচারের দোসর হয়ে দীর্ঘকাল রাষ্ট্রক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভোগ এবং উপভোগ করতে তাঁরা পারঙ্গম। আবার সেই স্বৈরাচারের পতনের পর কীভাবে গণতন্ত্রের লেবাস পরে ক্ষমতার উচ্চাসনে আরোহণ করতে হয়, তা-ও তাঁদের মতো ভালো আর অন্য কেউ জানে না।

এ দেশের রাজনীতিকেরা যুগপৎ ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আবার রাজনৈতিক সরকারের অধীনে মাগুরা স্টাইলেও নির্বাচন করতে জানেন। ভোটার তালিকায় দুই কোটি ভুয়া ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন (!) আয়োজনের উদ্যোগ নিতে পারেন। আবার রাতের ভোটের মতো সৃজনশীল কর্ম সম্পাদনের কলাকৌশলও তাঁদের আয়ত্তে। এমনই ওস্তাদ তাঁরা। ওস্তাদ না হয়ে উপায়ই-বা কী? প্রতিপক্ষের লক্ষ্যই যে অন্য পক্ষকে চিরতরে শেষ করে দেওয়া। তা সে জনসভার মঞ্চে গ্রেনেড মেরেই হোক, কিংবা মঞ্চের নিচে বোমা পেতেই হোক আর মামলায় ফাঁসিয়েই হোক। ওস্তাদ না হলে এগুলো মোকাবিলা করে টিকে থাকবেন কী করে?

এই যে আওয়ামী লীগ টিকে আছে এ তো এক প্রকার বিস্ময়ই বটে! আওয়ামী লীগকে তো কবরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই ১৯৭৫-এর আগস্টে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর হত্যাকারীরা বলেছেও সে কথা। বলেছে আওয়ামী লীগের প্রায় সব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও। তার ওপর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে সংসদে পাস করা হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। জেলখানায় হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠতম চার জাতীয় নেতাকে। তারপর ২১ বছর তো আওয়ামী লীগের জন্য সেই কবর থেকে উঠে এসে পুনর্জন্ম লাভের মতোই। এই যে এসেছে, একবার এসে আবার যেতে হয়েছে, আবার এসেছে এবং বহাল আছে তা কি রাজনৈতিক ওস্তাদি ছাড়া সম্ভব হতো?

কিংবা বলা যায় জিয়াউর রহমানের কথা। ১৯৮১ সালে তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকেই বলেছে, বিএনপির অস্তিত্ব আর থাকবে না। যারা প্রকাশ্যে বলেনি, তারাও একই কথা মনে করেছে। কিন্তু বিএনপি ফিরে এসেছে। প্রবলভাবে এসেছে। রাজনৈতিক ওস্তাদি ছাড়া এ-ও সম্ভব হতো না। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিকেও এসে আবার যেতে হয়েছে। পুনরায় আসতে চাইছে। এই যে আসা-যাওয়া রাজনীতিতে, এটা তো চিরদিনের ব্যাপার নয়। আসাও নয়। যাওয়াও নয়। আসলে রাজনীতিতে ‘ডু আর ডাই’ বলে বোধ হয় কিছু হয় না। রাজনীতিতে যা হয় তা হলো, ‘ডু স্ট্রেটওয়ে অর ডু আদারওয়ে অর এনাদারওয়ে’। কিন্তু পথ যেটাই হোক, পন্থা হতে হবে গণতান্ত্রিক।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেমন জয়ী হয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়, তেমনি বিএনপি চায় ক্ষমতায় আসতে। আসতে চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্ররা কেউই নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে যে চারটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলো, আর একটি হতে পারল না, এই প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যেও তো কিছু ওস্তাদি ঢুকে পড়েছে। রাজনীতির মধ্যে পলিটিকস ঢুকে যাওয়ার মতো। তাহলে সেই ব্যবস্থার ওপর সবাই আস্থা রাখবেন কেন? বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তারাও কি চাইত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন? আওয়ামী লীগও চায় না। চাইবেও না। সে জন্য সাংবিধানিক রক্ষাকবচও তার আইনগত ও বৈধ সহায়ক হিসেবে রয়েছে। কেউ কারও অবস্থান থেকে সামান্যতম নড়তে রাজি নয়।

তাহলে সমাধান কী? বিরোধী দলগুলো তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে। এখন তারা চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনে আছে। এই পর্যায়ে তারা চাইছে একটা গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে। বিরোধী দলগুলোর দাবির পক্ষে সেটাই হতে পারে জনগণের ম্যান্ডেট। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করার মতো বা হওয়ার মতো বাস্তব পরিস্থিতি কি বর্তমানে দেশে বিরাজ করছে? বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের বিষয়ে এটাই হচ্ছে এই মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রশ্ন।

গণ-অভ্যুত্থানের যে মৌলিক চরিত্র, তাতে বিরোধী দলগুলোর ডাকে, তাদের কর্মসূচিতে সমাজের বিভিন্ন স্তর ও শ্রেণি-পেশার মানুষের রাজপথে নেমে অংশ নেওয়ার কথা। এ দেশ প্রথম গণ-অভ্যুত্থান দেখেছে ১৯৬৯ সালে। সেটা ছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন। আন্দোলনকারীদের ডাকে আদমজী, বাওয়ানিসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক রাজপথে চলে এসেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দলে দলে ছাত্ররা চলে এসেছে আন্দোলনকারীদের কাতারে। সরকারি অফিস-আদালত থেকেও দলে দলে এসে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতনের আন্দোলনে। সেই আন্দোলনের জোয়ারে আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। সেই নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগেনি। মানুষই ঠিক করে দিয়েছে কে ক্ষমতায় বসবে।

এ দেশ দ্বিতীয়বার গণ-অভ্যুত্থান দেখেছে ১৯৯০ সালে। সেই অভ্যুত্থান জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসান নিশ্চিত করেছিল। তখনো ছাত্র-শ্রমিক-সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজপথে নেমে এসেছিলেন। বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের চলমান যুগপৎ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সমাবেশগুলোতে জনসমাগমের কথা যদি ধরি তাহলেও বলতে হবে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলেরই সক্রিয় কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা কয়েক লাখ করে। তা ছাড়া ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে ওই দুই দলের ভোটের সংখ্যাও কাছাকাছি। কাজেই এই দুই দলের যে কোনোটির জনসভা-সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের উপস্থিতি বিশেষ কোনো বার্তা বহন করে না। এ ক্ষেত্রে একমাত্র পার্থক্য গড়ে দিতে পারে গণ-অভ্যুত্থান, যে লক্ষ্যে বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্ররা যুগপৎ আন্দোলনে শামিল আছে। তবে গণ-অভ্যুত্থানের কোনো বৈশিষ্ট্য এখন পর্যন্ত তাদের আন্দোলনে নেই।

তাদের ধারাবাহিক আন্দোলনে মহাসমাবেশের পর আসা আলটিমেটাম, অর্থাৎ সরকারের পদত্যাগের জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়াকে আন্দোলনের সর্বশেষ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই আলটিমেটামও যদি সরকার গায়ে না মেখে উপেক্ষা করে, তখন হয়তো জনগণ রাজপথে নেমে এসে গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে। মনে রাখতে হবে রাজপথ কিন্তু একেবারে খালি পড়ে নেই। সেখানে সরকারি দল আছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েই রেখেছে। তাহলে রাজপথ ভাগাভাগি করতে হতে পারে দুই পক্ষের। তাতে সংঘাতের, সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু সেটা কোনো পক্ষের জন্যই ভালো হবে না; বিশেষ করে জনগণের জন্য তো নয়ই। কাজেই সেই পরিস্থিতি কে কীভাবে সামলাবে কিংবা তার পরিণতি কী হবে, সেই ভাবনাটা জরুরি। এবারের আন্দোলনে সেটাই হবে রাজনীতিকদের সবচেয়ে বড় ওস্তাদি।

লেখক: অরুণ কর্মকার – জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।


সর্বশেষ - রাজনীতি