1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষায় করণীয়

ড. মো. নাছিম আখতার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩

বিশ্বজুড়েই সাইবার সংস্কৃতির প্রসার ঘটেছে। তার সঙ্গে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। রিউমার স্ক্যানারের তথ্যমতে, গত বছর তারা অন্তত এক হাজার ৪০০টি গুজব শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে গুজব ছিল ২০৬টি, রাজনীতিবিষয়ক ৯২টি, জাতীয় ইস্যুতে ১১৫টি, খেলাধুলা নিয়ে ১৫৬টি এবং শিক্ষা বিষয়ে ৩৮টি গুজব ছড়ানো হয়েছে।

ছিল কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ১১১টি গুজব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় দেশে ছড়িয়ে পড়া ৬৬টি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্যও শনাক্ত করেছে সংগঠনটি। ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কৌশল বেশ পুরনো। অন্যদিকে ফেসবুক পোস্টের কারণে হামলা, নির্যাতন এবং মামলার ঘটনাও নতুন নয়।

নারীরাই ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হচ্ছে। হ্যাকিংয়ে মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি এবং সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চুরির ঘটনা সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ খালি, শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রভৃতি অপতথ্য বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিত্তিহীন এমন তথ্যে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছে।

গুজব নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে অনেকাংশে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সাধারণত গুজবগুলো ফেসবুক নিউজ ফিডে ও ইনবক্সের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যারা এসব জায়গায় পোস্ট শেয়ার করে, তারা হয়তো ঘণ্টায় ১০ হাজার মানুষের কাছে একটা মেসেজ পাঠাতে পারে। একই পোস্টের কাউন্টার পোস্ট আমরা ভাইরাল করতে পারি ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে ঘণ্টায় এক লাখ মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছানো অসম্ভব কিছু না।

গুজবের পোস্ট দেখলেই সেটা নিয়ে স্ট্যাটাস না লিখে অথবা শেয়ার না করে সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করে দেওয়া যেতে পারে। যখন অনেক মানুষ একসঙ্গে রিপোর্ট করবে, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেসবুক অথবা সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রি-ভাইরাল অ্যাওয়ারনেস তৈরি করতে হবে। কোনটি গুজব আর কোন ধরনের পোস্ট শেয়ার করা যাবে না—এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা জরুরি।

ইন্টারনেট বা ভার্চুয়ালজগতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাইবার প্যাট্রলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাইবার ক্রাইম ইউনিট আগের চেয়ে শক্তিশালী। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। সাইবার টহলও সর্বব্যাপ্ত নয়। সাইবারজগতের বিশৃঙ্খলা আগে চিহ্নিত করতে পারলে তা প্রচলিত অপরাধে পরিণত হওয়ার পূর্বেই থামিয়ে দেওয়া সম্ভব। সেটা করতে হলে শুধু লোকবলই নয়, যথেষ্ট দক্ষতারও প্রয়োজন। বিটিআরসির তথ্যমতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কিংবা সরকারের কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে আপত্তিকর কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধ বিটিআরসিতে আসা একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এই অনুরোধগুলো বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ার কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষের অনুরোধ রাখার হার মাত্র ৩৫ শতাংশ। এই সংখ্যামান উন্নয়নে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার সঙ্গে বাংলাদেশের মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ট্রিটি-এমলেট স্বাক্ষর করা জরুরি।

ইন্টারনেটে তথ্যকে চুরি বা হ্যাকিংয়ের হাত থেকে রক্ষা এবং ম্যালওয়্যার থেকে ব্যবহারকারীকে নিরাপদ রাখা সাইবার নিরাপত্তা বিধানের অংশ। সাইবার নিরাপত্তা হুমকিগুলো সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকলে ভার্চুয়ালজগতে নিরাপদ থাকা সহজ। সাইবার নিরাপত্তায় হুমকি বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাডওয়্যার। অ্যাডওয়্যার মূলত আপনাকে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখাবে। ভালোভাবে না জেনে কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল কিংবা ব্রাউজার প্লাগ ইন ইনস্টল করার মাধ্যমে অ্যাডওয়্যার ঢুকে পড়বে আপনার সিস্টেমে।

ম্যালওয়্যার বা কম্পিউটারের ভাইরাস এক ধরনের প্রগ্রাম, যা কম্পিউটারের সিস্টেমের গভীরে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। সিস্টেম প্রগ্রামিং পারদর্শিতার উৎকর্ষ আমাদের সাইবার নিরাপত্তার বেষ্টনকে মজবুত করবে। বাড়াবে রাষ্ট্রের ইথিক্যাল হ্যাকারের সংখ্যা। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ইথিক্যাল হ্যাকিং খুবই প্রয়োজনীয়। ইথিক্যাল হ্যাকিং হচ্ছে কম্পিউটার সিস্টেম, অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের দুর্বলতা বা ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোর সমাধান করে দেওয়া এবং সেটিকে আরো বেশি নিরাপদ করে তোলা। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি নামে যে বিভাগগুলোতে ডিগ্রি দেওয়া হয় সেগুলোতে কম্পিউটার প্রগ্রামিংয়ের দক্ষতা বাড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে বাস্তবে এই চেষ্টার বাস্তবায়ন খুব কম ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমার জানা মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো কোনোটিতে এক সেমিস্টারে ৯০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এত শিক্ষার্থীকে ল্যাবনির্ভর পড়াশোনায় যুক্ত করা খুব সহজ বলে আমার মনে হয় না। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব ডিগ্রি সনদনির্ভর হয়ে পড়ছে, যা হ্যাকিং মোকাবেলায় দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির অন্তরায়।

তথ্য সুরক্ষার জন্য ফায়ারওয়াল, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার কেনা জরুরি। তার চেয়ে বেশি জরুরি গভীর জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ প্রগ্রামার তৈরির পরিবেশ। এর মূলে রয়েছে গণিত শিক্ষার সঠিক প্রসার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে প্রগ্রামিং শেখার সংস্কৃতির বিকাশ। জাতি হিসেবে বিষয়টি আমরা যত দ্রুত অনুধাবন করব, ততই আমাদের মঙ্গল।

লেখক: ড. মো. নাছিম আখতার – উপাচার্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও  প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি