1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মাতারবাড়ি প্রকল্প ঘিরে দিনবদলের পথচলা

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩

২০১৮ সালে মাতারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন মো. আলমগীর হোসেন। পড়ালেখার প্রবল আগ্রহ থাকলেও পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে তাকে যোগ দিতে হয় কাজে। বাবা-মা ও দুই ছোট বোন নিয়ে সংসার। অসুস্থ বাবার চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ নেন আলমগীর। মাসে ২৫ হাজার টাকা বেতনের ওপর ভর করেই চলে তার পরিবার।

১০ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করতেন মো. রুবেল। মাতারবাড়ির এ বাসিন্দা এখন তার পেশা পরিবর্তন করেছেন। মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় কম আয় হওয়াসহ নানা কারণে মৎস্য ব্যবসার পরিবর্তে তিনি এখন সিএনজি অটোরিকশা চালান। পেশা পরিবর্তনের বিষয়ে মো. রুবেল বলেন, মাছের ব্যবসায় লাভ হচ্ছিল না। নতুন করে রাস্তাঘাট যেহেতু হয়েছে তাই এখন অটোরিকশা কিনে চালাই। ভালোই ভাড়া পাই, আয়ও হয় ভালো।

কক্সবাজারে দেশের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মানুষ এক সময় যেখানে মৎস্য আহরণ, লবণ চাষ, চিংড়ি চাষ, জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতো এখন সেখানে অনেকে করেন চাকরি। কেউ আবার পেশা পরিবর্তন করে অটোরিকশা চালানো কিংবা অন্য কোনো পেশায় জড়িত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে স্থানীয় প্রায় এক হাজার মানুষ মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের এ প্রকল্পটিতে কাজ করছেন। আগে এসব মানুষ যেখানে মাসে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় করতেন সেখানে তারা এখন আয় করেন ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা।

শুধু পেশাগত পরিবর্তনই নয়, প্রকল্প এলাকায় যারাই জমি অধিগ্রহণের কবলে পড়েছেন তাদেরও পুনর্বাসন করা হয়েছে। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত এসব আবাসন প্রকল্পের আওতার মানুষ। পাশাপাশি প্রকল্পটি কেন্দ্র করে পুরো মাতারবাড়িতেই যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্রের কোলঘেঁষে বিশাল এলাকাজুড়ে ছোট ছোট জায়গাজুড়ে বসতবাড়ি। এসব স্থানে আগে অধিকাংশ জমিতেই মৎস্য ও লবণ চাষ করা হতো। এখন মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরের মেগাপ্রকল্পের কাজ চলায় সেখানে এসেছে আমূল পরিবর্তন। প্রকল্প এলাকায় যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বিশাল আকারের রাস্তা। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে শতভাগ পল্লি বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। কয়লা আমদানির পর তা সংরক্ষণের জন্য বানানো হয়েছে কোল ইয়ার্ড। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় অ্যাশ ডিসপোজাল এরিয়া এবং বাফার জোন করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কয়লা খালাসে জাহাজ ভেড়াতে জেটির কাজও শেষ। জেটিতে জাহাজ ভেড়াও শুরু হয়েছে। পুরো এলাকার চালচিত্র পাল্টে দিয়েছে এ মেগাপ্রকল্প।

মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হায়দার বলেন, সারাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তার প্রভাব এ মেগাপ্রকল্পের কারণে আমাদের এখানেও পড়েছে। অবকাঠামোগত ও যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন হয়েছে, যা জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন এনেছে।

মহেশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন বলেন, প্রকল্প এলাকায় আগে চিংড়ি ও লবণ চাষ হতো। এখন সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মহেশখালী থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে মাতারবাড়ি আসতে। এখন সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মতো। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে রেল যোগাযোগও তৈরি হবে মাতারবাড়িতে।

২০১৫ সালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সাগর উপকূলের ইউনিয়ন মাতারবাড়িতে জাপানি অর্থায়নে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার পাশাপাশি শুরু হয় কয়লা খালাসে বন্দরের অবকাঠামো ও জেটি নির্মাণের কাজ। দেশের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের এ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৫১ হাজার সাড়ে ৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জাপানের নিগাতা এবং কাশিমার বন্দরের আদলে নির্মিত বৃহৎ এ প্রকল্পের কাজ অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল)।

জাইকার অর্থায়নে সাত বছর মেয়াদি এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতা করছে জাপানের সুমিতোমো, তোশিবা ও আইএইচআই কোম্পানির কনসোর্টিয়াম। প্রকল্পের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জেটি ও ভৌত অবকাঠামোর কাজ ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, সার্বিক ভৌত অবকাঠামোর কাজ হয়েছে ৯০ শতাংশ।

সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে প্রকল্পটির নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হক বলেন, আমাদের এ প্রজেক্টের দুটি পার্টের মধ্যে একটা হচ্ছে পাওয়ার প্ল্যান্ট, আরেকটি পোর্ট। পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে আমরা ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো। এখানের পুরো কাজ এরই মধ্যে হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর সময় মাত্র একবার ওই কয়লা দেখা যাবে। তারপর ওই কয়লা সরাসরি জেটি থেকে প্ল্যান্টে চলে যাবে। এতে পরিবেশ দূষিত হবে না।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এরই মধ্যে অউসো মারুসহ ছয়টা জাহাজ এসেছে। সেখান থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আনলোড করে মজুত করা হয়েছে। আগামী মাসে পরবর্তী জাহাজটিও চলে আসবে। ফলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রথমটি থেকে ৬শ মেগাওয়াট এবং দ্বিতীয়টা থেকেও ৬শ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। তবে প্রতি ৬শ মেগাওয়াট থেকে অন্য খরচ হিসেবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বিদ্যুৎ চলে যাবে, বাকিটা যুক্ত হবে।

প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হক বলেন, আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় গ্রিডে ৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের যেটা (প্রথম ইউনিট) ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে করার কথা, সেটা আমরা আশা করি ডিসেম্বরেই পুরোদমে চালু করতে পারবো। আর দ্বিতীয়টা চালু করার চিন্তা করছি আগামী বছরের জুলাইয়ে।

এদিকে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আনার জন্য একটি বন্দর করারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যা দেশের আধুনিক সমুদ্রবন্দর হিসেবেও গড়ে তোলা হবে। ৫৯ ফুট গভীর এ বন্দরে ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। জাপানের তোশিবা করপোরেশন এ বন্দরটি নির্মাণ করবে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ হলেও এখনো সেভাবে শুরু হয়নি গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ। গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলেই সড়ক, নৌপথের পাশাপাশি রেলপথও চালু হবে।

মেগা এ প্রকল্পের ফলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার বিষয়ে প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হক বলেন, বর্তমানে সাত-আট হাজার মানুষ এ প্রকল্পে কাজ করছে। পুরোদমে চালু হলে বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় ৬শ মানুষের প্রয়োজন পড়বে।


সর্বশেষ - রাজনীতি