1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রবৃদ্ধির সঙ্গে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য

ড. আতিউর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩

সম্প্রতি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত কৃষ্ণ সাগরীয় খাদ্য সরবরাহ চুক্তি থেকে রাশিয়া হাত গুটিয়ে নিয়েছে। এর ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকাকালেও ইউক্রেন থেকে গম ও ভুট্টা আমদানির যে সুযোগ বাংলাদেশসহ অনেক দেশ পাচ্ছিল, তা বন্ধ হওয়ার পথে। অন্যদিকে খরা, বন্যাসহ তীব্র জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটের কারণে ভারত থেকে গম আমদানিও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশ বাড়ন্ত।

বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতিও ভারত বা থাইল্যান্ডের মতো দ্রুত কমছে না। এ ছাড়া বর্ষাকালে বর্ষা না এলেও আঞ্চলিক নদী অববাহিকার কারণে কিছু অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে পর্যাপ্ত প্রণোদনা দিয়েই চলেছে। শিল্প খাতের পুনর্জাগরণ ততটা না হলেও রপ্তানি ও প্রবাস আয় মোটামুটিভাবে ইতিবাচক ধারায়ই আছে।

হালে রাজনৈতিক টানাপড়েন এবং অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে খানিকটা চাপ সৃষ্টি হলেও প্রবৃদ্ধির ধারা এখনো ইতিবাচক রয়ে গেছে। গেল অর্থবছরে বরং প্রবৃদ্ধির হার প্রক্ষেপণের চেয়ে খানিকটা বেশিই হয়েছে বলে এডিবি জানিয়েছে। গেল অর্থবছরের জন্য সংস্থাটির পূর্বাভাস ছিল ৫.৩ শতাংশ। বাস্তবে তাদের মতে, এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সংখ্যাটি আরো বেশি হলেও এডিবির সংখ্যাটিও মন্দ নয়। অন্যদিকে আমদানি প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা অনেকেই করেছিল বাস্তবে তা হয়নি। সরকারি নানামুখী নীতি সহায়তার ইতিবাচক প্রভাব উৎপাদনের ওপর পড়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও দাবদাহের কারণে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছিল তা আংশিক ভর্তুকি, প্রণোদনা ও অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে পূরণ করা গেছে।

ঈদসহ বিভিন্ন উদযাপনের সময় জনসাধারণের পণ্য ক্রয় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হয়েছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না বাড়লেও সরকারি বিনিয়োগ বেশ বেড়েছে। আর এসব কারণেই চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস ৬.৫ শতাংশই রেখে দিয়েছে সরকার।

নিঃসন্দেহে বাড়ন্ত প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস এশিয়া ও প্রশান্ত অঞ্চলের স্থানীয় চাহিদা ও সেবা খাতের চাঙ্গা ভাবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তবে এ অঞ্চলে পর্যটকদের আনাগোনা আমাদের দেশ থেকে অনেকটাই বেশি। এ অঞ্চলের মূল্যস্ফীতিও ৩.৪ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই বিচারে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির সংখ্যাটি বেশি। বাংলাদেশ সরকারই বলছে এই হার ৬ শতাংশের মতো হবে। যদিও বর্তমান খাদ্য মূল্যস্ফীতির আশঙ্কার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলা চলে এই হার অর্জনও বেশ কষ্টকর হবে। এ প্রেক্ষাপটেই আইএমএফের সফরকারী পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিভাসন প্রবৃদ্ধির ধারা অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি ‘টাইট’ মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন। এমনটি যদি করা যায় তবেই এক দশকের বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা তার ওপর ভর করে ২০২৬ সালে ‘স্বল্পোন্নত’ থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। সে কারণেই বিখ্যাত মার্কিন অনলাইন পত্রিকা পলিসিওয়াচারের ২২ জুলাই সংখ্যায় বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক মডেল। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ২৭১ গুণ বেড়েছে। এ দেশের মাথাপিছু আয় এখন পাকিস্তানের দ্বিগুণ। বিশ্বশান্তি সূচক, অর্থনৈতিক মুক্তি সূচকসহ আর্থ-সামাজিক প্রায় সব সূচকেই এমনকি ভারত থেকেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে দেশের বাইরে থেকে আসা অর্থনৈতিক চাপের মাত্রা এখনো যথেষ্ট মাত্রায় রয়ে গেছে। এর প্রভাব কষ্ট করে গড়ে তোলা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর পড়েছে। প্রতিদিন রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে দিতে হচ্ছে। তাই একদিকে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করতে হয়েছে, অন্যদিকে বিদেশি মুদ্রার চাহিদা কমানোর শক্ত উদ্যোগ নিতে হয়েছে। এর প্রভাব আমদানি করা পণ্যের দামের ওপর পড়েছে। পাশাপাশি জ্বালানির দাম বাড়াতে হয়েছে। এর প্রভাবও মানুষের জীবনচলার ওপর পড়েছে। সরকারকে বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে প্রচুর বিদেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। এক আইএমএফ থেকেই ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ কর্মসূচি চালু করতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, অন্যান্য বহুজাতিক ও দ্বিপক্ষীয় সংস্থা থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রচুর ঋণ নিতে হয়েছে। অবশ্য এসব ঋণ দীর্ঘমেয়াদি। কম সুদের। গ্রেস পিরিয়ডও বেশ লম্বা। তাই বৈদেশিক ঋণের কিস্তি শোধ করতে বাংলাদেশের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এক মাসের প্রবাস আয় দিয়েই এক বছরের ঋণের কিস্তি শোধ করা সম্ভব।

বর্তমান বাস্তবতায় স্বল্প সময়ের জন্য আমাদের বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। সে জন্য সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি করে ঋণ নিচ্ছে। আমদানি কমে যাওয়ার কারণে সরকারের শুল্ক আরো কমে গেছে। তাই দেশি ঋণ বেড়ে চলেছে। এর প্রভাব আবার মূল্যস্ফীতির ওপর পড়েছে। সে কারণে সরকারি খরচে আপাতত আরো জোরে লাগাম টানার প্রয়োজন রয়েছে। শুধু যেসব প্রকল্প অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, সেগুলোতে অর্থ ঢেলে, বাকি নতুন প্রকল্পের সূচনা আপাতত স্থগিত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

একই সঙ্গে বহিঃঅর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্জনে নীতিনির্ধারকদের আরো তৎপর হতে হবে, বিশেষ করে চলতি মুদ্রানীতিতে একটি মাত্র বাজারনির্ভর বিনিময় হার চালু করার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা দ্রুতই বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনেকটাই অগ্রগতি হলেও আরেকটু পথ পাড়ি দিতে হবে। এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া ডলারের বিপরীতে ১০৯ টাকার চেয়ে কার্ব মার্কেটে বিনিময় হার অন্তত তিন-চার টাকা বেশি। তার মানে বাজারে ডলারের চাহিদা বেশিই রয়ে গেছে। তাই একদিকে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে, অন্যদিকে বিনিময় হারকে আরো নমনীয় করার সুযোগ রয়েছে। বাজারের ধর্মকেও বুঝতে হবে। ‘মার মার কাট কাট’ না করে বাজারের গতি-প্রকৃতি বুঝে উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করতে হবে।

এবারে বৈদেশিক খাত নিয়ে আরেকটু গভীর দৃষ্টি দেওয়া যাক। চলতি অর্থবছরের মে ২০২৩ পর্যন্ত কারেন্ট অ্যাকাউন্টের স্থিতিতে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪.৫১ বিলিয়ন ইউএস ডলার। এটি ফিন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সমন্বিত হওয়ার কথা। কিন্তু ফিন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্টের স্থিতিতেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতির পরিমাণ এখন ২.৫৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের স্থিতিতে ঘাটতি ফিন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্টের স্থিতি তথা বিদেশি বিনিয়োগ, স্বল্পমেয়াদি ঋণ দ্বারা সমন্বয় হয়ে আসছিল। কিন্তু হালে এই সমন্বয় প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয়।

চলতি সময়ে নানামুখী পদক্ষেপ, যেমন—এলসি মার্জিন, আমদানি মূল্য/ইনভয়েস মনিটরিং ইত্যাদি গ্রহণের মাধ্যমে আমদানি কমিয়ে আনা হয়েছে। নানা কারণে বাণিজ্যিক আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংক এখন এলসি স্থাপনে অনীহা প্রকাশ করছে। ছোটখাটো আমদানিকারকরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন। তাঁদের বেশির ভাগই এখন অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও অন্য পণ্য আমদানি করছেন বলে প্রতীয়মান হয়। আমদানি বিকল্প শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

শিল্পের কাঁচামাল আমদানি স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কিংবা ইউপাস (ইউজেন্স পেমেন্ট অ্যাট সাইট) এলসির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কিছু ব্যাংকের নেতিবাচক পেমেন্ট বিহেভিয়ারের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে দুবাইভিত্তিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের ওপর ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংক সময় পেরিয়ে গেলেও এলসি সেটেলমেন্ট করেনি। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি ব্যাংকগুলোও নতুন করে বৈদেশিক মুদ্রার এক্সপোজার নিতে দ্বিধা করছে। মনে হয় তারাও যেকোনো কারণে ভয়ে আছে। ফলে ইউপাস এলসি এবং বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে আমদানির সুযোগ না থাকায় সাইট/নগদ আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমদানি বিকল্প শিল্পগুলোর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। প্রায় দেড় দশকে বাংলাদেশে আমদানি বিকল্প শিল্প অধিকমাত্রায় বিকাশের ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে ধাবমান গতিতে। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও তাদের বিরাট ভূমিকার কথা মানতেই হবে। বর্তমান গতিশীল অর্থনৈতিক কার্যক্রম অতিমাত্রায় বহিঃখাতের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি খাত থেকে আরম্ভ করে আমদানি বিকল্প শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্প নানা ধরনের কাঁচামাল আমদানির ওপর ভর করেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমদানির ওপর প্রযোজ্য শুল্ক কখনোই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না, বরং সরকারি রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে তা বিবেচিত হয়। আমদানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। এর ফলে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাবসহ সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এমন বাস্তবতায় আমাদের করণীয় কী?

১. আন্ত ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিচালনার দায়িত্ব ফের বাংলাদেশ ব্যাংককে নিতে হবে।

২. এলসি স্থাপনের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের আতঙ্কভাব বন্ধ করতে হবে, যাতে বাণিজ্যিক আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানও এলসি সুবিধা পেতে পারে।

৩. বিদেশ থেকে আনুষ্ঠানিক পথে আরো বেশি ডলার প্রবাহের জন্য ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, প্রিমিয়াম বন্ডের সুদ বাড়াতে হবে এবং এর কেনাবেচা ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে সহজতর করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে বিকাশসহ মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে আরো বেশি করে প্রবাস আয় আনার চেষ্টা করতে হবে।

৪. আমদানি দায় পরিশোধে কোনোরূপ বিলম্ব না ঘটে সে লক্ষ্যে ড্যাশবোর্ডের সাহায্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমদানি বিল পেমেন্ট মনিটরিং ব্যবস্থা ফের সক্রিয় করতে হবে।

৫. বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পজিটিভ সিগন্যাল প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি ব্যাংকের রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর শাখা অফিসের সঙ্গে আলোচনা করে আমদানি দায় পরিশোধ ব্যবস্থা মনিটরিং সিস্টেমে আনার বিষয়টি জানাতে হবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি আমদানি দায় পরিশোধে কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হলে তা জোর তদারকির মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।

৬. এলসি ছাড়া বাণিজ্যিক আমদানির সীমা (বর্তমানে বছরে পাঁচ লাখ ইউএস ডলার) প্রতি চালানের জন্য প্রযোজ্য করতে হবে।

৭. বাণিজ্যিক আমদানি ১২০ দিনের ডেফার্ড সুবিধা দিতে হবে, যাতে আমদানি কার্যক্রমে গতি আনতে সহায়ক হয়।

৮. চুক্তির মাধ্যমে আমদানি কার্যক্রমের বিপরীতে পেমেন্ট সেটলমেন্ট যাতে যথাসময়ে হয় সে বিষয়টি মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এতে আমদানি বাণিজ্যে এলসির ওপর নির্ভরতা কমবে। ফলে কনফারমেশন চার্জ বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

৯. বৈদেশিক মুদ্রায় স্থানীয় ট্রেড রিসিভেবল অনলাইন ট্রেড প্ল্যাটফরমের আওতায় আনতে হবে। এর ফলে সরবরাহ বিল বিক্রির ব্যবস্থার মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে অর্থের সংস্থান করা সহজতর হবে। এতে বাজারে তারল্য সংকট কেটে যাবে।

১০. রপ্তানি বাণিজ্যে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। যৌক্তিক কারণে রপ্তানি মূল্যপ্রাপ্তিতে খানিকটা বিলম্ব হলে তা বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি ইডিএফের বিকল্প টাকা-প্রিফিন্যান্স তহবিলের আকার বৃদ্ধিসহ অফশোর ব্যাংকিংব্যবস্থার আওতায় আমদানি বিল পেমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেওয়ার নীতি সহায়তা দিতে হবে।

১১. সেবা খাতের আয় প্রত্যাবাসনে উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফরেন কারেন্সি হিসাবে জমাকৃত অর্থ দ্বারা সেবা রপ্তানিকারীকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

১২. ব্যাক টুু ব্যাক এলসির পাশাপাশি রপ্তানি চুক্তির আওতায় ব্যাক টু ব্যাক চুক্তির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল জোগানের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৩. পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে রুপিতে ট্রেড সেটলমেন্ট কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। সার্ক-ফিন্যান্সের আওতায় সোয়াপ বা ক্রেডিট লাইনের মাধ্যমে রুপিতে আমদানি দায় পরিশোধ কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে করা যেতে পারে। ওই দ্বিপক্ষীয় ঋণচুক্তিতে আমদানিসংশ্লিষ্ট ঋণের দায় নতুন করে চালু করে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে সেটলমেন্টের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আমি এখানে কয়েকটি অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্ভাবন ও সংযোজনের কথা বললাম। ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে বসে নিবিড়ভাবে আলাপ করলে নিশ্চয় আরো অনেক নয়া পথের সন্ধান মিলবে। আর এভাবেই সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হবে।

লেখক: ড. আতিউর রহমান – বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।

সূত্র: কালের কন্ঠ


সর্বশেষ - রাজনীতি