1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরছে পরিবেশবান্ধব জোবাইক

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩

করোনা মহামারিতে প্রায় ধসে পড়া জোবাইক আবারও ফিরছে নতুন উদ্যমে। এবার আরো উন্নত ব্যবস্থাপনা ও ভালো পরিষেবা নিয়ে আসছে ভাড়ায় সাইকেল পরিষেবা দেওয়া জোবাইক।

বিনিয়োগ সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে ২০০ বাইসাইকেল আমদানি করে কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩ মাসের মধ্যে দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নামবে জোবাইক।

গন্তব্য হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)- এ তিন ক্যাম্পাসের মধ্যে যেকোন দুটি। ক্যাম্পাসগুলোতে অ্যাম্বাসেডর (প্রতিনিধি) মনোনীত করা হচ্ছে। তাদের মাধ্যমে তথ্য পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে প্রতিষ্ঠানটি।

জোবাইক- এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেদী রেজা বলেন, “দুটি ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করা হবে। বেশি সংখ্যক বাইসাইকেল দেওয়া হবে, যেন শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ হয়।”

“ছোট ছোট বিনিয়োগকারী ও বড় বিনিয়োগকারী; উভয় পক্ষের সঙ্গে কার্যকর আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করছি, এই মাসের মধ্যে (জুলাই) বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে। চীন থেকে বাইসাইকেল আমদানির প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে।”

তিন বছরের বিরতিতে ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হয়েছে

পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপস ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও মেহেদী রেজা।

তিনি বলেন, “প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনার দিকটি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যে সাইকেলগুলো আমদানি করা হবে, সেগুলোর সোলার উন্নত মানের। জিপিএস ট্র্যাকারগুলো শক্তিশালী; আগেরগুলো ছিল সেকেন্ড জেনারেশনের। নতুন জিপিএস ট্র্যাকার হবে ফোর্থ জেনারেশনের।”

মেহেদী রেজা জানান, “আমরা শুরুতে শুধু দুটি ক্যাম্পাসে চালু করতে চাইছি যেন চাহিদা মতো সাইকেল দিতে পারি।”

“সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সেবা প্রদানের চিন্তা রয়েছে। আগে দেখা যেত, অনেক স্থানে ৩-৪ ঘণ্টা সাইকেল অলস পড়ে থাকতো। অন্য স্থানে চাহিদা থাকলেও সাইকেল থাকতো না,”

“তাই প্রতি ঘণ্টায় চাহিদাপূর্ণ স্টেশনগুলোতে সাইকেল পৌঁছে দেওয়া হবে। আমরা নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের ব্যবহারে উৎসাহিত করবো। এজন্য বোনাস মিনিটও ফ্রি দেয়া হবে,” বলেন তিনি।

জোবাইকের উত্থান-পতন

জোবাইকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম প্রথমবারের মতো শুরু হয় ২০১৮ সালের জুনে, কক্সবাজারে। পরের মাসে জাবি ক্যাম্পাসে এ পরিষেবা চালু করা হয়। পায় তুমুল জনপ্রিয়তা। শিক্ষার্থীদের চাহিদার কারণে ২৫টি সাইকেল থেকে ১০০-এ উন্নীত করা হয় জোবাইকের সংখ্যা।

এরপর ওই বছরের ডিসেম্বরে চবি ক্যাম্পাসে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি শাবি ক্যাম্পাসে এবং অক্টোবরে ঢাবি ক্যাম্পাসে চালু হয়েছিল জোবাইক। এর বাইরে মিরপুর ডিওএইচএসে চালু ছিল এই কার্যক্রম। শুরুতে প্রযুক্তিগত ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। মাত্র ৩ টাকায় ৫ মিনিট বাইসাইকেল রাইড দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারতেন শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু এই উদ্যোগ বেশি টিকেনি। স্থানীয় প্রতিকূলতার কারণে জোবাইক বন্ধ রাখে কার্যক্রম। এরপর আসে করোনা। থমকে যায় পুরো উদ্যোগ।

জোবাইক মূলত চীনে তৈরি এক ধরনের সাইকেল। এতে জিপিএস ট্র্যাকারের জন্য সোলার ছিল। এছাড়া ট্র্যাকারের ব্যাটারিও চার্জের ব্যবস্থা ছিল

নিবন্ধিত ব্যবহারকারীরা প্রি-পেইড রিচার্জ করে জোবাইকের অ্যাপস দিয়ে সেবা নিতেন। মুঠোফোনে থাকা অ্যাপস দিয়ে সাইকেলের পেছন অংশের কিউআর কোড স্ক্যান করলে লক খুলে যেত।

কারিগরি ত্রুটির কারণে অনেক সময় লক খুলতো না। অ্যাপস কাজ করতো না।

করোনা মহামারির সময়ে গণপরিবহন বন্ধ থাকার সময় ২০২০ সালে ঢাকার গুলশান ও বনানীতে পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছিল জোবাইক। কিন্তু সাইকেলগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাও বন্ধ করা হয়ে যায়।

এরপর থেকে পুরোপুরি বন্ধ ছিল জোবাইকের কার্যক্রম।

চবিতে জোবাইক পরিচালনার সময় প্রক্টরের দায়িত্বে ছিলেন চবি’র যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী। তিনি বলেন, “উদ্যোগটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়া পেয়েছিল। নারী শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের প্রবণতাও ভালো ছিল।”

“শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা বিনামূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের ব্যবস্থাপনায় সমস্যা ছিল। সময়মতো সাইকেলগুলো বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা হতো না। এজন্য নষ্ট করে ফেলতো অনেকে। তারা ভালো করে পরিচালনা করলে নিসন্দেহে সাড়া পাবে,” বলেন তিনি।

যেভাবে শুরু হয় উদ্যোগ

মেহেদী রেজার সঙ্গে চীনা বহুজাতিক কোম্পানি আলী বাবাতে চাকরি করতেন ব্রাজিলের অধিবাসী পাবলো আগুয়ায়ো ও উইলিয়াম। তিন সহকর্মী চীনে বসেই ২০১৭ সালে জোবাইক অ্যাপসটি বানিয়েছিলেন।

পরে চাকরি ছেড়ে আজহার খান ও হেলালউজ্জামান অয়ন নামে আরো দুই বাংলাদেশিকে সঙ্গে নিয়ে তারা (মোট ৫ জন) ২০১৮ সালে দেশে শুরু করেন জোবাইক।

২০১৫ সাল থেকে গাড়ি ও মোটরবাইকে রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হলেও বাইসাইকেলের ধারণাটি ছিল নতুন। এতে বিনিয়োগ করেন তানভীর আলী, ফাহিম সালেহ ও শামিম আহসান নামের তিন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, মোট ৩৬৫টি বাইসাইকেল চীনে অর্ডার দিয়ে তৈরির পর বাংলাদেশে আনা হয়েছিল জোবাইকের জন্য। সাইকেলগুলোর মেয়াদ থাকে সাধারণত ৩ বছর। বর্তমানে সাইকেলগুলো বিকল।

চালুর পর থেকে প্রায় আড়াই বছরে মোট ১.২ মিলিয়ন রাইড হয়েছে জোবাইকে। নিবন্ধিত গ্রাহক ছিল প্রায় দেড় লাখ। দৈনিক ৩ হাজারেরও বেশি রাইড হতো জোবাইকে।

করোনা মহামারির সময়ে সাইকেলগুলো বিকল হওয়ার পর বিনিয়োগের অভাবে থমকে ছিল প্রকল্পটি।

মেহেদী রেজা বলেন, “আমরা বিনিয়োগকারীদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি, এখানে বিনিয়োগ শুধু মুনাফার জন্য নয়। পরিবেশ রক্ষায়ও সামাজিক অবদান রাখা সম্ভব।”

জোবাইক সার্ভিসের মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ড অক্সিজেন সংরক্ষিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।


সর্বশেষ - রাজনীতি