1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে দরকার সচেতনতা

ডা. মো. আশরাফুল হক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

একটা কথা প্রচলিত রয়েছে, যে দেশে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ হয়, সেই দেশ আর ডেঙ্গুমুক্ত হতে পারে না। হয়তো কথাটি সঠিক নয়, আবার সঠিকও হতে পারে। উন্নত কী অনুন্নত দেশ, ডেঙ্গুর আবির্ভাব হয়েছিল কিন্তু এখন মুক্ত, এমন ঘোষণা এখনো শোনা যায়নি। তাই ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণের দিকেই মনোযোগ দেয় সবাই।

ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন এখনো বের হয়নি। তাই প্রতিরোধব্যবস্থা সম্ভব নয়। তবে যেটি সম্ভব, সেটি হলো ডেঙ্গু হওয়া থেকে নিরাপদ থাকা। সেই নিরাপত্তার অংশই হচ্ছে ঘরে থাকুন বা ঘরের বাইরে থাকুন, যতটুকু সম্ভব শরীর আচ্ছাদিত করে রাখা, যাতে মশা কামড় দেওয়ার সুযোগ কম পায়।

ডেঙ্গু হলে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় তা যে সবার জন্য একই রকম হবে তা নয়। সবারই জ্বর দিয়ে লক্ষণ আসে না। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে পেটের সমস্যা, বিশেষ করে হঠাত্ ব্যথা, পাতলা পায়খানাসহ নানা সমস্যায় অনেকেই ভুগছে। গতানুগতিক পেটের সমস্যার ওষুধ খেয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবারের মতো ভালো হচ্ছে না।

তাদের যখন হাসপাতালে আনা হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুর জটিলতার অংশ হিসেবেই পেটের সমস্যা দেখা গিয়েছে। কারো কারো ক্ষেত্রে হাসপাতালে আসার সময় এত পিছিয়ে যায় যে বাঁচানোর সুযোগটাই পাচ্ছেন না চিকিত্সকরা। এখন আসলে শরীরে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা গেলেই পরীক্ষা করার জন্য চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত বা নিজ থেকেই ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করা উচিত। চিকিত্সা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় না পেলে রোগী বাঁচানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

ডেঙ্গু মৌসুমে আরেকটি যে সমস্যা দেখা যায়, তা হলো রক্তের জন্য হাহাকার।

ডেঙ্গুতে যেহেতু রক্তের একটি উপাদান প্লাটিলেট কমে যায়, যা আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তাই এটি কমে গেলে ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।

কখন প্লাটিলেট দেওয়া উচিত তা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত গাইডলাইন রয়েছে। কিন্তু যখন এর মাত্রা রক্তে কমতে থাকে, তখন ভয় থেকেই অনেক জায়গায় এটি বেশ দ্রুত দেওয়া হয়ে থাকে। আসলে ডেঙ্গুতে রক্তপাত হওয়ার জন্য শুধু কম  মাত্রার প্লাটিলেটই দায়ী নয়, ডেঙ্গুর অ্যান্টিজেন দিয়ে রক্তনালির স্বাভাবিক প্রতিরোধব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়া, বোন ম্যারো থেকে কম মাত্রায় প্লাটিলেট তৈরি হওয়া, যতটুকু প্লাটিলেট তৈরি হচ্ছে তা দ্রুত ভেঙে যাওয়া, রক্তের অন্য উপাদানের অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি কারণে ডেঙ্গু রোগীর রক্তপাত হতে পারে।

বোন ম্যারো থেকে প্লাটিলেট কম তৈরি হওয়ার বিষয়টি আসলে খুবই সাময়িক। কারণ এটি ক্যান্সারের মতো কোনো অবস্থা নয় যে বোন ম্যারো তার স্বাভাবিক উৎপাদনক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আবার বোন ম্যারো থেকে তৈরি হওয়া প্লাটিলেট নানা কারণে ভেঙে যায়। তার মধ্যে রয়েছে অত্যধিক তাপমাত্রা, ইনফেকশনের আধিক্য, নিজেকে নিজে ধ্বংস করার প্রবণতা ইত্যাদি।

প্লাটিলেট কমছে দেখেই আমরা যদি সঙ্গে সঙ্গে এটি দেওয়ার ব্যবস্থা করি, তাহলে যেটি হয় তা হলো বোন ম্যারো নিজ থেকে নতুনভাবে প্লাটিলেটের অভাব পূরণের চেষ্টা করে না। কারণ শরীরের মধ্যে যেহেতু প্লাটিলেট রয়েছে, তাই বোন ম্যারোর কাছে সেটির সিগন্যাল চলে যায়। কিন্তু বাইরে থেকে যে প্লাটিলেট দেওয়া হয়, সেটি তো অনন্তকাল কার্যকর থাকে না। ফলে আবার এটির অভাব দেখা দেয়। অযাচিত রক্ত দেওয়ার ফলে রোগীর সুস্থ হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে।

আবার শরীরের ভেতরে যেসব কারণে প্লাটিলেট ভেঙে যায় সেসব কারণেও কিন্তু বাইরে থেকে প্লাটিলেট দিলে সেটিও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। উল্টো আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হতে পারে, মানে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।

আমরা ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে আরেকটি জিনিস দেখতে পাই। সেটি হলো DIC. অনেক সময় এটি Dengu shock syndrome-এর থাকে, ফলে বুঝতে কষ্ট হয়। এ অবস্থায় প্লাটিলেট খরচ মানে Consumption করে ফেলে। এর ফলে যতই প্লাটিলেট দেওয়া হোক না কেন, সেটি খরচ হয়ে যায়।

ডেঙ্গুতে তাই রক্তের ব্যবহার খুবই পরিমিত। কখন রক্ত দিতে হবে সেই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাই নিরাপদ। রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী রক্তদাতার সন্ধান রাখা যেতে পারে, কিন্তু রক্ত দেওয়ার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পীড়াপীড়ি করা উচিত নয়। রোগের গতি-প্রকৃতি যেহেতু যেকোনো সময়ে যেকোনো কিছু হতে পারে, তাই চিকিত্সককে রক্ত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকলে তিনি হয়তো নিরাপত্তার স্বার্থেই রক্ত দিতে বলবেন, কিন্তু তাতে আপনার রোগীর লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি থাকতে পারে।

এখন যেহেতু ডেঙ্গু এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই, তাই ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সবার ভূমিকা রাখাটাই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। সবাই মিলেই দেশ এবং সবার চেষ্টা থাকলেই এসব মহামারি নিয়ন্ত্রণ খুবই সম্ভব।

লেখক:  সহকারী অধ্যাপক, ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।


সর্বশেষ - রাজনীতি