1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পতিত জমিতে ড্রাগন চাষে সাফল্য, বছরে আয় ২০ লাখ টাকা

গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

উচ্চ শিক্ষা শেষ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে ড্রাগন ফল চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বায়েজিদ বাপ্পি তাজ। প্রযুক্তি সহায়তা ও ইউটিউবের বিভিন্ন সাইটে ড্রাগন ফলের চাষ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে বাবার পতিত জমিতে চাষের প্রস্ততি নেন। ড্রাগন চাষে প্রাথমিক মূলধন ছিল না তাঁর কাছে। পরিবারের কাছে অর্থ সহায়তা চান বাপ্পি। অজানা ফল ড্রাগনে চাষে নিরুৎসাহিত করেন বাবা।

এতে থেমে যায়নি বাপ্পি। তিনি শিক্ষাজীবনে তার নিজের নামে থাকা একটি ব্যাংকের স্থায়ী আমানত ভেঙে দুই লাখ টাকা পান, আর সেই টাকা নিয়ে শুরু করেন তার স্বপ্নের কৃষি খামার। নাম দেন বাবা মমতাজ উদ্দিনের নামে ‘মমতাজ উদ্দিন ড্রাগন ফ্রুটস খামার’। কয়েক বছরের ব্যবধানে তার গড়ে তোলা খামারে এখন বছরে আয় হচ্ছে ১৮/২০ লাখ টাকা। ছেলের এমন সফলতায় এখন বাবাও খুশি।

উপজেলা মাওনা গ্রামের মমতাজ উদ্দিনের ছেলে বাপ্পী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক সম্মান উত্তীর্ণ তিনি। এখন তার দিনের অধিকাংশ সময় তিনি ব্যয় করেন ড্রাগন ফলের বাগানে। চারা তৈরি, এলাকার বেকার যুবকদের উৎসাহিত করা, প্রশিক্ষণ দেয়া, বাগান তৈরিতে সহায়তা করাই যেন বাপ্পির প্রধান কাজ। দীর্ঘ ৬/৭ বছরে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়ে এখন অন্যদেরও তিনি এ ফল চাষে পথ দেখাচ্ছেন।

২০১৬ সালে মাত্র ৮টি ড্রাগনের চারা নিয়ে যে স্বপ্ন শুরু করেছিলেন বাপ্পি, কয়েক বছরের ব্যবধানে তার বাগানে এখন ফলযোগ্য ড্রাগন গাছ রয়েছে ১০ হাজারের উপরে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে তিনি ৮টি জাতের ব্যবহার করলেও আরও বেশ কিছু উন্নত জাতও রয়েছে। প্রতিটি ড্রাগন গাছ শুধু শীতকাল ছাড়া বছরে ৮ মাস একাধারে ফল দেয়। প্রতিটি গাছ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বর্তমান পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ফল বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। তিন বছরে একটি ড্রাগন গাছ পরিপক্কতা অর্জন করে। ১৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে সক্ষম ড্রাগন গাছ।

বাপ্পির বাবা মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘বিদেশি ফল হওয়ায় আমি ছেলেকে প্রথমে নিরুৎসাহিত করি। পরে যখন দেখি তার বাগানে ফুল, ফল এসেছে, এরপর আমারও ভালো লাগা শুরু হয়। প্রথমে সহায়তা না করলেও পরে নিজের আগ্রহ তৈরি হয়। ছেলের সঙ্গে নিজেও কাজ শুরু করি। এখন তো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে, বছরে ড্রাগন চাষ করে ভালো আয় হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ছেলে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ায় যেমন খুশি হয়েছি, এর চেয়ে ভালো লাগে যখন দেখি এলাকার বেকার যুবকদের ড্রাগন চাষে বাপ্পি উৎসাহিত করে, তাদের বাগান তৈরি করে দেয়। আমার ছেলের মতো অনেকের বেকারত্ব ঘোচানোর পথও খুলে গেছে মনে হচ্ছে।’

বায়েজিদ বাপ্পি তাজ জানান, তিনি চেয়েছিলেন একটি বিশেষ কিছু করবেন। সেই বিশেষ কিছুটা হলো ড্রাগন ফলের চাষ সম্প্রসারণ। দেশের আবহাওয়ার উপযোগী এ বিদেশি ফলটি খেতে সুস্বাধু হওয়ায় দেশের মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে এসে বছরে ১৮/২০ লাখ টাকাও আয় করতে পারছেন।

তিনি জানান, এখন তার মূল ভাবনায় ড্রাগন ফলের চাষ সম্প্রসারণে আশপাশের মানুষের প্রশিক্ষিত করে তোলা। চারা তৈরি করে বাগান তৈরিতে সহায়তা করে যাচ্ছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মানুষকে ছোট-বড় বাগান তৈরিতে সহায়তা দিয়েছেন তিনি। তার আশা তার মতো অনেকে নিজেদের সাবলম্বী করতে পারছে ড্রাগন ফলের চাষ করে।

তিনি বলেন, তার বাগানে বর্তমানে ৩২ ধরনের ড্রাগন ফল গাছ ও গাছের চারা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টির উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মার্কেটিং করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চারা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। লাল, গোলাপি, সাদা, বেগুনি, হলুদ, ব্ল্যাকইশ রেডসহ বিভিন্ন জাতের ড্রাগনের চারা রয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, আবহাওয়া উপযোগী থাকায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেকে ড্রাগন চাষ করছে। অনেকেই শখের বসে বাসার ছাদেও চাষ করছে, ফলনও পাচ্ছে। কৃষি উদ্যোক্তা বাপ্পির সফলতা এলাকার অন্য যুবকদের পথ দেখাচ্ছে। কৃষি বিভাগও তাদের সব ধরনের সহায়তা দানে বদ্ধপরিকর।


সর্বশেষ - রাজনীতি