1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০২৩

মন্দা মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক ধস ঠেকানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য অনেক অগ্রসর দেশের চেয়েও ভালো। বিশ্বমন্দার দুঃসময়ে ইউরোপ-আমেরিকায় চাহিদা কমার পরও আগের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে দেশের পণ্য খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে অর্জিত আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি মার্কিন ডলারে। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২০৮ কোটি মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৪৭ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের পণ্য খাতের রপ্তানি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। আগের তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়লেও সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা অর্জন হয়নি। প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য পণ্য খাতে ৫৮ হাজার মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২৪৫ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি কম হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে।

২০২৩ অর্থবছরের জুনের এক মাসে বাংলাদেশ ৫.০৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত অর্থবছরের জুনের ৪.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ২.৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অর্থবছরে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে সর্বোচ্চ ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। আগের অর্থবছরে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ৪২.৬১ মিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শুধু গত জুনে ৫০৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুনের তুলনায় এই রপ্তানি ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদায়ি অর্থবছরে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য ও চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ১২২ কোটি ডলারের। এক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে পৌনে ২ শতাংশ। এছাড়া ফুটওয়্যারে ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ, ম্যান মেইড ফাইবারে ৪২ দশমিক ৯৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে পাটজাত পণ্যে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ, কৃষি পণ্যে ২৭ দশমিক ৪৭ ও হিমায়িত মাছে ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় প্রত্যাশিত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে ভারত, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোয় পণ্য রপ্তানি বেড়েছে, যা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহায়তা করেছে এবং যা একটি ভালো লক্ষণ। বরাবরের মতো সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরেও সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যার পরিমাণ ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে নিট গার্মেন্ট থেকে ২ হাজার ৫৭৩ কোটি মার্কিন ডলার এবং ওভেন গার্মেন্ট থেকে ২ হাজার ১২৫ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে।

রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই এই প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি করে ৪২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে জুলাই-মে সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৩৭ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-মে সময়ে অর্থাৎ বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসেই রপ্তানি আয় গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। প্রবৃদ্ধির এই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে পণ্য রপ্তানি আয়ে রেকর্ড গড়তে চলেছে বাংলাদেশ।

২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রপ্তানি আয় প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩০৪ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু আয় হয় ৫ হাজার ২০৮ বিলিয়ন। সেই রেকর্ডে ভর করে চলতি অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

২০১৯ সালে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় ছিলো ৩৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮ সালে ৩৮ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৭ সালে ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানই সবার উপরে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পোশাক রফতানির শীর্ষে থাকা দুটি দেশের চেয়েই যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের প্রবৃদ্ধি বেশি।

বিদায়ী অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানির প্রায় চার-পঞ্চমাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বিশেষ পণ্যের ওপর দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের নির্ভরতা টেকসই অর্থনীতির স্বার্থেই এড়াতে হবে। নিতে হবে রপ্তানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগ।

লেখক : মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি – পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।


সর্বশেষ - রাজনীতি