1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

‘আর্থিক অপরাধ’ দূরীকরণে বঙ্গবন্ধুর সুশাসন

আবরার মাহমুদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩

প্রযুক্তির উন্নয়নে একুশ শতাব্দীতে মানব জাতি যেমন অনেক উন্নয়ন সাধন করেছে, তেমনি নানা রকম অভিনব অপরাধকর্ম মানব জাতির উন্নয়নকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। বর্তমান পৃথিবীতে সব ধরনের অপরাধের মধ্যে ‘আর্থিক অপরাধ’ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ। এই অপরাধ একটি রাষ্ট্র থেকে শুরু করে একজন মানুষকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। ফলে একুশ শতকে আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে আমরা দেখে থাকি নানা আয়োজন, সম্মেলন ইত্যাদি। অথচ এর আগের শতাব্দীতে, অর্থাত্ বিংশ শতাব্দীতেও আর্থিক খাতে অপরাধ নিয়ে তেমন কোনো গুরুতর কার্যক্রম দেখা যায়নি। অনেক রাষ্ট্র তখন এই অপরাধের সঙ্গে পরিচিতও ছিল না, কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ব্যতিক্রম। চলুন দেখে আসি বাংলাদেশের ইতিহাসে নোট অচল করার একমাত্র ঘটনাটি, যে উদ্যোগের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আর্থিক খাতে নিয়ে এসেছিলেন সুশাসন। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ সরকার মুদ্রার নাম রাখে টাকা এবং একই বছরের ৪ মার্চ ১০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরপরই ১০০ টাকার নোট ব্যাপকভাবে চোরাচালান হওয়া শুরু করে এবং অসাধু মানুষ ট্যাক্স ফাঁকি দিতে থাকে। বিশেষ করে তৎকালীন সীমান্তে ব্যবসায়ীরা ১০০ টাকার নোট জমা করে দেশের ফসল পাচার করে আসছিল এবং অর্থনীতিতে কালো টাকার চাপ বেড়ে যাচ্ছিল ক্রমশই। ফলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এমন অর্থনৈতিক অপরাধ ছিল ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো।

সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অর্থনীতিই যে মূল চালিকাশক্তি, বঙ্গবন্ধু তা জানতেন। তাই বঙ্গবন্ধু তৎকালীন অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে নিয়ে দফায় দাফায় মিটিং করেন। এই মিটিং থেকেই প্রস্তাবনা আসে ১০০ টাকা অচল করে দেওয়ার। সব ঠিকঠাকের পর হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধুর শ্রদ্ধেয় পিতা ইন্তেকাল করেন। তখন বঙ্গবন্ধু দেশের বাড়ির দিকে রওনা হন এবং নির্দেশ দিয়ে যান যে তাঁর অনুপস্থিতিতেও যেন ১০০ টাকার নোট অচল ঘোষণা এবং যাবতীয় কাজ থেমে না থাকে। এই নির্দেশনা থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু কতটা ব্যগ্র ছিলেন আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতের জন্য। পরে বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে ১০০ টাকার নোট অচল ঘোষণা দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়। কারণ বিষয়টি অনেক কম মানুষই জানতেন। নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের ৬ এপ্রিল রেডিও ও টেলিভিশনযোগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ১০০ টাকার নোট অচল ঘোষণা করেন। পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘একশত টাকার নোট অচল ঘোষণা’। ইত্তেফাকের সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল, ‘উদ্দেশ্য যেন সফল হয়’ এবং ইত্তেফাকে বলা হয়, ‘একশত টাকার নোট বাতিল ঘোষণার ফলে পর্বত সমতটে পরিণত না হোক, কালোটাকার পাহাড় কিছুটা নত হইবেই। আর তা হইবে দেশের অর্থনীতির পক্ষে কল্যাণকর।’

ঘোষণার পরপরই সরকার তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয় ১০০ টাকার নোট জমা দেওয়ার এবং ভারতের সঙ্গে সবসীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়,যাতে অপরাধীরা দেশ ত্যাগ করতে না পারে এবং ঢুকতেও না পারে। বঙ্গবন্ধুর এই উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক খাতে অল্প সময়েই সুশাসন নিয়ে এসেছিল। চোরাকারবারি একদমই শূন্যর কোঠায় চলে আসে এবং মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পেরেছিল তৎকালীন সরকার। বঙ্গবন্ধুর এই কালোটাকাধারীদের বিরুদ্ধে কৌশলগত নীতির উদাহরণ আমরা দেখতে পাই একবিংশ শতাব্দীতে ভারতে। ভারত ২০১৬ সালে কালোটাকার লাগাম টেনে ধরতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট অচল ঘোষণা করেছিল। আবারও ভারত ২০০০ টাকার নোট বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, বঙ্গবন্ধুর নীতি আজকের পৃথিবীর জন্য এখনো কতটা কার্যকর। এজন্যই বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী নেতা। আজকের বাংলাদেশে দুদক, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে আর্থিক অপরাধ দূরীকরণে, কিন্তু তখনকার সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের আর্থিক অপরাধ দূরীকরণে ছিল না কোনো বিশেষায়িত সংস্থা। তাই বলা যায়, আজকের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বীজ রোপণ করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মনে পড়ে যায় বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তি, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে দেশকে গড়া যাবে না। দেশের মধ্যেই পয়সা করতে হবে।’ জাতির জনক বুঝেছিলেন দেশে পয়সা করার এবং দেশের পয়সা দেশেই রাখার গুরুত্ব। বঙ্গবন্ধুর নোট বাতিল করার মতো সাহসী পদক্ষেপের ফলে এ দেশের ষড়যন্ত্রকারীরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল নিঃসন্দেহে। ১০০ টাকার নোট অচল করার কিছুদিন পর ’৭৫-এর মে মাসে টাকার মূল্যমান পুনর্নির্ধারণ তিনি করে দেন। এভাবেই তিনি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ করে দেন। আগস্টে ঘাতকের দল বাঙালি জাতির রূপকারের ওপর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম আঘাত হানলেও আঘাত হানতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ আদর্শের ওপর। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে বিশৃঙ্খলা, তা রোধ করতে হবে। স্পিরিটটা গ্রহণ করতে হবে বঙ্গবন্ধুর নীতি থেকেই। তাহলেই আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে এখন দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিস্মিত হয়েছে দেশের মানুষ, এমনকি বিদেশিরাও। সামনের দিনগুলো হোক সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিন। তাহলেই আমূল বদলে যাবে দেশ।

লেখক: আবরার মাহমুদ – শিক্ষার্থী, আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সাভার), বিইউপি।


সর্বশেষ - রাজনীতি