একাত্তরে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড ২০০০ সালে স্বীকার করেন যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পূর্ববঙ্গের আন্দোলন প্রশ্নে একাত্তরে তিনি সঠিক ধারণা করতে ব্যর্থ ছিলেন। তিনি সরাসরি বলেছেন, ঢাকায় বসে আর্চার ব্লাড যা ভাবতে পেরেছিলেন, তিনি তা এক হাজার মাইল দূরে বসে বুঝতে পারেননি। যদিও ফারল্যান্ড একাত্তরে নিক্সন-কিসিঞ্জারের পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়ার নীতির অন্যতম মুখ্য বাস্তবায়নকারী ছিলেন।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ কী মার্চ মাসের গোড়ার দিকে পাকিস্তানে আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড (এর আগে ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্ট বিরোধী অভিযানকালে যিনি সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন) ইসলামাবাদ থেকে উড়ে এসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ গোপন বৈঠক করেছিলেন। তাতে আমেরিকার তৎকালীন এই রাষ্টদূত জোসেফ ফারল্যান্ড হাতিয়া বা সেন্টমার্টিন দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে দেওয়ার শর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বিনা রক্তপাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে পাকিস্তানি সামরিক জান্তাকে রাজি করাবার প্রস্তাব দিয়েছেন। সে সময় বামপন্থী মহলে (চীনপন্থী ও রুশপন্থী উভয় ঘরানাতেই কমবেশি) একটা ধারণা ভেবেনিয়ে ছিলো যে , “বঙ্গবন্ধু হয়তো ফারল্যান্ডের
শর্তে রাজি হবেন, আর ক্ষমতা হস্তান্তর এরপর সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
কিন্তু বাঙালির জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই দিনের সেই বৈঠকে ফারল্যান্ডকে বলেছিলেন, “মিস্টার ফারল্যান্ড আমি আপনাকে চিনি, আপনি ইন্দোনেশিয়া এবং আর্জেন্টিনায় সাময়িক অভ্যুত্থানের হোতা। আমি শিয়ালের কাছ থেকে দেশ বাঘের হাতে তুলে দিতে পারবো না৷ ” ইন্দোনেশীয় ব্যর্থ এক অভ্যুত্থান চেষ্টাকে কারণ দেখিয়ে বামপন্থি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর চালানো ওই ‘রাজনৈতিক শুদ্ধি’ অভিযানে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারালেও কোনো উচ্চবাচ্য করেনি ওয়াশিংটন।
বিবিসি বলছে, ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মুসলিম বেসামরিক বাহিনীগুলো যে সেসময় যে লাখ লাখ মানুষকে ‘জবাইয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল’ তা জানতে পেরেও নিশ্চুপ ছিল তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে আমেরিকা বাংলাদেশের কাছে ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়’ এবং সেজন্যই তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের উপর নানাভাবে চাপ তৈরি করছে।
সম্প্রতি সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন, “এখনো যদি বলি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেবো, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোন অসুবিধা নেই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না। ” এই হলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দেশের সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে শেখ হাসিনা অকুতোভয়া তা আবারো প্রমাণ করলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আবারো মনে করিয়ে দিলেন ১৯৭১ সালের তৎকালীন পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডের সেন্টমার্টিন দ্বীপ চাওয়ার কথা । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বলেছিলেন,” মিস্টার ফারল্যান্ড আমি শিয়ালের কাছ থেকে দেশ বাঘের হাতে তুলে দিতে পারবো না “।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কন্ঠে পিতার সেই সাহসীকতায় উচ্চরিত হয়েছে, প্রতিধ্বনিতে হয়েছে। স্বদেশকে সন্তানের মতোই ভালবাসেন জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অটল অবিচল। রবীন্দ্রনাথের সুরে,
“তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী”
লেখক : পল্লব রানা পারভেজ – কর্মসংস্থান সম্পাদক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ, ঢাবি।