1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের সফল বাস্তবায়ন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’

ইস্কান্দার মির্জা শামীম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২

দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভালোবাসা, তা অনন্য। চার দশক আগে যদি তিনি আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তাহলে আজ এ উন্নতি, এ অগ্রগতি হতো সুদূরপরাহত।

দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হতো না। গণতন্ত্র থাকতো না। বিচার হতো না বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের। যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচারও দেখতো না বাংলার মানুষ। বঙ্গবন্ধুকন্যা রাজনীতিতে না এলে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে পারতো না। দেড় লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পেতো না মাথা গুঁজার ঠাঁই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে সেই কলঙ্কমুক্ত করেছেন। দেশকে বিশ্বের বুকে করেছেন মর্যাদাবান। দেশের এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি উন্নয়ন করেননি। মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগসহ সবক্ষেত্রে হয়েছে আশাতীত উন্নয়ন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

আমাদের সৌভাগ্য, শেখ হাসিনার মতো একজন যোগ্য নেত্রী পেয়েছি, নেতৃত্ব পেয়েছি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জনগণকে দেওয়া নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ৪১ বছর ধরে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এই দীর্ঘ পথচলায় পদে পদে বিপদ এবং মৃত্যুঝুঁকি তাড়া করেছে। ২১ বার তাঁকে হত্যাচেষ্টা হয়েছে। তিনি শুধু আওয়ামী লীগেরই সভানেত্রী নন, সরকার প্রধান হিসেবেও রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এই মেয়াদ শেষ হলে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের ২০ বছর পূর্ণ হবে।

উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন। তাঁর হাত ধরে পাহাড়ে শান্তিচুক্তি, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিচুক্তি, সিটমহল সমাধান হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ সাড়ে ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশকে দিয়ে ভারতের সঙ্গে নতুন সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত। জাতির পিতার কন্যার হাত ধরে ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিতে এসেছে গুণগত পরিবর্তন।

তাঁর উদ্যোগে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ বিগত তিন বছরে মোট আয় ৩০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। বর্তমানে কোম্পানির মাসিক আয় প্রায় ১০ কোটি টাকা, যার প্রায় পুরোটাই দেশিয় বাজার থেকে অর্জিত হচ্ছে। সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত হতদরিদ্র, অসহায়, বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধীরা মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রভৃতি বড় প্রকল্পের বাস্তবায়নই বলে দিচ্ছে-শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে চলেছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি বেশকিছু মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ‘পদ্মাসেতু নির্মাণ’ প্রকল্প। এটি বাংলাদেশিদের জন্য একটি স্বপ্ন হিসেবে চিত্রিত বা রূপায়িত হয়েছিল। আর এই স্বপ্নের রূপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলে এবং তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক যখন ২৯ জুন ২০১২ সালে পদ্মাসেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল করে এবং অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীও সরে দাঁড়ায় তখন ওই বছরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নিমার্ণের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। এ কথা অনস্বীকার্য যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় মনোভাবের বাস্তব রূপায়নই আজকের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। আমদের মত আমজনতার এটা জানা নেই যে, তিনি কিসের ভিত্তিতে, কোন ভরসায় এরকম একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন।

পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। সব বাধা-বিপত্তি, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে গত ২৫ জুন ২০২২ উদ্বোধন করা হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আগামী জুন ২০২৩ থেকে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর ফলে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত হলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা। বর্তমানে পদ্মা সেতু এসব জেলায় সহজেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো এখনো শিল্পের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে, এলাকার বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। পদ্মা সেতুর ফলে এসব পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো উপকৃত হবে। সেতুর কল্যাণে সেখানে এখন ব্যাপক আকারে শিল্পায়ন হবে, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মানুষের আয় বাড়বে এবং জীবন-জীবিকায় পরিবর্তন আসবে।

আজ পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছে, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসের সাক্ষী হয়ে বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্মা সেতু আমাদের প্রবল আত্মবিশ্বাসের জবাব। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক। পদ্মা সেতু শুধু একটা সেতু নয় এটা বাংলাদেশের অহংকারের নিদর্শন। নতুন বাংলাদেশের একটা শক্তি। আন্তর্জাতিকভাবে এ সেতু আজ বাংলাদেশকে উচ্চ মর্যাদায় স্থান করে দিয়েছে। অনেক প্রতিকূলতা ও বাধা ডিঙিয়ে, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক ও দুঃসাহসিক সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে বড় অবকাঠামো নির্মাণে দেশের সক্ষমতার উজ্জ্বল প্রতীক। ভয়ঙ্কর পদ্মার বুকে কারিগরি নানা জটিলতা কাটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ সেতু।

বাংলার মানুষকে শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এবার দিতে যাচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। কর্ণফুলী টানেল আওয়ামী লীগ সরকারের একটি মেগা প্রকল্প। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এবার সবার চোখ কর্ণফুলী টানেলের দিকে।

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী এবং দেশের প্রধানতম বাণিজ্যিক রাজধানী। ৫৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষের শহর চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনৈতিক বড় কর্মস্থল। কর্ণফুলী চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘতম নদী। কর্ণফুলী নদী ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। মূলত কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে।

কর্ণফুলীর পূর্বপাশের শিল্পাঞ্চল এবং পশ্চিম পাশে সমুদ্র বন্দর, বিমানবন্দর ও মূল নগরীর সাথে সংযোগ স্থাপনকারী উপযুক্ত হিপ্টারল্যান্ড এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনা, যানজট কমানো এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড কোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হতে প্রয়োজনে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আঞ্চলিক যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এই টানেলের নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল।’ চট্টগ্রাম বিসিআইএস (বাংলাদেশ-চীন-ইন্ডিয়া মিয়ানমার) করিডোরের তৃতীয় নম্বর স্থানে অবস্থিত। চীনের কুনসিং থেকে শুরু করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ হয়ে ভারতের কলকাতায় গিয়ে শেষ হবে এ করিডোর।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্থলপথে টানেল রয়েছে, তবে সমুদ্র বা নদী তলদেশে টানেল নির্মাণ উপমহাদেশের অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।

টানেলের বহুমুখী সুবিধা নেওয়ার অপেক্ষায় এখন সবাই। আর টানেলকে ঘিরে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে। টানেলের যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িগুলোকে আর নগরে ঢুকতে হবে না। চট্টগ্রামের সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সকল উন্নয়ন সম্ভব তার প্রমাণ পদ্মাসেতুর মাধ্যমেই যিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, শেখ হাসিনা শুধু কথায় নয় কাজে প্রমান করেন। তিনি জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন, সংকট উত্তরণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তাই তিনি হয়ে উঠেছেন বিশ্বনেতা, শান্তির অগ্রদূত। তাঁর নেতৃত্বে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ লাভ করেছে মর্যাদার আসন।

লেখক : ইস্কান্দার মির্জা শামীম – সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ কমিটি


সর্বশেষ - রাজনীতি

নির্বাচিত