বাণী ইয়াসমিন হাসি: জাদিদরা ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা তুলে নিলে কোন পাপ হয় না! অটোমোবাইল কোম্পানি, অথচ দায়িত্ব পেয়েছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহের। সেই কোম্পানির ঠিকানায় অবশ্য কোনো কার্যালয়ের অস্তিত্ব নেই। চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল পিপিই-মাস্ক-গ্লাভস। ৮৪ দিন পর্যন্ত একটি পণ্যও সরবরাহ করেনি জাদিদ অটোমোবাইলস নামে সেই কোম্পানি। অথচ ঠিকই ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিটি। এসব বিষয়ে জাদিদের মালিক যেমন কোন সদুত্তর দিতে পারেননি, তেমনি প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাছেও মেলেনি এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর।
শারমিন জাহানকে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয় ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী হওয়ার কারণে। মিথ্যা মামলা ও কী তড়িঘড়ি করে গ্রেফতার দেখিয়ে গডফাদাররা মিডিয়া ট্রায়াল করে। আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন এর বিরুদ্ধে মামলা হতেও সময় লেগেছিলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তবে তারা দুজনেই কোন বিল না তুলেও সমাজের চোখে বিশাল অপরাধী! জাদিদ কোম্পানির মত আরো শত ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া প্রশাসনের কিছু মুখোশধারী, যারা লুটেরাদের প্রধান সাহায্যকারী।
১২ জুলাই ৩য় লট এবং ১৩ জুলাই ৪র্থ লট বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝে নেওয়ার পর ১৮ তারিখে তারা শোকজ নোটিশ দিলো অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালকে এবং নোটিশে লিখলো, ‘মাস্ক কর্তৃপক্ষের অগোচরে সরবরাহ করেছে।’ অথচ অপরাজিতাকে যে রিসিভ কপি দেওয়া হয়েছে সেখানে কর্তৃপক্ষের সিল এবং সাইন আছে।
আমার প্রশ্ন হলো, আপনি ১২ তারিখ পণ্য বুঝে নিয়ে যখন দেখলেন সেটা নিম্নমানের তারপরও কেন ১৩ তারিখ আরেকটা লট নিলেন? আর ৬ দিন পর কেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেন?
স্বাস্থ্যখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেলো, এখনো হচ্ছে কিন্তু কারো নামে মামলা হলো না। এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিনের নামে মামলা হয়েছে মাত্র ১৯ লাখ ৩০ হাজার টাকার মাস্ক সরবরাহের অপরাধে। উনি কিন্তু এক টাকাও বিল তোলেননি। শারমিন জাহান ১৯ লাখ টাকার মাস্ক সরবরাহ করেছিলেন, উনিও কোন বিল উঠাননি। উনার নামে বিকেলে মামলা হলো এবং পরদিন রাতে উনি নিজে ডিবি ডিসি আজিম সাহেবকে ফোন করে ডিবি অফিসে গেলেন। বিশ্বাস না হলে ডিবি ডিসি জনাব আজিম সাহেব এবং শারমিন জাহানের শুক্রবারের রাত ৯:৫০ টা থেকে ১০:০৫ এর কল লিস্ট বা রেকর্ড চেক করতে পারেন।
রাজপথের পরীক্ষিত শাহজাহান শিশিরকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমি খুব সামান্য মানুষ। আমার কথা বা লেখায় কিছুই যাবে আসবে না। কিন্তু দয়া করে বিষয়গুলো নিয়ে একটু ভাবেন। আমিন শারমিন শিশিরদেরকে বলি দিয়ে কাদের অপকর্মকে জাস্টিফাই করা হচ্ছে?
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের বাজেট নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা কোন কৃপণতা করেন না। যতদূর জানি ভাইস চ্যান্সেলর যখন যা চান তাই পেয়ে যান। এখন প্রশ্ন হলো শত শত কোটি টাকার বাজেট। ক্রয়, নির্মাণ এগুলোর সুষ্ঠ তদারকি হয় তো? অপরাজিতা মাত্র ১৯ লাখ টাকার মাস্ক সরবরাহ করেছে। কোভিড- ১৯ তো সেই মার্চ থেকে শুরু। এতদিন যারা মাস্ক সরবরাহ করলো তাদের কি অবস্থা? আরেকটা প্রশ্ন টেন্ডার এবং অন্যান্য নিয়ম কানুন মানা হয়েছিলো তো? বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কোটি কোটি টাকার সাপ্লাইয়ের কাজ কে বা কারা করে? কাজগুলো বন্টনই বা হয় কীভাবে? এই প্রশ্নগুলো করার সময় এসেছে বোধহয়।
গত কয়েকদিনে অনেক আইনজীবী বন্ধু এবং সিনিয়রদের সাথে কথা বলেছি। প্রত্যেকের একই বক্তব্য; এই ইস্যুতে কোনভাবেই মামলা হয় না। তারপরও মামলা হলো এবং রাতারাতি গ্রেফতারও হলো। এরমধ্যে মিডিয়া ট্রায়ালও হয়ে গেলো। প্রতিটা পেপারস খুঁটিয়ে পড়েছি। আমি আইনের ছাত্র নই, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র। কিন্তু কাগজগুলো এতই স্পষ্টই যে এগুলো দেখে খুব সহজেই বুঝে নিয়েছি বড় বড় চোরদের রক্ষা করতে আর নিজেদের পিঠ বাঁচাতে শারমিন জাহানকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে। আচ্ছা যেদিন শারমিন জাহান নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে বের হয়ে আসবেন সেদিন কি আপনাদের একটুও লজ্জা করবে না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, কেউ কেউ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক, বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালক (মালিক)। অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারীই নামে বেনামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। বাকুশাহ মার্কেট, গাউসুল আযম মার্কেট, কাটাবনের বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটের অধিকাংশ দোকান মালিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। ‘৭৩ এর অধ্যাদেশ এখানে কর্মরতদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বৈকি। তবে আইন সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে স্ত্রী কর্তৃক শিক্ষকের মাথা ফাটানোর ঘটনা এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটেছে। খুব জানতে ইচ্ছে করে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কোথায় ছিল?
মিঠুদের কিছুই হয় না, হবেও না এদেশে। অথচ আমিন,শিশির, শারমিনরা বলি হয়ে যায়। তাদেরকে বলি দেওয়া হয়। হাজার হাজার কোটি টাকার চুরিকে জায়েজ করতে এইসব পরীক্ষিতদেরকেই কোরবানি দেওয়া হচ্ছে। সব জায়গায় মাফিয়া আর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। এদের এতটাই প্রভাব যা নাটক সিনেমা বা কল্পকাহিনীকেও হার মানাবে। একটা রাষ্ট্র এভাবে মাফিয়াদের হাতে জিম্মি হতে পারে না। শুধু তিন বেলা খাবার বা লাক্সারিতে মন ভরে না। মানুষ একটু সম্মান চায়, দিনশেষে স্বস্তিতে ঘুমাতে চায়। বেছে বেছে ত্যাগী আর পরীক্ষিতদের ভিক্টিম করা হচ্ছে। এটা নতুন কোন ষড়যন্ত্র নয়তো ?