আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল: রানা প্লাজা ধ্বসের পর উদ্ধার কাজ পরিচালনা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও যাবতীয় পাওনা পরিশোধের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরম আস্থার সঙ্গে লেঃ জেঃ (অবঃ) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। আনসার ও ভিডিপির, ডিফেন্স কলেজ ও এসএসএফের প্রধান নির্বাহী সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর তিনি সেনাপ্রধান হতে চেয়েছিলেন। তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকেও হয়তো ভেবেছিলেন কেন তাকে সেনাপ্রধান করা হলো না! এ প্রশ্নের জবাব আমরা পেয়ে গেছি। পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে যাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছিল, সংবাদ প্রকাশের হুমকি দিয়ে মাদক ও নারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মোটা অংকের টাকা নেয়া সহ অগণিত অভিযোগ ছিল যার বিরুদ্ধে সেই পলাতক কনক সারওয়ারের সঙ্গে হাসান সারওয়ার্দী সাক্ষাতকারের নামে যে মিথ্যাচার করেছেন, তা থেকেই আমরা সেই প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছি। আমরা জেনে গেছি কত বড় দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে সেনাবাহিনী, দেশ ও জাতি।
হাসান সারওয়ার্দীর কর্মরত থাকাকালীন সময়ের সক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন নেই। তবে একই সঙ্গে থেমে থাকে নি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও। অধীনস্থদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার কারণে নারী সদস্যরা তার সঙ্গে এক লিফটে ওঠতেও বিব্রত বোধ করতেন। আনসার ভিডিপির কোটি টাকার রেশন দুর্নীতি, এসএসএফের প্রধান থাকাকালে ক্রয় সংশ্লিষ্ট ১৬০ কোটি টাকার দুর্নীতি এবং রানা প্লাজা ও তাজরিন গার্মেন্টস এর শত কোটি টাকার দুর্নীতি এবং সব ছাপিয়ে হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে নারীঘটিত অভিযোগ উঠতে থাকে যা তার পরিবারও ভেঙ্গে দেয়।
হাসান সারওয়ার্দীর নারী কেলেঙ্কারি প্রকাশ্য হয়ে পড়ে ২০১৫ সালে। হাওয়া ভবন তথা তারেক রহমান ও গিয়াস আল মামুনের আস্থাভাজন ও বিতর্কিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফারজানা ব্রাউনিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে সেনাবাহিনী ও মিডিয়া পাড়ায় নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এখন এটি পরিষ্কার যে লন্ডন থেকে আসা নির্দেশের ফলেই ফারজানা ব্রাউনিয়ার হাসান সারওয়ার্দী মিশন শুরু হয়। এ সম্পর্ক নিয়ে স্ত্রী ফারজানা নিগারের সঙ্গে দুটি অনুষ্ঠানেও প্রকাশ্যে ঝগড়া হয় সারওয়ার্দীর। সকল মহলে বিস্ময় সৃষ্টি হয় যখন ব্রাউনিয়াকে নিয়ে হাসান সারওয়ার্দী ভারত ও থাইল্যান্ড সফরে যায়। একটি সূত্রে জানা যায় এ সফরে তারেক রাহমানের সঙ্গে হাসানের একাধিক স্কাই-পে বৈঠক হয়। হাসান-ব্রাউনিয়ার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের এক পর্যায়ে স্ত্রী ফারজানা নিগার ও দুই সন্তান, হাসানকে ঘৃণাভরে ত্যাগ করে। লোকলজ্জার ভয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয় তারা। অবৈধ সম্পর্কের তিন বছরের মাথায় অবসর গ্রহণের পর হাসান-ব্রাউনিয়ার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বুড়ো বয়সে জাকজমকপূর্ণভাবে বিয়ে করার সময় সবাই বিস্মিত হয়েছিল নিয়ম ভঙ্গ করে তার সেনাবাহিনীর পোশাক পরা দেখে।
হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ উঠেছিল যার সত্যতা পাওয়া যায়। অবসর গ্রহণের পরও তার ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে। ফলে নানা বিতর্ক ও অপকর্মের কারণে তাকে সকল সেনানিবাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। যার প্রতিটি বক্তব্যে অতিভক্তি প্রকাশ করতে জাতির পিতা ও তাঁর আদর্শের কথা উল্লেখ থাকতো, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অতি-আনুগত্যের বার্তা থাকতো, সেই তিনি এখন ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছেন যা তার প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করেছে।
শেখ হাসিনা হাসান সারওয়ার্দীকে বিশ্বাস করেছিলেন। স্নেহের প্রতিদান স্বরূপ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাপ্রধান হিসেবে তাকে নির্বাচনের ভুল তিনি করেন নি। হাসান সারওয়ার্দীকে সেনাপ্রধান করা হলে অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা গ্রহণের অপচেষ্টা চালাতেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও সংশ্লিষ্টদের সচেতনতার কারণে দেশ এক মহা দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে।
সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী একজন হাসান সারওয়ার্দী। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে। হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও সরকার নিয়ে চক্রান্তের যেসব আভাস পাওয়া যেত তা সত্যি মনে হচ্ছে। প্রমাণ হয়েছে, তিনি স্বার্থ ও অর্থের জন্য যেকোনো কিছু করতে পারেন। সরকার ও সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিক্রির সঙ্গে তার যোগসাজশ রয়েছে।
হাসান সারওয়ার্দী প্রকৃত চেহারায় উদ্ভাসিত হয়ে নিজের অনৈতিকতা ও লোভের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি হয়তো ভাবছেন একটি পক্ষ তাকে নিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করবে এবং তিনি রাজনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবেন। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিশ্বাসঘাতকদের স্থান কখনোই কোথাও হয় না। সাময়িক সুবিধা ভোগ করতে হয়তো টয়লেট পেপারের মতো ব্যবহৃত হয় কিন্তু পরিশেষে নিক্ষিপ্ত হয় আস্তাকুঁড়ে। তার বক্তব্যে সেনাবাহিনী ও সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কটাক্ষ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি ঘৃণা প্রকাশ হয়েছে যা দেশদ্রোহিতার শামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।