1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কোভিড-১৯ পরবর্তী অদম্য বাংলাদেশের রূপকল্প এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

eb-editor : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০

ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন
ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চলাচলে লকডাউনের কারণে সৃষ্ট বাধায় বিশ্ব অর্থনীতি এখন হুমকির সম্মুখীন। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে অনেকেই ইতোমধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পোশাক শিল্প, ব্যাংক, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, কৃষি ছাড়াও প্রায় সব ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক মন্দার আভাস যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনোবল হারালে চলবে না। যেখানে সমস্যা আছে, সেখানে সম্ভাবনাও রয়েছে। Winston Churchill যথার্থই বলেছেন—‘The pessimist sees difficulty in every opportunity. The optimist sees the opportunity in every difficulty.’ আমরাও
আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে বিশ্বাস করি ‘মেঘ কেটে যাবে’ শিগগিরই। করোনা পরবর্তী সময়ে দেশকে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা কাটিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করতে আধুনিক প্রযুক্তি, ইন্টারনেট অব থিংস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। করোনার প্রাদুর্ভাবকালীন সময়ে যে দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি আমাদের ভাবিয়েছে তা হলো খাদ্য ও চিকিৎসা। এখানে উল্লেখ্য, প্রায় সব ক্ষেত্রেই মানুষ মন্দার সম্মুখীন, তাই প্রধানত কৃষি, চিকিৎসা এবং আধুনিক যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষেত্রগুলো উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে কীভাবে করোনা পরবর্তী মন্দাবস্থা মোকাবিলা করা যেতে পারে, সে ব্যাপারেই নজর দেওয়া জরুরি।বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশের মোট আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই আসে এই কৃষি থেকে, যা জিডিপিতে ১৪.১০ শতাংশ অবদান রাখছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার একর। দেশের প্রায় আশি ভাগ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আর তাই কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত করলে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে অভূতপূর্ব সাফল্য আনা যেতে পারে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ চীন, জাপান, আমেরিকাসহ নানা উন্নত দেশ। এদের কৃষি ব্যবস্থার চিত্র দেখলে বুঝা যায়, এরা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তুলনামূলক স্বল্প ব্যয়ে কৃষির উৎপাদনক্ষমতা কতটা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমেই উন্নত দেশগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে রোবট এবং বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করে কৃষি কাজকে তারা কীভাবে সহজ ও অধিক উৎপাদনশীল করতে সক্ষম হয়েছে, তা জানা যাক। চীন বর্তমানে ড্রোন ব্যবহার করে ফসলি জমিতে কীটনাশক ছিটাতে সক্ষম হচ্ছে। এই ড্রোনটি একটি গ্যালনে কীটনাশক নিয়ে ফসলি জমিতে উপর থেকে কীটনাশক ছেটানোর কাজ করে থাকে। ড্রোনটি একটি রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা চালিত এবং একজন কৃষকই এই ড্রোনটি চালনা করতে পারে। এতে

এই বিশেষ ক্ষমতাবলে এই ড্রোনগুলো সুপরিকল্পিতভাবে আক্রান্ত ফসলেই কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকে। যার ফলে কীটনাশক প্রয়োগ হয় পরিমাণমতো এবং এটি সাশ্রয়ী। শুধু কীটনাশকই নয়, উন্নত বিশ্বে যন্ত্র ব্যবহার করে মাটি খনন, বীজ রোপণ এবং উৎপাদিত ফসল কাটার কাজও যন্ত্র দ্বারা করা হয়ে থাকে। যন্ত্র হিসেবে থাকে একেক ধরনের ট্রাক্টর ও গাড়ি, যেগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে। কয়েক টন ফসল একেবারে কেটে গাছ থেকে আলাদা করে বিশেষ মোড়কে মুড়িয়েও রাখা সম্ভব হচ্ছে। অথচ সনাতন পদ্ধতিতে ফসল ফলালে এই ফসল কেটে একত্র করে গুদামজাত করে তারপর শস্য গাছ থেকে আলাদা করতেই লেগে যায় অনেকটা সময়। শ্রমবলের প্রয়োজন হয় তুলনামূলক বেশি। কিন্তু এই যন্ত্রাদির মাধ্যমে ফসল ফলাতে খুবই কম জনবলের দরকার পড়ে। দেখা যায় একেকটা ট্রাক্টর একজন চালক দ্বারাই চালিত হচ্ছে এবং সেই চালকের পরিচালনাতেই বীজ রোপণ কিংবা ফসল কাটার কাজ হচ্ছে সাবলীলভাবেই। এসব যন্ত্র দ্বারা খুব কম সময়ে কাজ সম্পন্নও করা সম্ভব।
বর্তমানে স্বল্প ব্যয়ে কৃষিজমিতে উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে একটি চালিকাশক্তি হলো ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), যা সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ বদলে দিয়েছে। স্মার্ট ফার্মিং এবং স্মার্ট এগ্রিকালচার হলো জনগণের জন্য পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদনকারী, সময় ও মূলধন সাশ্রয়ী একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হাইটেক সিস্টেম। এই সিস্টেম বলতে কৃষিতে আধুনিক আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) এবং ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তির ব্যবহার বুঝায়। কৃষিতে ইন্টারনেট অব থিংস অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফার্মের যানবাহন ট্র্যাকিং, প্রাণিসম্পদ পর্যবেক্ষণ, গুদাম পর্যবেক্ষণ এবং আরও অনেক কিছু। প্রাণিসম্পদ পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়্যারলেস আইওটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার হচ্ছে অনেক উন্নত দেশেই।এটি অসুস্থ প্রাণী চিহ্নিত করতে সহায়তা করে, যাতে তাদের অন্য পশুর থেকে আলাদা করা যায়। এভাবে রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করা যায়। এটি শ্রমের ব্যয় হ্রাস করে, কারণ পশুপালকেরা তাদের গবাদি পশু কোথায় রয়েছে তা শনাক্ত করতে পারে। এছাড়া, উদ্ভিদ ও মাটির গুণাগুণ নির্ধারণ, পরিমিত পানি সেচ, পরিমিত সার প্রদান, আবহাওয়ার পরিস্থিতি প্রতিবেদন তৈরি করা ইত্যাদি কাজে আইওটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের ফলে কৃষিকাজে বাম্পার ফলনের পাশাপাশি সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হচ্ছে। আইওটিভিত্তিক স্মার্ট ফার্মিংয়ে কৃষকরা যেকোনও জায়গা থেকে জমির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় আইওটিভিত্তিক স্মার্ট ফার্মিং অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং উন্নতমানের।
এবার আসা যাক Vertical Farming-এর বিষয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে Vertical Farming বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। Vertical Farming-এর মাধ্যমে স্বল্প জমিতে, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফসল ফলানো সম্ভব। বাংলাদেশে বর্তমানে আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে কৃষি কাজ করা বেশ সমস্যা সংকুল বলেই মনে হয়। কারণ চারপাশে শুধুই চার দেয়ালের দালান কোঠাই দেখতে পাওয়া যায়। আবাদি জমি পাওয়া তো প্রায় অসম্ভব। এঅবস্থায় এসব চার দেয়ালের ভেতরেও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কৃত্রিম তাপ, পরিমিত কার্বন ডাইঅক্সাইড, পানি এবং নানা উপকরণের উপযুক্ত সংমিশ্রণের মাধ্যমে পুষ্টিকর ফসল ফলানো সম্ভব। চীনে কৃত্রিম রোবট ব্যবহার করে গ্রিনহাউস কিংবা ইনডোর কৃষি খামারগুলোর পরিবেশ চাষের জন্য উপকূল কিনা তাও পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। ওসব পরীক্ষার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এমনকি মাটিবিহীন শুধুমাত্র পুষ্টিকর উপাদানের মিশ্রণে গাছের শেকড়গুলো ডুবিয়ে রেখেও অনেক ভালোমানের ফসল, শাক-সবজি ফলানো সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় চাষাবাদকে Hydroponics বলা হয়। বিশেষ সংবেদনশীল ট্রে-তে বিভিন্ন ফসল ফলানো হয়, যা মাটি থেকে ছাদ পর্যন্ত সারিতে সারিতে বিস্তৃত থাকে। যেকোনও ফসল যেকোনও ঋতুতে এভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ করা সম্ভব, যার ফলে মানুষ পুরো বছর অনেক ফলমূল, শাক-সবজি গ্রহণ করতে পারবে, কোনও নির্দিষ্ট ঋতুর অপেক্ষায় না থেকেই। অনেক খামার আছে বড় বড় বিল্ডিংয়ের আকারে গোড়ে তোলা। এমনকি পুরনো বিল্ডিংগুলোকেও খামারে পরিণত করা হয়ে থাকে। এভাবে চাষাবাদ করলে কৃষি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। উৎপাদনের মাত্রা বাড়বে বহু গুণ এবং দরিদ্র মানুষেরা স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর খাদ্যও গ্রহণ করতে পারবে।
অতিরিক্ত কৃষি পণ্য দেশের বাইরেও রফতানি করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, অনেক মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা সম্ভব, যা অর্থনীতির চাকাকে ঊর্ধ্বগতিতে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
এবারে দৃষ্টিপাত করা যাক প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ওপর। আমাদের দেশে অনেক সময় অনেক খাদ্যের মাত্রাতিরিক্ত ফলন হয়। যেমন আলুর মৌসুমে আলু পচে যায়, আবার মৌসুম শেষে চড়া দামে কিনতে হয়। অনেক সময় তা রফতানি করাও যায় না। আর তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে
বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রের দ্বারা বিশেষ প্রক্রিয়ায় গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফলমূল এবং শাক-সবজির তৈরি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে তা দেশীয় জনসাধারণের চাহিদা মেটানো ছাড়াও বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। এতে সব ধরনের ফল ও শাক-শবজি সারা বছর গ্রহণ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানসম্পন্ন টমেটো সস,বিভিন্ন ফলের জুস, আচার ইত্যাদি তৈরি এবং রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বিশ্বের অনেক দেশেই ক্যান্ড (canned) ফুড উৎপাদন করা হয়। মাছ, মাংস প্রক্রিয়াজাত করে ক্যানে করে ভোক্তাদের সরবরাহ করা হয়। এসব ক্যান্ড ফুড অনেক দিন মজুত করে রাখা যায়। এসব খাবার বিশেষ করে প্রয়োজন হয় দুর্যোগকবলিত এলাকায়, যেখানে শুকনো খাদ্যের বেশ প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পান এর উদাহরণ। এ কারণেই এ ধরনের পুষ্টিকর ক্যান্ড ফুড তৈরি ও বাজারজাত করা হলে দেশীয় চাহিদা যেমন মিটবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব।
করোনাকালীন সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের কী কী উন্নতি সাধন করা প্রয়োজন, তা আমরা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে ছিল চিকিৎসকদের PersonalProtective Equipment, বা সুরক্ষা পোশাকের অভাব, যার ফলে চিকিৎসকরা অনেকটা দিন রোগীদের চিকিৎসাই দিতে পারেননি। ছিল টেস্ট কিটের অভাব, যার ফলে করোনা টেস্ট করতে পারা রোগীর সংখ্যাও ছিল নগণ্য। এর ফলে করোনা রোগী শনাক্তকরণই ছিল দুরূহ আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা তো অসম্ভব ছিল। পরবর্তীতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল কর্তৃক টেস্ট কিটের আবিষ্কার করা হয়, যদিও টেস্ট কিট তৈরি করতে সময় লেগেছে কিছুটা। এরপর এলো দ্রুত ভ্যাক্সিন আবিষ্কার না করতে পারার অপারগতা। শুধু আমাদের দেশই নয়, গোটা বিশ্বই একইভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে করোনার ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের, কিন্তু এখনও কোনও ভ্যাক্সিন সেভাবে মানুষের নাগালে আসেনি। আইসিইউ-এর অপ্রতুলতায় মানুষ মরছে। এসব কিছুর সমাধান আধুনিক প্রযুক্তিতেই বিদ্যমান কৃত্রিম বুদ্ধির মাধ্যমে যুগোপযোগী চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞানের আমূল পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। দেশের নতুন প্রজন্মকে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিলে দেশেই অত্যাধুনিক যন্ত্রাবলি তৈরি করা সম্ভব হবে, যা চিকিৎসা ক্ষেত্রের উন্নতিতে ভূমিকা পালন করবে। এসব যন্ত্র আমদানি করতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লেগে যায়। অথচ দেশের মেধা ব্যবহার করে তুলনামূলক স্বল্প খরচে এসব অত্যাধুনিক মেশিন তৈরি করা সম্ভব। এর সঙ্গে বিভিন্ন রোগের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক তৈরি এবং তা রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। দেশের চিকিৎসা খাতের উন্নতি দেশের সমৃদ্ধির জন্য যে কতটা প্রয়োজন তা করোনার এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ই প্রমাণ করে দেয়।
লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর হচ্ছে আরও একটি অন্যতম সেক্টর, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কৃষির পরে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অপর একটি সম্ভাবনাময় খাত। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও অটোমোবাইলের মতো লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য’ ২০২০ বলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ঘোষণা করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই খাত অল্পদিনের মধ্যেই জিডিপিতে অবদান রেখেছে ২.২ শতাংশ। বাংলাদেশের গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইলে বহুল ব্যবহৃত
পরিবেশবান্ধব জীবাণুবিয়োজ্য (bio-grade) পলিথিন তৈরির মেশিন চীন, তাইওয়ান ও জাপানের মতো দেশ থেকে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা দিয়ে আমদানি করতে হতো। কিন্তু সেই একই মেশিন মাত্র ২২ লাখ টাকায় এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্ট রফতানি করে ৫১০.০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছি। শুধু তাই নয়, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৫০ ভাগ আমদানি খরচ হ্রাস করা সম্ভব শুধুমাত্র শিল্প, কৃষি এবং মেরামত কাজে সহায়ক যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামত করার মাধ্যমে। বর্তমানেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের প্রায় ৪৮ থেকে ৫২ শতাংশ প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করলে আমাদের দেশেই অনেক আধুনিক যন্ত্র তৈরি এবং মেরামতের কাজ করা সম্ভব হবে। যার ফলে বিদেশ থেকে আর এসব যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ আমদানি করার প্রয়োজন পড়বে না। যার ফলে আমদানি খাতে ব্যয় হ্রাস পাবে। এরই সঙ্গে বিভিন্ন যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ তৈরি করে তা রফতানির মাধ্যমে আরও অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। এ ধরনের মেশিন আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেমন ভারত, নেপাল, ভুটানের মতো দেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। কৃষিপ্রধান আমাদের এই দেশে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। কেননা কৃষিতে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে আমরা বেশির ভাগ সময়ে বিদেশি যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশি কৃষিবিজ্ঞানী ও উৎপাদনমুখী এই সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যদি বাংলাদেশের জমিনির্ভর যন্ত্রাংশ আমাদের দেশেই তৈরি করা যায়, তবে যেমন একদিকে দেশের কৃষিকে দ্রুত আধুনিকীকরণ সম্ভব, তেমনি অন্যদিকে স্বল্পমূল্যে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেওয়া যাবে আধুনিক কৃষি যন্ত্রাংশ। তবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মহল এই সেক্টরকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করছে, যাতে করে কৃষিকাজে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির দেশীয় চাহিদা মেটানোর পর তা রফতানিমুখী করা যায়। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৪০ হাজার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং উৎপাদনমুখী উদ্যোক্তা রয়েছেন, যেখানে কর্মরত আছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পেলে দেশের প্রযুক্তি খাতে যেমন প্রসার ঘটবে তেমনি মানুষের কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে মানুষ নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। ফলস্বরূপ মানুষ নতুন নতুন যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ তৈরি করতে সক্ষম হবে, যা বিভিন্ন খাতে উৎকর্ষ অর্জনে ভূমিকা পালন করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence ব্যবহার করে কৃষি, চিকিৎসা ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হলো:
১. দেশে আইটি/আইসিটি শিক্ষার মানোন্নয়ন, আধুনিকায়ন এবং প্রসার করা।
২. শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার্থে দেশের বাইরে লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ। প্রয়োজনে বিদেশি দক্ষ শিক্ষক দিয়ে পাঠ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
৩. কারিগরি শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা।
৪. শিক্ষার্থীদের জন্য ফলপ্রসূ এবং স্থানীয় সমস্যা সমাধান বিষয়ে গবেষণামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য সেন্সর, অ্যাপ্লিকেশনস এবং সফটওয়্যার তৈরি করা।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করা।
৬. চাকরি ক্ষেত্রে কর্মীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য স্থানে পদায়ন করা।
৭. বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্র আবিষ্কার করা এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে যন্ত্রের ডিজাইন পরিবর্তন করা।
৮. লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গবেষণার সুযোগ প্রদান করা।
৯. বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের লক্ষ্যে দেশেই বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার, উদ্ভাবন এবং মেরামতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।
১০. খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য গবেষণার ব্যবস্থা করা এবং জোন/অঞ্চলভিত্তিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিল্প প্রতিষ্ঠানের এবং হাইটেক পার্কগুলোর মেলবন্ধন ঘটানো।
করোনা একটি অদৃশ্য ঝড়ের মতো লণ্ডভণ্ড করেছে সারা বিশ্বময়। এই ঝড় পরবর্তী বিশ্ব অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হবে সবচেয়ে বেশি, তা বলাই বাহুল্য। কোভিড-১৯ এ যখন বিশ্বের বড় বড় অর্থনৈতিক দেশ তাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য চিন্তায় পড়েছে, সেখানে বাংলাদেশের জন্য রয়েছে এক অপার সম্ভাবনা। আমরা আশাবাদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিগত দশকের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে। ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ও বিশ্বব্যাপী স্থবির হয়ে পড়া অর্থনৈতিক সংকটের এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য এমনি এক আশা জাগানিয়া সংবাদ শুনিয়েছে। এই সংবাদ বলছে করোনাভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতিও উদীয়মান সবল অর্থনীতির ৬৬টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। এমনকি চীনের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার নেতিগত প্রভাব হ্রাস করতে বাংলাদেশের কৃষি, চিকিৎসা এবং আধুনিক যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ উদ্ভাবন, তৈরি এবং মেরামতের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং খাদ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দেশীয় চাহিদা পূরণ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম হতে পারে। এখন প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন। সরকারি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর এজন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং শিক্ষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি রূপকল্প ২০২১, ২০৩০, ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও রূপকল্প বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় হোক ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ, মানবিক ও আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নত ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
লেখক: অধ্যাপক; তথ্যপ্রযুক্তিবিদ; সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)


সর্বশেষ - রাজনীতি

নির্বাচিত