1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাঙালির সন্তুষ্টির হাসি, স্বপ্নের দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা

eb-editor : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০২৩

ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার

বাঙালির অহংকার এবং সক্ষমতার প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের দিন থেকে এটি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অফুরন্ত সৌন্দর্যের প্রতীক প্রমত্তা পদ্মার বুকে ইস্পাত-কংক্রিটের তৈরি গর্বের সেতুটি সফলতায় ভরা দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক, আঞ্চলিক শিল্প বিকাশ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

গত এক বছরে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা থেকে ঢাকা রুটে বিলাসবহুল দ্বিতল বাসসহ নতুন পরিবহন বেড়েছে দেড়শ’রও বেশি। সেই সঙ্গে যাত্রীও বেড়েছে কয়েকজন। এতে সন্তুষ্টির হাসি পরিবহন ব্যবসায়ীদের মুখে। সেতু দিয়ে দৈনিক গড়ে সাড়ে ১৫ হাজার গাড়ি চলাচল করছে। এ থেকে প্রতিদিন গড়ে আয় হয় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বছর ঘুরে সর্বমোট প্রায় ৮০০ কোটি টাকার টোল আদায় হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার কৃষি, শিল্পকারখানা, চিংড়ি-সাদা মাছ, সবজি ও পর্যটনশিল্প অর্থনীতিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সহজাত হয়েছে কৃষিজাত পণ্য বাজারজাত করা। পরিবহনে গুনতে হচ্ছে না বাড়তি অর্থ। ফেরির ঝামেলা। ফলে, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই আছেন স্বস্তিতে। এই সেতুর কল্যাণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিনিয়োগ, বাড়ছে কর্মসংস্থান। ফলে, বাঁচছে সময়, বাঁচছে কর্মঘণ্টাও। ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার সেই রূপ আর নেই। রাজধানী থেকে আগে যেখানে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যেতে, সেখানে এখন লাগছে মাত্র আড়াই-তিন ঘণ্টা। দু’পাড়ের টোল প্লাজায় কোনো যানজট না থাকায় চোখের পলকে নির্বিঘেœ গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রী ও চালক। এছাড়াও দূরপাল্লার বাস ও পণ্যপরিবহনের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত।

২৬ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলে ও সেতুতে বিশৃঙ্খলা হলে ২৭ জুন ভোর থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সেতু বিভাগ। এর প্রায় ১০ মাস পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে আয়ের একটি বৃহৎ অংশ আসে মোটরসাইকেলের আদায়কৃত টোল থেকে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা প্রয়োজন বলে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা।

এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারী ধারণা করে মানসিক ভারসাম্যহীন কয়েকজনকে মারধর ও গণপিটুনির ঘটনা, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। টিকটক করেও ছড়ানো হয়েছে অনেক বিভ্রান্তি। অ্যাম্বুলেন্স কিংবা প্রাইভেটকারে করে সেতুর মাঝখানে গিয়ে টিকটক তৈরিতে ব্যস্ত দেখা গেছে কিছু তরুণকে। নাট-বল্টু খুলেও করেছে টিকটক। অনেককে আবার শুকরিয়া নামাজও আদায় করতে দেখা গেছে। বলা বাহুল্য, রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গে যাত্রা মানেই ছিল পদ্মা নদী পারাপার আর ফেরিঘাটের সীমাহীন ভোগান্তি। উত্তাল ঢেউ, বৈরী আবহাওয়াসহ নানা কারণে ফেরি বন্ধে হাজারো যাত্রীকে বিপাকে পড়তে হতো প্রতিনিয়ত।

সবচেয়ে বড় বিপত্তি ছিল রাত নামলে, পারাপারের অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকা যাত্রীদের রাত কাটত ভয় আর নানা শঙ্কা নিয়ে। কমে আসত যাতায়াতের গতি। সেসব এখন অতীত। পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে দৃশ্যপট। প্রায় ৪৪,০০০ বর্গ কি.মি. (১৭,০০০ বর্গ মাইল) বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯% অঞ্চলজুড়ে ৩ কোটির বেশি জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে সেতুটি নির্মাণের ফলে। দেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ পর্যন্ত অবদান রাখছে সেতুটি।

ডাবল ডেকার পদ্মা সেতু শুধু নিছক একটি পারাপারের সেতু নয়। এর সঙ্গে যেমনি রয়েছে রেললাইন, তেমনি এপার থেকে ওপারে চলে গেছে গ্যাস এবং অপটিক্যাল ফাইবার লাইন। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা ও রামপাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য আলাদা ৪০০ কেভিএ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন।

এতদিন পদ্মা সেতুতে ১৫টি লেনে কম্পিউটার টোল কালেক্টর পদ্ধতিতে ম্যানুয়ালি টোল আদায় হচ্ছিল। এই কাজে আরও গতি আনতে সেতুর দুই প্রান্তে বিশ্বের জনপ্রিয় দুটি পদ্ধতি- ১. রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন বা আরএফআইডি ও হাইব্রিড ২. ‘টাচ অ্যান্ড গো’ পদ্ধতি সংযোজিত হচ্ছে। নতুন এই দুই পদ্ধতি চালু হলে সম্পূর্ণ জটলামুক্ত থাকবে টোল প্লাজা। বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। প্রথমটি, বিশ্বের দীর্ঘতম ১২২ মিটার পাইল স্থাপন। দ্বিতীয়টি, ১৫ টন ওজনের ৯৮৭২৫ কিলো নিউটন ক্ষমতা সম্পন্ন ফিকশন প্যান্ডিলাম বেয়ারিং ব্যবহার এবং তৃতীয়টি, নদী শাসনের সর্বোচ্চ ১.১ বিলিয়ন (প্রায় ৮ হাজার ৮০০ কোটি) টাকার চুক্তি।

প্রযুক্তি-প্রকৌশলে পাঁচটি বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করেছে পদ্মা সেতুকে। এগুলো হলো-১. ‘গাইড ব্যান্ড উইথ ফলিং অ্যাপ্রোণ’, যা প্রমত্তা পদ্মার স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করে, ২. ‘জিপিএস’ পদ্ধতি যা নদীর গতিপথ ও স্বভাব নির্ধারণে বসানো পাথরের কাজে ব্যবহৃত, ৩. ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’, যা পাইলিংয়ের উপরিভাগে পাইলের ওজন বহনে সহায়ক, ৪. ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ প্রযুক্তি যা ভূমিকম্প প্রতিরোধে সহায়ক, ৫. নিরাপত্তা নিশ্চিন্তে ‘সিসি ক্যামেরা’ এবং সৌন্দর্যবর্ধন ‘আর্কিটেকচারাল লাইটিং’।

আরও যেসব নান্দনিক স্থাপনা পদ্মা সেতুকে সমৃদ্ধ করেছে তা হলো- দুই স্তরবিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিট নির্মিত এই সেতুর ওপরের স্তরে চারলেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় তৈরি সেতুটি ৪১টি স্প্যান নিয়ে গঠিত। প্রতিটি স্প্যান লম্বায় ১৫০ দশমিক ১২ মিটার বা ৪৯২ দশমিক ৫ ফুট এবং চওড়ায় ২২ দশমিক ৫ মিটার বা ৭৪ ফুট। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার বা ৩ দশমিক ৮২ মাইল। পাথরবিহীন রেললাইন এই প্রথম তৈরি হলো বাংলাদেশে। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুও বটে এবং বিশ্বের ১১তম। নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা, যা ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে সেতু কর্তৃপক্ষকে। ইতোমধ্যে চারটি ধাপে প্রথম বছরে সর্বমোট ৬৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৩ টাকা পরিশোধ হয়েছে।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু তার সর্বোচ্চ মাইলফলকে পৌঁছেছে। বদলে দিয়েছে দেশের রেল নেটওয়ার্ক। সেতু হয়ে যশোর রেলপথে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমছে ২১২ কিলোমিটার। মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল রুটটিও। প্রথম পদ্মা সেতুর নানাবিধ সাফল্যে ও সুবিধার কারণে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর স্বপ্নও এখন জোরালো হচ্ছে। পাটুরিয়া থেকে গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করার জন্য প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। চলছে নানা সমীক্ষাও। সংশ্লিষ্টদের মতে, আধুনিক সকল প্রযুক্তি সংযোজিত হবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে।

ফলে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের একাংশ এবং যশোরের দূরত্ব অনেক কমে আসবে। সমৃদ্ধ হবে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটবে অদূর ভবিষ্যতে। এসব বহুমুখী সেতু দিয়ে যে গতিতে মানুষ ও যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করছে, তার চেয়ে অনেক গতি ও সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শহরের মধ্যে। মূল্যবান কর্মঘণ্টা হারিয়ে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে লক্ষ-কোটি টাকার। অত্যধিক যানজট এবং লোকের কারণে ঢাকা শহর এখন একটি বদ্ধ ও বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে বিশ্বে। পদ্মা সেতু এবং ঢাকার গতির মধ্যে সমন্বয় রাখতে না পারলে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক সুবিধা থুবড়ে পড়বে একদিন। বিষয়টি সরকার ও নগর পরিকল্পনাবিদদের ভাবতে হবে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে।

লেখক : অধ্যাপক এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - রাজনীতি

নির্বাচিত

পিলখানা ট্র্যাজেডি: আর যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত না হয় দেশ

মার্কিন বিতর্কিত ভিসানীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে যেসব যুক্তি দিচ্ছে ভারত

নির্বাচনী প্রচারণায় মাইকের ব্যবহারের প্রকৃত উপযোগিতা কতোটুকু?

কমনওয়েলথ বোর্ড অব গভর্নরস কমিটিতে বাংলাদেশ

বাধ্যতামূলক অবসরে তিন এসপি

সারা দেশে ২২৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

যে কারণে সবচেয়ে কম মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করলেন লিজ ট্রাস

সুপ্রিমকোর্ট

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায়

নিজের লেখা ৩ বইয়ের জন্য বিশেষ আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত বঙ্গবন্ধু

এক গ্রাম থেকেই রপ্তানি আয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা