1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শেখ হাসিনা পারেন, কারণ তিনি ঝুঁকি নিতে জানেন

দীপক চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

সরকারের পদত্যাগ, পার্লামেন্ট বিলুপ্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে বিএনপির আন্দোলন আদৌ কি কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবে- এ প্রশ্ন এখন অনেকেরই। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতারা বলে চলেছেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দলটি জাতীয় নির্বাচনে যাবে না। আগামি নির্বাচন রুখে দেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। অবশ্য এ হুঙ্কার এদেশের জনগণ বহুবার শুনেছে। এতে জনগণের খুবই ক্ষতি হয়েছে, আন্দোলনের নামে যা হয়েছে এটাকে কী বলা উচিত? বিএনপি নেতৃত্বাধীন যারা অতীতে এমন হুঙ্কার দিয়ে নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিল তাদের পরিণতিও জনগণ দেখেছে। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদীয় দলগুলোকে নিয়ে আগামী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে, যদিও ব্রিটেনের ওয়েস্ট মিনিস্টারের গণতন্ত্র অনুসরণ করে দেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় সফরের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতিকে অতীত মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, তারা (বিএনপি) আন্দোলন করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু, তারা যদি অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা এবং আবার কাউকে পুড়িয়ে মারার পথ অবলম্বন করে, আমরা তাদের রেহাই দেব না। তারা যতটা পারে ততো আন্দোলন করতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে, অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন তারা ৫০০ টিরও বেশি স্কুল, ৩৮০০টি যানবাহন-লঞ্চ, ৭০টি ট্রেন এবং ৩৫০০ মানুষকে পুড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে যারা দগ্ধ হয়েছেন তাদের তথ্য কি কেউ রাখে? তবে আমরা কাউকে মানুষের ক্ষতি করতে দেব না।’ এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিশ্বব্যাপী সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানরা সেখানে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বিশ্বের কোথাও। ফলে ভীষণভাবে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত বিএনপি। এখন আলোচনায় ভিসানীতি। তুলকালাম কাণ্ড যেন। কেউ কেউ খুব খুশি।

যুুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে সরকার খুব ঘাবড়াচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে অনেকে বলার চেষ্টা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলে বিরাট ঝুঁকি নিয়ে ফেলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা কেউ কেউ আবার আওয়ামী লীগেরই লোক, নেতাও। কিন্তু সাধারণ মানুষ বলছে, শেখ হাসিনা সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণকারীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন, শেখ হাসিনা ধরে রাখতে পারবেনই, তাঁর কাছেই দেশ নিরাপদ। সরকারকেও ভিসানীতির বিষয়ে অবহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত হয়তো যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। সরকারি দল তাদেও অবস্থানে থেকে বক্তব্য দিচ্ছে কিন্তু বিএনপি বলছে উল্টোটা। এটা দেশের জন্য ভীষণ লজ্জার। তবে আর যাই হোক বিএনপি মনে করছে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে এ সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘ওয়েট এণ্ড সি’ পলিসি।

আসল ঘটনা অন্যখানে। ঝুঁকি এড়াতে পারবে না বিএনপি। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলবে বিএনপি, আর বিএনপি না চাইলেও তার জোটের সঙ্গীরা এটা করবে। এ ধারণা আওয়ামী লীগের। সুতরাং অহিংস কর্মসূচি দিয়ে সহিংসতা রুখে দেওয়া কঠিন। সরকারকে বাধ্য করার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির আছে কি নেই এটা প্রমাণ করাও মুশকিল। ভিসানীতির বিষয়টি মাথায় রাখতেই হবে। সুতরাং আলোচনার টেবিল ছাড়া এ সমস্যা প্রকট হবে। আওয়ামী লীগ অনুমান করতে পেরে রাজনীতিতে নমনীয় হবে। সহিংসতার পথে পা বাড়াবে না দলটি। কারণ, লাভের পাল্লা নিজের দিকেই রাখতে চায়।

নির্বাচন কমিশনের আইন শুনতে হবে। আমরা জানি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম পূরণের একটি নির্দেশিকা রয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থীকেই এই ফরম পূরণ করতে হয়। আইনে রয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে প্রার্থী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকলে মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হতে হবে। এবার হিসেব করুন কেউ! সুতরাং আইন তার স্বাভাবিক গতিতেই চলবে। এটা সবাই জানে, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে অর্থাৎ দুর্নীতি মামলায়ও খালেদা জিয়া দণ্ডিত। তিনি জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানও দণ্ডিত। দুর্নীতির দুটি মামলায় তার যথাক্রমে ৭ ও ১০ বছর কারাদণ্ড হলেও তা ছাপিয়ে ভয়ঙ্কর একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় তার সাজা হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলেও খালেদা জিয়া ২০২০ সালের মার্চ থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে রাজধানীর গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রথমে ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ছয় মাস পর পর এই মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। অন্যতম শর্ত হলো খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। তবে দেশের মধ্যে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিতে পারবেন। আমি তো মনে করি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েও বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসসেবা নেওয়ার যে সুযোগটি পাচ্ছেন এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশাল এক উদারতা। এ সুযোগটি তিনি করে দিয়েছেন। এ জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব। সুতরাং টালবাহানা করার দরকার আছে কি? তারেক রহমান বলে চলেছেন নির্বাচনে তাঁর দল যাবে না। আসলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচন করতে না পারলে নির্বাচনে যাবেই বা কেন বিএনপি! দলটি তো তাদের পকেটের।

স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক লড়াইয়ে এটা পরিষ্কারভাবে পরীক্ষিত যে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পারেন, পারবেন, বাঙালিদের জন্য গণতান্ত্রিক লড়াইটি পারতে হবেই। কারণ, তিনি ঝুঁকি নিতে জানেন।

লেখক : দীপক চৌধুরী – সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক


সর্বশেষ - রাজনীতি