1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

উত্তর সিটির উদ্যোগে গাছের ছায়ায় বদলে গেছে লাউতলা খালপাড়

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলার লাউতলা খালের পাড় দখল করে একাংশে গড়ে উঠেছিল ট্রাকস্ট্যান্ড। সেখানে নিয়মিত রাখা হতো হাজারের বেশি ট্রাক। আরেকাংশ দখল করে তৈরি করা হয়েছিল কাঁচাবাজার, মার্কেট, বহুতল ভবন ও ওয়ার্কশপ। পরে সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) ম্যাপ অনুযায়ী খালের জায়গা দখলমুক্ত করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এরপর খাল খনন করে দু’পাড়ে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয় বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ।

এখন খালের দু’পাড় সবুজে ঘেরা। খালপাড়ে মধু সংগ্রহে ফুলে ফুলে উড়ছে অসংখ্য মৌমাছি ও প্রজাপতি। বাতাসে মিলছে ফুলের ঘ্রাণ। খালপাড়ে সবুজের সমারোহে মিলে প্রশান্তির ছোঁয়া।

এক বছর আগে সাহসিকতার সঙ্গে খালপাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এলাকার চিত্রই পরিবর্তন করে দেয় ডিএসসিসি। সংস্থাটির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বসিলার বাসিন্দারা জানান, লাউতলা খাল দখলমুক্ত হবে বা খাল দিয়ে পানিপ্রবাহ তৈরি হবে এমনটি কেউ কল্পনাও করেনি। আগে একটি প্রভাবশালী মহল খালের জায়গা ভাড়া দিয়ে বাণিজ্য করতো। অনেকে এ সুযোগে বহুতল ভবনও তৈরি করেছিলেন। ডিএনসিসি যে সাহসিকতার সঙ্গে খালটি দখলমুক্ত করেছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এভাবে নগরের অন্য খালগুলো খনন করে পানিপ্রবাহ তৈরি করতে হবে।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লাউতলা খালের জায়গা থেকে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড ও মার্কেট উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছি। খালে এখন পানিপ্রবাহ নিশ্চিত হয়েছে, নৌকা চলাচল করছে। আমরা চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করতে। তারই অংশ হিসেবে লাউতলা খালের পাড়ে প্রাথমিকভাবে বৃক্ষরোপণ করে নান্দনিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন সেখানে পথচারীদের হাঁটা-চলার পথ, সাইকেল লেন করা হবে।

তিনি বলেন, গাছ একটি শহরের পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান। তাই আমরা ডিএনসিসির প্রতিটি খালপাড়ে ফল ও ঔষধি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি সব খালে যাতে লাউতলার মতো নান্দনিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ থেকে বসিলা সেতু যেতে হাতের ডান পাশেই লাউতলা খাল। সোমবার (২২ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় আধা কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটির দু’পাড়ে সারিবদ্ধভাবে হরেক রকমের ফল, ফুল, ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে। খালের দু’পাড়ে ঢালুতে ঘাসজাতীয় ফুল ফুটেছে। এসব ফুলে উড়ছে অসংখ্য মৌমাছি, প্রজাপতি ও ফড়িং। কয়েকটি কদম গাছে রয়েছে। যেখানে শালিক, টুনটুনি ও দোয়েল পাখির কলরব শোনা যায়।

লাউতলা খালের দু’পাড়ের জায়গা যে যার মতো করে অন্তত ১৪টি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছিলেন। তাদের কেউ খালের তিন শতাংশ, কেউ এক বা আধা শতাংশ জায়গা দখল করেছিলেন। উচ্ছেদ অভিযানে সিএস নকশা ধরে তাদের প্রত্যেকটি ভবন ভেঙে দেয় ডিএনসিসি। যদিও এখন খালপাড়ে যে সবুজায়ন করা হয়েছে, এসব ভবনের মালিকরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছেন। মনোরম পরিবেশের কারণে এ এলাকার বাসার চাহিদা ও ভাড়া বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

লাউতলা খালের উত্তর পাড়ে একটি চারতলা ভবনের মালিক রতন খন্দকার। তিনি বলেন, ‘সিএস রেকর্ড অনুযায়ী আমার বাড়ির সীমানাসহ একাংশ খালের জায়গায় পড়েছিল। পরে আমি তা সিটি করপোরেশনকে ছেড়ে দিই। প্রথমে বিষয়টা খারাপ লাগলেও এখন ভালো লাগছে। বিশেষ করে খালের দু’পাড়ে আম, জাম, কাঁঠাল, কদম, জলপাইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোয় এলাকার চেহারাই পাল্টে হয়ে গেছে। এখন নিজের বাড়িটাও বাগানবাড়ির মতো লাগে। বাড়িতে মেহমান এলে সবাই খালপাড়ে ঘুরে যায়।’

ছয় মাস আগে লাউতলা খালপাড়ে তিনতলা একটি বাড়িতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে উঠেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী গোলাম হোসেন। তিনি বলেন, আমার অফিস মোহাম্মদপুরে। বসিলা এলাকায় তুলনামূলক কম টাকায় বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। এছাড়া লাউতলা খালের পরিবেশ দেখে বাসা নেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। এখন দিন যত যাচ্ছে, গাছগুলো তত বেড়ে উঠছে। সকাল-বিকেল খালপাড়ে হাঁটতে গিয়ে মনে প্রশান্তি কাজ করে।

লাউতলা খাল সংলগ্ন একটি গ্যারেজে কাজ করেন মনির হোসেন। তার গ্যারেজের একটি দরজা লাউতলা খাল বরাবর। কাজ শেষে প্রতিদিন বিকেলে খালপাড়ে বসে সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প করেন তিনি। সোমবার বিকেলে খালপাড়ে তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

মনির হোসেন বলেন, ‘খালপাড়ে গাছ লাগানোর পর থেকে বিনোদনকেন্দ্র মনে হচ্ছে। মহল্লার সবাই বিকালে বাচ্চাদের নিয়ে খাল পাড়ে ঘুরে আসে। সবাই গাছের যত্ন নেয়।’

ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০ সালে রাজধানীর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ২৬টি খাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারই একটি লাউতলা খাল। যেটি লাউতলা-রামচন্দ্রপুর খাল হিসেবে পরিচিত। পরে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সিএস রেকর্ড অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালন করে ডিএনসিসি। অভিযানে যাতে কেউ বাধা দিতে না পারে, সে জন্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে রেখেছিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। বিনা বাধায় লাউতলা খালটি দখলমুক্ত করা হয়। অনেক বাড়ির মালিক স্বেচ্ছায় জায়গা ছেড়ে দেন। অভিযানের পর খনন শেষে ডিএনসিসির উদ্যোগে দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) কর্তৃপক্ষ ও শক্তি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় খালপাড়ে দুই শতাধিক গাছ লাগানো হয়।

বসিলা এলাকাটি ডিএনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ বলেন, লাউতলা খালটি দখলমুক্ত করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। দখলদাররা এ খালের জায়গা ছাড়তে চাননি। কিন্তু আমরা সিএস রেকর্ড অনুযায়ী খালটি দখলমুক্ত করছি। পরে খালপাড়ে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করেছি। এখন ডিএনসিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী খালপাড়ে সাইকেল লেন, হাঁটার পথ তৈরি করা হবে। এছাড়া খাল সংলগ্ন ডিএনসিসির একটি ফাঁকা জায়গা আছে। সেটি খেলার মাঠ করার ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।’


সর্বশেষ - রাজনীতি