সেতু নির্মাণের জন্য পদ্মাকে বশে আনাও ছিলো বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধটা ছিলো পদ্মার মতো খরস্রোতা একটা নদীকে বশে এনে সেই নদীর বুকে সেতু নির্মাণ করা। সেটা দারুণভাবেই করতে পেরেছে বাংলাদেশ। নদী শাসনে যা বিশ্বে অনন্য।
সেতু সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী শাসন প্রক্রিয়ায় পদ্মার জীববৈচিত্র্য যেনো কোনভাবেই নষ্ট না হয় সেটাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
উত্তাল পদ্মার কতরূপ। কখনো জেলে-মাঝিদের আয়ের উৎস আবার ভরা বর্ষায় নদী পাড়ের দুই পাশ ভেঙে বয়ে চলা সর্বনাশ। সেই উত্তাল পদ্মার বুকে সেতু বানানো সহজ কথা নয়।
পদ্মা বহুমুখী সেতু যে কয়েকটি উদাহরণ তৈরি করেছে, তার মধ্যে নদী শাসন একটি অন্যতম অধ্যায়। খরস্রোতা পদ্মাকে শাসন করা অসম্ভব বলেই মনে করতো অনেকে।
নদীশাসন হল নদীর গতিপথকে এমনভাবে স্থিতিশীল করে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ যাতে নদী বা নদীর জলরাশি সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
নদী শাসনের কাজ ঠিকমত করা না হলে নদীর পানিপ্রবাহ গতিপথ বদলে সেতুকে পাশ কাটিয়ে রাস্তা প্লাবিত করে বা ভেঙে সেতুর কাঠামো নষ্ট করে দিতে পারে।
তাই সেতু নির্মাণে নদী শাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রাজিলের আমাজনের পরই সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মাকে শাসন করাও ছিলো রীতিমতো কঠিন এক কাজ।
কিন্তু সেই পদ্মার বুকে সগর্বে দাঁড়িয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। কিভাবে শাসন করা গেলো প্রমত্তা পদ্মাকে, সেই কথাই একাত্তর টেলিভিশনকে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ ও পদ্মাসেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য আইনুন নিশাত জানান, পদ্মার মত গভীর নদীর নীচে শক্ত মাটির খোঁজ পেতেই অনেক সময় লেগে যায়।
তারপর স্লপ তৈরি করার জন্য এক হাজার কেজি ওজনের একেকটি পাথর আনা হয় ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে। কিন্তু পদ্মার উত্তাল জোয়ারের বাধা ছিলো পদে পদে।
তিনি বলেন, সেতুর জন্য নদী শাসনে যেমন পদ্মার খরস্রোতা রূপকে মাথায় রাখতে হয়েছে। তেমনি এই কর্মযজ্ঞে নদীর জীববৈচিত্রের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য সতর্কতা ছিলো।
এই বিশেষজ্ঞ জানান, পদ্মাসেতু নির্মাণে নদী শাসনের জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে তার নাম গাইড ব্যান্ড ফলিং অ্যাপ্রোন।
এ কৌশলে নদী পাড় থেকে যতদূর খনন করা যায়, তা করে রাখা হয়। খননের পর ঢাল তৈরি করে তার ওপর ভারী পাথর কিংবা জিও টেক্সটাইলের বালু ভর্তি ব্যাগ ফেলে রাখা হয়।
ফলে ওই অংশের নরম মাটি যদি কোনো কারণে ভেঙে নিচে সরেও যায়, স্থাপিত ভারী পাথরের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তনে বাধা সৃষ্টি হয়।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মার চরিত্রকে মাথায় রেখেই এর বুকে সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে মোট ১৪ কিলোমিটার নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে।