1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মাথা নত না করা বাংলাদেশের রূপকার

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

‘শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়’- বাংলাদেশকে নিয়ে কবি সুকান্তের এই অমর পঙ্ক্তিমালা লেখার সময়কাল এমন একটা সময়, যখন পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব ছিল না। জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখারের পটভূমিতে বাংলাদেশকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একাত্তরের ২৫ মার্চ ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় তার সেনা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, তার প্রয়োজন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নয়, মাটি। তার পরের মাত্র নয়টি মাসে ত্রিশ লাখ বাঙালীকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ইয়াহিয়ার সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নের প্রয়াস পেয়েছিল। বাহাত্তরে বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তার প্রবৃদ্ধি ছিল শূন্যেরও নিচে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন আর মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ আরব দেশের অসহযোগিতাসহ বাধা ডিঙ্গিয়ে তাঁর শাহাদাতবরণের বছরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে নিয়ে গিয়েছিলেন সাত শতাংশের কোটায়। ভয়ঙ্কর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের এমন ঘুরে দাঁড়ানোর নজির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপান ছাড়া দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা জানা নেই।

২০২০-এর শুরুতে যখন কোভিড ছড়াতে শুরু করেছিল, তখনও সম্ভবত পৃথিবীর মানুষ বুঝে উঠতে পারেনি পরবর্তী দুটি বছরে কি ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক এখনও চলমান। কাজেই এটি যে বৈশ্বিক অর্থনীতি আর ব্যবস্থাপনায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতই বড় একটা আঘাত, তা বোধ করি আর ব্যাখ্যা করে বোঝানোর প্রয়োজন পড়ে না। তার ওপর উপরিঝামেলা হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সঙ্গত কারণেই বিশ্বের অর্থনীতি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ দুর্যোগকাল অতিক্রম করছে। অনেক দেশে প্রবৃদ্ধিও তাই নিম্নগামী। ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। মাথা না নোয়াবার বাংলাদেশ জাতির পিতার মাথা নত না করা কন্যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে শুধু রুখেই দেয়নি, ঘুরেও দাঁড়িয়েছে এবং ছুটছে সামনের দিকে। পৃথিবীর হাতে গোনা যে কয়টি দেশের প্রবৃদ্ধি করোনাকালেও পাঁচ শতাংশের কোটা ছাড়িয়েছে, তার অন্যতম বাংলাদেশ।

সেই ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ ঘোষণা করতে যাচ্ছে তার অর্থনৈতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিল আমাদের রাজনৈতিক মুক্তি এবং ভৌগোলিক স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুকে অকালে হারাতে না হলে তার অসমাপ্ত দ্বিতীয় বিপ্লবের হাত ধরে আমাদের আজকের এই অর্থনৈতিক মুক্তিটি অর্জিত হতো আশির দশকেই। কিন্তু তা হয়নি। কেন হয়নি সে ইতিহাসও আমাদের অজানা নয়। জিয়া, এরশাদ আর খালেদা জিয়ার মতো পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে শুধু টেনেহিঁচড়ে পেছনেই নিয়ে গেছে। আর তাই বঙ্গবন্ধুর মহাপ্রয়াণের পর রেখে যাওয়া সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির বাংলাদেশকে ফিরে পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁর সুযোগ্য কন্যার প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য।

আমরা হতভাগা। কারণ, আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে পিছিয়েছি কয়েক দশক। তারপরও আমাদের সৌভাগ্য যে, এই বৈশ্বিক দুর্যোগকালে আমাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন পদ্মা সেতু। এটি এখন অবধি পৃথিবীর সবচেয়ে খরস্রোতা নদীর ওপর নির্মিত সেতুই শুধু নয়, নদী শাসনের বিশালতা, পাইলিংয়ের গভীরতা আর ভূমিকম্পের সহনশীলতাসহ নানা কারণেই ভেঙ্গেছে একের পর এক বিশ্ব রেকর্ড। কিন্তু তারচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই পদ্মা সেতু আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা, স্বাবলম্বিতা আর আগামীর বাংলাদেশের উজ্জ্বল প্রতীক। এই পদ্মা সেতুই হতে যাচ্ছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি, বিগ বেন অথবা আইফেল টাওয়ারের মতো আইকনিক বাংলাদেশের উদাহরণ। বাঙালীর রাজনৈতিক আর ভৌগোলিক মুক্তির রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর বাঙালীর অর্থনৈতিক মুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। সুকান্তের না দেখা, জ্বলে-পুুড়ে ছারখার হয়েও মাথা না নোয়ানো বাংলাদেশের অমর মহাকাব্যের স্রষ্টা তারাই। ২৫ জুনকে সামনে রেখে তাদের প্রতি রইল অন্তহীন শ্রদ্ধা।

লেখক : অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) – ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।


সর্বশেষ - রাজনীতি