1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পদ্মা সেতু : খুলে যাবে নতুন দ্বার

তাপস হালদার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৪ জুন, ২০২২

২৫ জুন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলেই তৈরি হবে নতুন ইতিহাস। এ সেতুটি চালুর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতব্যবস্হা সহজতর হবে। খুলনা, বরিশাল ও প্রস্তাবিত পদ্মা বিভাগের জেলাসমূহের অর্থনীতির নতুন দ্বার খুলে যাবে।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে আসলেই পদ্মা সেতু ছিল একটি স্বপ্ন। যারা এই পথে যাতায়াত করেননি, তারা এই সেতুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারবেন না। পদ্মা নদীর কারণে রাজধানী থেকে খুব কাছের জেলাগুলোকেও অনেক দূর মনে হতো। যাত্রীবাহী বাসগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এবং মালবাহী গাড়িগুলোকে নদী পার হতে কখনো কখনো দিনের পর দিনও অপেক্ষা করতে হয়েছে। শীতকালে কুয়াশা, গ্রীষ্মকালে নদীর নাব্য আর বর্ষাকালে বয়ে যেত উত্তাল তরঙ্গের ঢেউ। সবকিছু মিলে পদ্মা নদীতে বছরের বারো মাসই কোনো না কোনো সংকট লেগে থাকত। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগব্যবস্হা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণর্ ভূমিকা পালন করে। যোগাযোগ ব্যবস্হার উন্নতি হলে কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পজাত পণ্য সহজে ও স্বল্পব্যয়ে স্থানান্তর করা যায়। যার কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্হা সহজ হবে। ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে, যা এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো উন্নত করবে। সামগ্রিকভাবে বদলে যাবে অর্থনীতির চেহারা।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল প্রধানত কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানকার উৎপাদিত ফসল এতদিন পর্যন্ত একজন কৃষক জমি থেকেই তার পণ্য বিক্রি করতেন। সেক্ষেত্রে একাধিক হাত ঘুরে সেই পণ্য রাজধানী কিংবা অন্য কোনো শহরে এসে উচ্চমূল্যে বিক্রি হতো। কিন্তু প্রান্তিক কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে হতেন বঞ্চিত। পচনশীল পণ্যগুলো তো নামমাত্র মূল্যেই বিক্রি হতো। এখন পদ্মা সেতু চালুর পর কৃষক চাইলেই তার পণ্য পছন্দমতো বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অতি সহজেই পণ্য নেওয়া যাবে। যার কারণে পুরো জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতির জন্য উন্নত যোগাযোগব্যবস্হার দ্বার খুলে দিচ্ছে। মোংলা ও পায়রা নদীবন্দর, বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করবে। এতে কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপথ বদলে যাবে। শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিরই উন্নতি হবে না, এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি আঞ্চলিক কানেকটিভিটি তৈরি করবে। পদ্মা সেতুর কারণে রেল চলে যাবে পায়রা ও মোংলা নৌবন্দরে। সেতুটি ট্রান্স-এশীয় রেলপথের অংশ হবে। তখন যাত্রীবাহী ট্রেনের চেয়ে অনেক বেশি চলবে মালবাহী ট্রেন। ডাবল কনটেইনার নিয়ে দেশ-বিদেশে ছুটে চলবে ট্রেন।

এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ভারত, নেপাল ও ভুটান মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পেলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে, অন্যদিকে ব্যাপকসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পর্যটনশিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এতদিন পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রÌসৈকত ছিল পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনের নতুন দ্বার খুলে যেতে পারে। পর্যটকদের কাছে বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ হতে পারে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ঢাকা থেকে খুব সহজে চলে যাওয়া যাবে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ও জীববৈচিত্রের লীলাক্ষেত্র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন। বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ ও খান জাহান আলীর মাজার, যশোরে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি, মেহেরপুরের মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ, কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি ও ফকির লালন সাঁইজির মাজার, ভোলার মনপুরা দ্বীপ ও চর কুকরিমুকরিসহ অসংখ্য স্থান দেশি-বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসবে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চর ও দ্বীপকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের মতো বিশাল পর্যটনশিল্প তৈরি করার বিশাল সুযোগ রয়েছে।

পদ্মা নদীর দুই পার ঘিরেই সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, অলিম্পিক ভিলেজ, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, ইকোনমিক করিডর, সেনানিবাস, পর্যটন কেন্দ্র, জাদুঘর, হাইটেক পার্ক, চীনের সাংহাই ও সিঙ্গাপুরের আদলে আধুনিক সিটিসহ নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা। পদ্মার দক্ষিণ পার হয়ে উঠবে ‘কমার্শিয়াল ও বিজনেস হাব’। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে সড়কের আশপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অর্থনৈতিক ও আবাসিক এলাকা তৈরি হবে।

একসময় দেশের উত্তরাবঙ্গে মঙ্গা দেখা দিত। ঢাকার সঙ্গে যমুনা নদী পুরো উত্তরাঞ্চলকে বিছিন্ন করে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার পর পালটে যেতে থাকে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির গতিপথ। যোগাযোগব্যবস্হা সহজ হওয়ার কারণে আস্তে আস্তে দূর হয়েছে মঙ্গা। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে এসেছে। ২৫ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও নির্ধারিত সময়ের সাত বছর আগেই বিনিয়োগের টাকা উঠে এসেছে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলো শিল্পায়ন থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে অনেক মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। পদ্মা সেতুর কারণে ব্যাপক শিল্পায়ন হবে, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে জীবন-জীবিকায়ও আসবে গুণগত পরিবর্তন।

দেশের অর্থনীতিতে সামগ্রিক উৎপাদন, সেবা, শিল্প, পর্যটন ব্যবসায়-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক সুফল আসবে। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা বলছে, মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৩ কোটিরও বেশি মানুষ এই সেতুর মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবে। প্রতি বছর দারিদ্র্য কমবে দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিপি) মতে, সেতুটির ফলে দেশের জিডিপি বাড়বে ১ দশমিক ২২ শতাংশ এবং আঞ্চলিক জিডিপি বাড়বে সাড়ে ৩ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, পদ্মা সেতু বছরে দেশের অর্থনীতিতে ৩৫ হাজার কোটি টাকার জোগান বাড়াবে।

২০৪১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এই সেতুর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতির চাকাও গতিশীল হবে। এটা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পুরো বাংলাদেশের মানুষের জীবনকেই এগিয়ে নেবে। পুরো দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু হবে একটি নতুন মাইলফলক।

লেখক : তাপস হালদার – সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।


সর্বশেষ - রাজনীতি