1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

তাপমাত্রা কমাতে প্রয়োজন পরিকল্পিত বনায়ন

রিফাক আহমেদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩

মানুষ ও পরিবেশের পরম বন্ধু হলো গাছ। গাছ আমাদের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় পরিবেশের সমন্বয়েই সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এই সুন্দর পরিবেশ। একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য অজীব ও জীব প্রতিটি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভৌতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক কারণে এ উপাদানগুলোর মধ্যে যেকোনো একটির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলে সামগ্রিক পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং পরিবেশদূষণ হয়। মানুষের অসচেতনতা এবং অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণেই পরিবেশদূষণ হচ্ছে ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। শুধু তা-ই নয়, উদ্ভিদ বাতাসে বিভিন্ন গ্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা অত্যধিক হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, কারণ ওই গ্যাস তাপ শোষণ করে রাখে। বর্তমানে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া নামে যা সুপরিচিত, সেটা এ কারণেই হয়। উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে বাতাসে অক্সিজেন যোগ করে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার প্রভাবে উদ্ভিদ বায়ুদূষণ কম করে বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কমে যায়। একটি বয়স্ক বৃক্ষ ১০ জন মানুষের বার্ষিক অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে। বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডের অধিক বিষাক্ত গ্যাস শোষণ এবং ১০টি এসির সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। বাতাসে অক্সিজেন ছাড়া অন্যান্য গ্যাস ও ধূলিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ু দূষিত হয়। শত শত টন কার্বন শোষণের মাধ্যমে বায়ুর দূষণরোধ ও দাবদাহ প্রস্বেদনের মাধ্যমে বাতাসে প্রায় ১০০ গ্যালন পানি নির্গত করে পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখে।

বৃক্ষরাজি শব্দদূষণও রোধ করে। গবেষণায় দেখা যায়, এক হেক্টর পরিমাণ মাঝারি বন ১০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ হ্রাস করতে পারে। সর্বোপরি সবুজ বৃক্ষের মনোরম দৃশ্য ও নির্মল বাতাসসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ সব মানুষের চিত্তবিনোদনের আকর্ষণীয় উপাদান। কিন্তু বর্তমানে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বনায়ন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী নগরীতে সবুজ অঞ্চল থাকতে হয় জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৯ বর্গমিটার। যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে জনপ্রতি এই পরিমাণ সবুজ অঞ্চল আছে মাত্র ছয়টি ওয়ার্ডে। বাকি ৮৬টি অর্থাত্ ৯০ শতাংশের বেশি ওয়ার্ডেই প্রয়োজনীয় সবুজ অঞ্চল নেই। সামগ্রিকভাবে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় সবুজ অঞ্চল ছিল ১২ শতাংশ। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮ শতাংশে। আর বর্তমানে ঢাকায় সবুজ অঞ্চল ৬-৭ শতাংশের বেশি হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ধারাবাহিকভাবেই কমছে ঢাকার সবুজ অঞ্চল। স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে পরিচালিত এক গবেষণা বলছে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ঢাকার ১২ শতাংশ সবুজে আচ্ছাদিত থাকলেও ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮ শতাংশে। এখন তা বড়জোর ৭ শতাংশ হবে বলে অনেকে মনে করেন। রাজউকের অধীন এলাকায় সবুজ আচ্ছাদিত পার্ক বা খেলার মাঠ রয়েছে ১ শতাংশেরও কম।

ঢাকায় জনপ্রতি সবুজ এলাকা এশিয়ার অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় বেশ কম। ঢাকায় জনপ্রতি সবুজ অঞ্চল ৯ বর্গমিটারের কম হলেও ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তা ২১.৫২ বর্গমিটার। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে জনপ্রতি সবুজ এলাকা ১৪.৫৭ ও সিঙ্গাপুর সিটিতে ১০ বর্গমিটার।

স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকার ৯২টি ওয়ার্ডের মধ্যে যে ছয়টিতে ডাব্লিউএইচওর মান অনুযায়ী সবুজ এলাকা আছে, তার চারটি ওয়ার্ডই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে। বাকি ওয়ার্ডগুলোর কোনোটিতেই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সবুজ এলাকা নেই। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার বা তার বেশি পরিমাণ সবুজ অঞ্চল থাকা প্রয়োজন।

জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বায়ুমান বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন, দুই সিটি করপোরেশনেরই অনেক ওয়ার্ডে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার বা তার বেশি পরিমাণে সবুজ এলাকা থাকা জরুরি।

সিটি করপোরেশনের তদারকির অভাবেই ঢাকা থেকে সবুজ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেন স্থপতিরা। তাঁদের ভাষ্য, একসময় গাছপালা তদারকির দায়িত্বে সিটি করপোরেশনের একটি হর্টিকালচার বিভাগ ছিল। সেই দায়িত্ব থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। গাছ লাগানো হলেও তা পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে না। তাপমাত্রা কমানোর জন্য অনেক প্রয়াসের মাঝে পরিকল্পিত বনায়ন অন্যতম। এ জন্য অঞ্চলভিত্তিক বনায়ন অতি জরুরি। যে অঞ্চলে বনভূমি কম, সেই অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ অভিযান জোরদার করতে হবে।

লেখক: রিফাক আহমেদ – প্রকৌশলী।


সর্বশেষ - রাজনীতি