1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্থিতিশীলতার দিকে দেশের অর্থনীতি

অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১ মে, ২০২৩

বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। ম্যাক্রো ইকোনোমি স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে এ কারণে যে, সরকার কতোগুলো উদ্যোগ নিয়েছিলো। এক নম্বর উদ্যোগ ছিলো, ডলারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় এলসিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে যে সমস্ত এলসি, যেমন বিলাসী বা প্রয়োজনীয় পণ্য ছিলো সেগুলোর ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও নজর রেখেছিলো, যে কাজে ডলার ব্যবহার করার কথা বলা হয়, এতে আদৌ ডলার ব্যবহার করা হয় কিনা এবং যে দামে প্রকল্প আনা হচ্ছে, যেকোনো একটা এলসি খোলা হচ্ছে, সেটা আদৌ সেই দামের পণ্য কিনা, সেটা চেক করছে। এতে ডলারের চাহিদা কমেছে। একইসঙ্গে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিভিন্ন জায়গা থেকে যাতে ডলার বেশি আসে, সেজন্য এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় হার খানিকটা ফ্লেক্সিবল করেছে। আগে তো একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতো। এখন প্রতি মাসে কিছু না কিছু ডলার বাড়ছে। এটা একেবারে মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরোটা যদি মার্কেটে ওপর ছেড়ে দিতো, তাহলে শুরুতে হয়তো হয়তো একটু ধাক্কা খেতো, কিন্তু আলটিমেটলি আরও কিছু ডলার বেশি আসতো। ঝুঁকি কমানোর জন্য হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যবস্থাটা নিয়েছিলো, এটা খারাপ না। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।

ডলার সংকট আজকাল অনেকটা কমে এসেছে। একদিকে ডলারের চাহিদা কমেছে, অপরদিকে সরবরাহ বেড়েছে। রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে ডলারের ফ্লো বেড়েছিলো, কোরবানির ঈদ সামনে। এই ঈদকে কেন্দ্র করেও ডলারের ফ্লো আবারও বাড়বে। প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠাবেন বিপুল পরিমাণ। তাতে কী হবে? ডলার নিয়ে যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিলো, সেটা কমে আসবে।
ডলারের সংকট তৈরি হয়েছিলো রিজার্ভ কমে যাচ্ছে এ কারণে। রিজার্ভ কমে যাওয়ার একটা কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে অনেক ডলার বিক্রি করতে হয়েছিলো। গত বছর প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। বিক্রি করেছে ডলারকে স্থিতিশীল করার জন্য। সরকারের যে সমস্ত ইম্পোর্ট আছে, যেমন গ্যাস, তেল, ফার্টিলাইজার কিংবা গম কেনার জন্য যে ডলার লাগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাবলিক ব্যাংকের মাধ্যমে সরবরাহ করেছে। সে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কিছুটা কমে এসেছিলো। রিজার্ভ যখন কমে আসে, তখন ডলারের দাম বেড়ে যায়। এটাই সাপ্লাই-ডিমান্ডের নিয়ম।

ডলারের ফ্লো বাড়ানোর জন্য সরকার প্রবাসী আয়ের বাইরেও বিশ^ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকার কাছ থেকে বাজেট সমন্বয় বাবদ বাড়তি ডলার সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং পেয়েছেও। আইএমএফ ৪.৭ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছে। বিশ^ব্যাংক দুই বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কমিট করেছে। এডিবিও কমিট করেছে। জাপান সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকেও সাপোর্ট পাচ্ছেন। এ ধরনের সমর্থন সব জায়গা থেকেই পাচ্ছে। সার্বিকভাবে বললে, ডলার মার্কেট ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।
আগামী দিনেও ডলারের এই ফ্লো অব্যাহত রাখতে হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে হবে। সেসব জায়গা বাধাবিঘ্ন আছে, সেগুলো সামলাতে হবে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্য আনা নেওয়ার করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। চাঁদাবাজি হয়। এ সমস্ত সামাল দেওয়া দরকার। তাহলে জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে।

দেশের জিনিসপত্রের এখনো বেশ বেশি। এর সঙ্গে ডলারের একটা সম্পর্ক আছে। ডলারের দাম ২৫-২৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি করা পণ্যে দামও বেড়ে গেছে। দাম বৃদ্ধির কারণে ইনফ্লুয়েশন হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রায় ৮-৯ শতাংশ ইনফ্লুয়েশন হচ্ছে, যা পশ্চিমা বিশে^ও দেখা যাচ্ছে। ব্রিটেনে তো ১০ শতাংশের ওপরে ইনফ্লুয়েশন এখনো। ইনফ্লুয়েশনের কারণে মানুষের একটু কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে কম আয়ের মানুষদের বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।

তবে কৃষি আমাদের অনেকটা রক্ষা করেছে। ধান উৎপাদন এবারও বাম্পার হবে। সবজি উৎপাদন হচ্ছে। মাছেরও উৎপাদন বেশ ভালো। দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো মোটামুটিভাবে নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে যদি কোনো রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক সংকট হয়, তাহলে এই বাজার পরিস্থিতির ওপরে এর প্রভাব পড়বে। এজন্য আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। শুধু সরকার নয়, সকল স্টেক হোল্ডার অর্থাৎ বিরোধী রাজনৈতিক দল, অন্যান্য সংগঠন, অ্যাসোসিয়েশন, সবারই মনে রাখতে হবে অর্থনীতিকে অর্থনীতির মতো চলতে দিন। আপনারা অন্যান্য যা খুশি করেন, কিন্তু অর্থনীতি যেন তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে। কারণ সকল মানুষের স্বার্থ অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত।

লেখক : অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান – সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক


সর্বশেষ - রাজনীতি