1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আশ্রয়ণের ঘরে জামদানি বিপ্লবের আশা

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের ২৪ বছর বয়সী যুবক সুমন মিয়া। পৈতৃক বসতবাড়ি বা ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই তার। জন্মের পর থেকেই থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ১০ বছর বয়সেই জীবিকার তাগিদে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে। সেখানে একজনের সহযোগী হিসেবে লেগে পড়েন জামদানি শাড়ি তৈরির কাজে। কিছুদিনের মধ্যেই কাজটি পুরোপুরি রপ্ত করে ফেলেন তিনি।

গত বছরের শেষের দিকে মা সালমা আক্তারের নামে সুখিয়া ইউনিয়নের আশুতিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ পান তারা। স্ত্রী সেতু জাহান, দুই বছর বয়সী মেয়ে সুরাইয়া আর ছোট ভাই সাজনকে নিয়ে ওঠেন সেই ঘরে।

ঘরের বারান্দা আর সামনের একটু ফাঁকা জায়গায় টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে সেখানেই সরঞ্জাম বসিয়ে শুরু করেন জামদানি তৈরির কাজ।

সুমনের উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আগ্রহ থেকে স্থানীয় কয়েকজন যুবকও এ কাজে যুক্ত হয়েছেন তার সঙ্গে। নিজের কাজের পাশাপাশি তাদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।

সুজন বলেন, ‘১২ বছর বয়সে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে অন্যের কারখানায় সহযোগী হিসেবে কাজ করেই এই কাজ শিখেছি। নিজে শিখে অনেককেই শিখিয়েছি। এখন সরকার আমাদের একটা ঘর দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে একেবারে চলে এসে এই ঘরেই জামদানি শাড়ি তৈরির সব সরঞ্জামাদি বসিয়েছি। নিজেও কাজ করছি। পাশাপাশি স্থানীয় বেকার যুবকদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’তিনি জানান, প্রয়োজনীয় জোগান আর জায়গার অভাবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিধি বড় করতে পারছেন না। তাই আপাতত স্বল্প পরিসরে কাজটা করছেন।

সুমন বলেন, ‘এ কাজের পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। তবে আমার একার পক্ষে সে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। আবার বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। সুতার কাজ অন্ধকারে করা কঠিন হয়ে যায়। প্রতিটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে ১৫ থেকে ১৬ দিন সময় লাগে। পুরো শাড়ির কাজই সুতার। সম্পূর্ণ কাজটাই হাতে করতে হয়। তাই সময় একটু বেশি লাগে। শাড়িভেদে একেকটি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হয়ে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামদানি শাড়ি তৈরির কাজটি একটি শিল্প। আমার বিশ্বাস এ কাজটি কেউ ভালো করে শিখলে পেশা হিসেবে এটাই যথেষ্ট। আমি চাই গ্রামের বেকার যুবকরা এ কাজে এগিয়ে আসুক।’

সুজনের স্ত্রী সেতু জাহান জানান, তার স্বামী এই কাজটি শেখার পর থেকেই অনেককে শিখিয়েছেন। নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভাব-অনটনের কারণে বড় পরিসরে কাজটা করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এক কাট পটি চালান। সে কর্ম জানে। সরকার যদি তাকে সহযোগিতা করত, তাহলে আরও বড় কিছু করতে পারত। তার মাধ্যমে অন্যদেরও উপার্জনের ব্যবস্থা হতো।’

সুজনের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন তিনজন। তার মধ্যে ছোট ভাই সাজন, আর সদর উপজেলার বিন্নাটি এলাকার মোশাররফ হোসেন নিয়মিত কাজ করছেন সেখানে।

মোশাররফ হোসেন জানান, তিনি সুজনের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তার সহযোগী হিসেবে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ করছেন সেখানে।

তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম কাজটি খুবই কঠিন। কিন্তু সুজন ভাই কিছুদিন দেখিয়ে দেয়ার পর থেকে আমিও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারছি। আমি ছাড়াও আমার বয়সের আরও কয়েকজন এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তবে জায়গা আর সরঞ্জাম কম থাকায় সবাই একসঙ্গে বসতে পারি না। তাই একেক সময়ে একেকজন এসে কাজ শিখি।’

সুমনের জামদানির মতো স্বপ্ন বুনছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী। সুমনের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পে আগ্রহী বেকার যুবক ও নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি সেখানে একটি জামদানি পল্লি তৈরির স্বপ্ন দেখেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি সুমনের মায়ের মাধ্যমে জেনেছি তার দুই ছেলে জামদানি শাড়ি বানানোর কাজ জানেন। এ বিষয়টি জেনে প্রাথমিকভাবে টেস্ট বেসিসে তার ঘরের সামনে ছোট্ট একটু জায়গা দিয়েছিলাম। সেখানেই জামদানি তৈরির কাজ করছেন তারা।

‘তাদের বানানো শাড়িগুলো আমি দেখেছি। দেখে মনে হয়েছে নারায়ণগঞ্জে তৈরি হওয়া জামদানির তুলনায় তাদেরটাও কোনো অংশে কম নয়। তাই আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে। সুমনের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আগ্রহী বেকার যুবক ও মহিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়ার।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘সেখানে একটি জামদানি পল্লি তৈরির স্বপ্ন রয়েছে। যে কয় দিন সময় লাগে শুরুটা হয়তো আমার হাত দিয়েই হবে। তাদের মোটিভেটেড করে নতুন একটি আয়ের উৎস তৈরি করার পাশাপাশি পাকুন্দিয়ার জন্য একটা গর্বের জায়গা তৈরি হবে।’

এটা পাকুন্দিয়াকে সবার সামনে নতুনভাবে পরিচিত করবে বলে মনে করেন তিনি।


সর্বশেষ - রাজনীতি