1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্বপ্ন দেখাচ্ছে আশুড়ার বিল মেগা প্রকল্প

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১১ মে, ২০২২

আলো ঝলমলে পূর্ণিমা রাত। অদূরের শালবন থেকে ভেসে আসবে ঝিঁঝিঁপোকার শব্দ। চারপাশে মৃদু স্রোতে বয়ে যাওয়া দ্বীপসদৃশ বাংলোর দো’তলার ছাদে শুয়ে দেখা যাবে হাজারও জোনাকীর মেলা। গহীন বনে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতিপ্রেমীদের ঘুম ভাঙবে শত পাখির মায়াবী কলতানে।

উত্তরবঙ্গের অ্যামাজন খ্যাত দিনাজপুরের বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আশুড়ার বিলকে ঘিরে এমনটাই স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় প্রশাসন।

প্রায় ২০-৩০ প্রজাতির গাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর সমৃদ্ধ গহীন অরণ্যের মাঝে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিশাল জলাশয় আশুড়ার বিল। এর আয়তন প্রায় ৮৫৭.৪৫ একর। এর মধ্যে বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ধানঝুড়ি, কালীশহর ও সাতানি খাসালপুর মৌজায় প্রায় ২৬৯.২৩ একর এবং নবাবগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের হরিপুর, খটখটিয়া, কৃষ্ণপুর, আলোকধুতি ও বড় জালালপুর মৌজায় প্রায় ৫৮৮.২২ একর এলাকায় রয়েছে এ বিল।

বিলের জলাশয়ে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় লাল খলশে, ধেধল ও কাকিলাসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। ভরা মৌসুমে বিলে বোয়াল, আইড়, গজার, শোল পাবদা, চিংড়ি, টেংরা, কৈ, মাগুর, পুঁটি ও বাইম মাছ পাওয়া যায়।

স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আশুড়ার বিল থেকে প্রতিবছর দেশীয় প্রজাতির প্রায় ২৭৫ টন মাছ পাওয়া যাবে। যা দিয়ে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার মাছের চাহিদা মেটানো যাবে।

আশুড়ার বিল মৎস্যজীবী সমিতির মাধ্যমে ২০ একর জলাশয়ে তৈরি করা হয়েছে মাছের অভয়াশ্রম। এখানে মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিবছর মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। গত দুই দশক ধরে শীতকালে এ বিলে বালিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, হট্টিটি, রাঙ্গামুড়ি, সাদা মানিকজোড় ও শামুকখোলসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখি আসে।

আশুড়ার বিলকে তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শালবন। ৫১৭.৬১ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়েই এ শালবন। এ বনের পশ্চিমে ৩৪৫.৯৫ একর জায়গা বিরামপুর উপজেলার অংশে। আর বাকিটা নবাবগঞ্জ উপজেলার অংশে। এখানে শালগাছ ছাড়াও রয়েছে সেগুন, গামার, কড়ই, বেত, বাঁশ ও জামসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির বিচিত্র গাছ। বনের ভেতরে প্রায়ই দেখা মেলে বনবিড়াল, খেকশিয়াল, বেজি, সাপ ও নানান প্রজাতির পাখি।

২০১০ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এ শালবনের নামকরণ হয় শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান। বিভিন্ন রঙের শাপলা আর পদ্মফুলে ভরা আশুড়ার বিলের উভয়পাশের শালবনকে সংযোগ করেছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় কাঠের সেতু। শালকাঠের তৈরি ৯০০ মিটার লম্বা এ সেতুর পশ্চিমে বিরামপুরের খটখটিয়া কৃষ্ণপুর ও পূর্বদিকে নবাবগঞ্জ।

স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি সেতুটি ২০১৯ সালে ১ জুন উদ্বোধনের মাধ্যমে নাম দেওয়া হয়েছে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতু। আশুড়ার বিল ও কাঠের সেতু দেখতে এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী আসে। সেতু দিয়ে বিলের দুপাড়ের মানুষ যাতায়াত করে। এছাড়া এটি পূর্বে হরিপুর বাজার ও পশ্চিমে হরিপুর বাজারকে সংযুক্ত করেছে।

গত দুইমাসে নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত সভায় সার্ম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেট নামের কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের উপস্থাপনায় জানা যায় মহাপরিকল্পনাটি।

উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকারের একটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে বদলে যাবে উত্তরবঙ্গের অ্যামাজনখ্যাত আশুড়ার বিল। বদলে যাবে দিনাজপুর ও পার্শ্ববর্তী জেলার কয়েক হাজার মানুষের জীবন ব্যবস্থা।

পরিকল্পনা মতে একটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে বিল ও বনের পরিবেশ রক্ষায় বিলে সারাবছর প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ও পানি ধরে রাখার জন্য সোয়া ৯ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খনন করা হবে। সব মিলে ১৪.২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাজ হবে। বিলে পানির অন্যতম উৎস হবে পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির নিষ্কাশিত পানি।

পরিকল্পিত দেশের বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্রে থাকবে তিনটি প্রবেশ পথ আর একটি বের হওয়ার পথ। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য থাকবে সুউচ্চ বঙ্গবন্ধু টাওয়ার। যার শীর্ষে উঠে পুরো শালবন ও আশুড়ার বিল দেখা যাবে। এ টাওয়ারের স্টেয়ারে চিত্রায়িত থাকবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তথ্য। বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সিঁড়ি বেয়ে একসঙ্গে পাঁচ-ছয়জন ওপরে উঠতে পারবেন।

টাওয়ারের সামনে থাকবে ৩০০ আসনের অ্যাম্পিথিয়েটার। সেখানে থাকবে সুস্থ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিনোদনের ব্যবস্থা। শালবনের ভেতরে থাকবে নান্দনিক রাস্তা। পর্যটকদের চলাচলের জন্য থাকবে পরিবেশবান্ধব ও শব্দহীন ছোট গাড়ির ব্যবস্থা। রাস্তার দুইপাশে থাকবে মৌসুমি ফুলের গাছ। থাকবে দুটি ফুডকোর্ট।

চার প্রজাতির শাপলা ও পদ্মপাতায় ভরা বিলের তিনটি স্পটে থাকবে বোট ক্লাব। বনের মাঝ দিয়ে সর্পিলাকারে বয়ে যাওয়া বিচিত্র শাপলা-পদ্মের বিলের জলে নৌকায় চেপে প্রকৃতিতে মিশে যাবেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এখানে এসে তারা অনুভব করবেন অ্যামাজনের রূপকথা। বিলের তিনপাশে থাকা তিনটি বন থেকে বিলের মাঝখানে যাওয়ার জন্য থাকবে দৃষ্টিনন্দন পেডেসট্রিয়ান ব্রিজ (পথচারী সেতু)। এখানে এসে ভ্রমণপিপাসুরা হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে।

বিলের মাঝে দ্বীপসদৃশ রিসোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে বনের অপরূপ সৌন্দর্য। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের জন্য এখানে রাত যাপনের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে থাকবে ওয়াশরুম, রেস্টরুম আর নামাজ ঘর। এখানে থাকবে কফিশপ। রেস্টুরেন্টে থাকবে বিভিন্ন ধরনের দেশি খাবারের ব্যবস্থা। রিসোর্টের ছাদে থাকবে বৃষ্টিতে ভেজার ব্যবস্থা, দেখা যাবে বিকেলের নীলাকাশ। কাঁচের তৈরি ঘরে শুয়ে রাতের জ্যোৎস্না দেখা যাবে। জানালায় হাত বাড়িয়ে ছোঁয়া যাবে মিটিমিটি জ্বলা জোনাকী। রিসোর্টের চারপাশে থাকবে বিচিত্র পাখির অভয়াশ্রম।

পাখির প্রাকৃতিক খাবার নিশ্চিত করতে সেখানে থাকবে বনকাঁঠাল, আমড়া, ডুমুর, লটকন, চাপালিশ ও ক্ষুদিজামসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ। সেখানে থাকবে বিভিন্ন প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন মাছ সমৃদ্ধ অ্যাকুরিয়াম। পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার কথা ভেবে সেখানে কয়েকটি স্পটে থাকবে পুলিশ বক্স ও আনসার চেকপোস্ট।

আশুড়ার বিল ও শালবনকে নিয়ে যে মেগা প্রজেক্টের পরিকল্পনা গ্রহণ হয়েছে তার মাধ্যমে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করা হবে এবং দেশের বৃহত্তম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হবে। তখন এখানে বিদেশি পর্যটক ও পরিবেশবিদরা প্রাণীবৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণার জন্য আসবেন। দেশ-বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসফরে আসবেন। বিল ও শালবনের প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে পর্যটকদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য করে তুলতে এখানে প্রায় ১২শ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিগগির এ মহাপরিকল্পনার তথ্য-উপাত্তসহ একটি থ্রি-ডি অ্যানিমেশন ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে।

মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি হবে বাংলাদেশের বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র। এর ফলে আশুড়ার বিলপাড়ের কয়েকশ পরিবারসহ বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষের চাকরি ও পর্যটন নির্ভর ব্যবসার পথ উন্মোচন হবে। এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। তারা প্রতিদিন দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় করতে পারবে। প্রকল্প চালুর এক থেকে দেড় বছরের মাথায় বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ সুন্দরভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পর থেকে এখানে যা আয় হবে তা থেকে প্রতিবছর সরকারের প্রায় ১০০ কোটি রাজস্ব আয় হবে। আর এ রাজস্ব প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।


সর্বশেষ - রাজনীতি