1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আফগান ফেরত জঙ্গী আলো ছড়ায় রকমারিতে

রাতিন রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১ মে, ২০২১

এই মুহতারামের নাম মুফতি হারুন ইজাহার। উনি আফগানিস্তান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসা একজন প্রশিক্ষিত জঙ্গী, হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাকে গতকাল মধ্যরাতে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। হারুন ইজহারের বাপ মুফতি ইজহার চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার পরিচালক। এই মাদ্রাসায় জঙ্গি তৎপরতা ও প্রশিক্ষণ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। জানা যায়, মুফতি ইজহারের মাদ্রাসা থেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জন্ম হয়েছিল।

এই মাদ্রাসায় ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত তিন মাদ্রাসা ছাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এরপর সেখানে অভিযান চালিয়েও পুলিশ তাজা গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। তখন মুফতি ইজাহারের বাসায় তল্লাশি করেও তখন ১৮ বোতল এসিড, পটাশিয়াম ক্লোরেট, সালফার ও অ্যালুমিনিয়াম পাউডার পাওয়া যায়।
সে মামলায় পুলিশের চার্জশিটে তখন উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও নাশকতা সৃষ্টি করতে হেফাজতে ইসলাম গ্রেনেড তৈরি করছিল। আর গ্রেনেড বোমাগুলো তৈরি করছিল হেফাজতের সাত বোমা বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ডাউকি এলাকা থেকে ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতার লস্কর-ই-তৈয়বার দুই জঙ্গি সদস্য পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল, তাদের সঙ্গে ২০০৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজহারের পুত্র মুফতি হারুন ইজহারের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছিল। মুফতি হারুনের সঙ্গে বৈঠক করে তারা মার্কিন ও ভারতীয় দূতাবাসে হামলারও পরিকল্পনা নিয়েছিল।
 
উপরোক্ত মামলায় পিতা পুত্র দুইজনকেই গ্রেফতার করা হলেও এরা কিভাবে বের হয়ে এসে আবার ইসলামের হেফাজত করছিল, সেটা এক প্রশ্ন বটে! আশা করি আইনের নানা ফাঁকফোকরে যে উগ্রবাদের সমর্থক এবং সিম্প্যাথাইজাররা প্রতিবার জঙ্গীদের জামিন আবেদনে মঞ্জুর করেন এবং জঙ্গীদের জামিনে বেরোতে সাহায্য করেন, তাদেরও একই কায়দায় ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।
এখন পাশের ছবিটার দিকে একটু লক্ষ্য করা যাক। অনলাইনের বইয়ের দোকান রকমারির নানাবিধ লিস্ট নিয়ে প্রায়ই আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখি। ২০১৩ সালে বিজ্ঞানী ডঃ অভিজিৎ রায়ের বিজ্ঞান ও যুক্তিভিত্তিক বইগুলো ফারাবী নামের একটা ফ্লেক্সিলোড ভিক্ষুক উগ্রপন্থী জঙ্গীর ( যে অভিজিত রায়ের হত্যার অন্যতম প্রধান উস্কানিদাতা কালপ্রিট) হুমকিতে ভয় পেয়ে ওয়েবসাইট থেকে নামিয়ে ফেলে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছিল রকমারি। সেই ঘটনার পর থেকে রকমারি তাদের ওয়েবসাইটে ইসলামী বই-এর প্রচার ও প্রমোশন বাড়িয়ে দেয় ( যেটা একান্তই তাদের ব্যবসায়িক স্বাধীনতা), ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো চরম বিতর্কিত লেখকদের বই প্রমোট করতে শুরু করে, এমনকি ইসলামী প্রকাশনার নামে উগ্র মতাদর্শের জঘন্য লজিক্যাল ফ্যালাসি, অপবিজ্ঞান ও চটকদার অপযুক্তি এবং নোংরা মিথ্যাচারে মোড়া সুকৌশলে ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প ছড়ানো বিভিন্ন বই এবং লেখককে সর্বোচ্চ প্রমোশন এবং অ্যাটেনশন পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশক্তি নিয়োগ করে।
কিন্তু তারা সেখানেই থামেনি। ব্যবসায়িক স্বাধীনতার লিমিটটা নিজেদের সুবিধামত বাড়াতে বাড়াতে তারা এবারের বইমেলায় আলো ছড়ানো ব্যাক্তিত্বদের যে লিস্ট দিয়েছে, সেই তালিকায় জ্বলজ্বলে মুকুট হিসেবে আছে আফগান ফেরত বোমা বিশেষজ্ঞ জঙ্গী হারুন ইজাহার। এই লিস্টের বেশিরভাগই ধর্ম প্রচারের নামে উগ্র মৌলবাদ ছড়ানো ধর্মব্যবসায়ী হলেও হারুন ইজাহার একজন কোল্ড ব্লাডেড ট্রেইনড মিলিট্যান্ট। যে জঙ্গীর পরিচালিত মাদ্রাসা থেকে বাংলাদেশের প্রথম এবং সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জন্ম, যে জঙ্গী নিজেই আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সাথে মিলে দুটো দূতাবাসে হামলা চালানোর পরিকল্পনাকারী, যার নির্দেশে মাদ্রাসায় গ্রেনেড তৈরি করতে গিয়ে মারা গেছে তিন ছাত্র, যে এমনকি এখন পর্যন্ত সক্রিয় জঙ্গীবাদে জড়িত থাকায় আবারো গ্রেফতার হয়েছে, সেই ভয়ংকর হিংস্র রাষ্ট্র ও জনগণের শত্রুকে রকমারি আলো ছড়ানো মহান ব্যাক্তিত্ব হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বিশাল পাঠকগোষ্ঠীর কাছে।
একদম রিয়েল লাইফ কোন প্র্যাংক বা সিরিয়াস রসিকতা মনে হচ্ছে, তাই না?
 
রকমারি তাদের ওয়েবসাইটে কার বই বিক্রি করবে, কোন লেখকের কোন বইয়ের প্রমোশনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, সেটা একান্তই তাদের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা, ব্যবসায়িক স্বাধীনতা। জঙ্গী ফারাবীর কাছে হাঁটু গেড়ে নাকে খত দিয়ে বিজ্ঞানের বই নামিয়ে অপবিজ্ঞান আর লজিক্যাল ফ্যালাসির বই, ধর্মের নামে উগ্রবাদ উস্কে দেয়া মিথ্যাচারে ভরা বই সর্বোচ্চ গুরুত্ব বিক্রি করা একটা প্ল্যাটফর্মের কাছে আসলে গুড মোরাল, নীতি-নৈতিকতা, পাঠকের কাছে দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে যাবতীয় শুভ প্রত্যাশা রাখা অর্থহীন। সেজন্যই সচরাচর রকমারির বিষয়ে যাবতীয় আলাপ এড়ায়ে যাই। কিন্তু এইক্ষেত্রে আর পারলাম না। নিষিদ্ধ ঘোষিত এক জঙ্গী সংগঠনের একজন রাষ্ট্রবিরোধী জনগণের জন্য চরম ক্ষতিকর চিহ্নিত ভয়ংকর জঙ্গীকে আলোর ছড়ানো সফেদ দিশারী হিসেবে প্রচার করা, তার বই প্রমোট করা ঠিক কোন ধরনের ব্যবসায়িক স্বাধীনতা? লাখ পাঠক সংযুক্ত আছেন রকমারির সাথে, অসংখ্য তরুণ-তরুণী প্রতিদিন রকমারিতে বই কেনে। এই প্ল্যাটফর্মের ধর্মীয় বইগুলোর নামে যেসব উগ্র মতাদর্শের বই বিক্রি হচ্ছে, চিহ্নিত জঙ্গীর বই বিক্রি হচ্ছে, সেসব পড়ে যদি কেউ উগ্র জঙ্গীবাদের পথে বাড়ায়, তাহলে তার দায় কে নেবে? রকমারী?
কেন একটা বই বিক্রির প্ল্যাটফর্ম ধর্মীয় বই বিক্রির নামে উগ্র জিহাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যম হবে? যদি রকমারী সত্যিই জঙ্গীবাদ প্রচার-প্রসারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেদের ব্র্যান্ড ইমেজ স্ট্যাবলিশ করতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া উচিত না? সেক্ষেত্রে জঙ্গীবাদের দমনে প্রয়োগকৃত দেশের আইন-কানুন কেন জঙ্গীবাদ পেট্রোনাইজ করা, জঙ্গিদের প্রমোট করা রকমারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না?
একজন পাঠক হিসেবে প্রশ্নগুলো তোলা কি খুব অযৌক্তিক?
 
লেখক- রাতিন রহমান, কলামিস্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া একটিভিস্ট


সর্বশেষ - রাজনীতি