শনিবার বিএনপির ইফতার মাহফিলে দেওয়া বক্তব্যের সমালোচকদের ঘিলুহীন আখ্যা দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি যেটা বলেছি, সেটা হচ্ছে, তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি। পরিষ্কারভাবে লিখে দিন, তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি। আমরা চাই, আমাদের উত্থান। আমরা চাই, যুক্তফ্রন্ট আসুক। আমরা চাই, সারা বাংলাদেশ দুর্বার হয়ে গেলে, আমাদের আসন থাকলে উই ক্যান বার্গেনিং উইথ বোথ দ্য পার্টি। তাদের ওয়াদা করিয়ে নেবো, একজন কর্মীর গায়ে হাত দিতে পারবা না।’
প্রসঙ্গত, শনিবার বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি না করায় ২০ দলীয় জোটের নেতারা সাবেক এই রাষ্ট্রপতির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বিএনপির লন্ডনকে হাওয়া ভবনের সাথে তুলনা করে নির্দিষ্ট কারো মুখাপেক্ষী হওয়ার সমালোচনাও করেন। এছাড়া বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের কথা বলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপি নেতারা।
তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান সম্পর্কে সমালোচনার জবাবে বি.চৌধুরী বলেন, ‘এটা বোঝার মতো শক্তি নাই, ঘিলুহীন। এরকম বাজে লোক উল্টাপাল্টা কথা বলতে পারে। আমরা যা বলেছি, পরিষ্কার করেই বলেছি রাজনৈতিক শক্তির কথা। অন্য কোনও শক্তির কথা বলি নাই, বলবোও না।’
শনিবার বিএনপির ইফতারে অংশ নিয়ে বি. চৌধুরী বলেছেন, ‘এটা কি খুব ভালো কথা? এটা কী রাজনীতির জন্য শুভ? এটা কী দেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ? এটা কী ইঙ্গিত নয় যে, দেশ এমন একটা পর্যায়ে যেতে পারে, যেখানে মানুষ মানুষকে হত্যা করবে, নিগৃহীত করবে, জেলে দেবে, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবে। কিন্তু থামাবে কে?’ আমি চিন্তার খোরাক দিয়ে গেলাম।’ এমন আলোচনার সঙ্গে-সঙ্গেই ইফতারে উপস্থিত বিএনপি-জোটের নেতারা সমালোচনায় মুখর হন। কোনও কোনও নেতা গণমাধ্যমে ফোন করে নিজেদের ক্ষোভের কথা প্রচারের অনুরোধ করেন। ওই নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির ইফতারে এসে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোনও কথাই বললেন না বি. চৌধুরী।
জোট নেতাদের সমালোচনা প্রসঙ্গে বি চৌধুরীর আরও বলেন, ‘সো ভেরি ইম্পর্টেন্ট যে লোকে বুঝতে পারে। এ জন্যই খালেদা জিয়ার কথা বলি নাই। ইচ্ছে করেই। বললে, আপনি ওইটারে হেডলাইন দিয়ে দিতেন, এইটা (চিন্তার খোরাক) গায়েব হয়ে যেতো। কথা বুঝছেন? সে জন্যই কালকে (শনিবার) চালাকি করেছি, খালেদা জিয়ার সম্বন্ধে কিছু বলি নাই। নিশ্চয়ই আমরা নেক্সট মিটিংয়ে খালেদা জিয়ার কথা বলবো। এটাও বলবো। আবার বলবো। যারা নির্বোধ, তারা বুঝতে পারে নাই। তাদের জ্ঞাতার্থে আরও ভেঙে বলবো। অবশ্যই, আমরা এটাও বলি, যেকোনও রাজনৈতিক নেতাকে জেলবন্দি করে সত্যিকার অর্থে নির্বাচন হয় না। এটা বলবো।’
বদরুদ্দোজা চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমাদের জোটে সমর্থন দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। আমরা বলেছি, এগুলো (সমর্থন) আরও বাড়তে থাকুক। দেশে সমর্থন বাড়ার পরে আমরা একটা আবহাওয়া সৃষ্টি করতে পারি, সবাই মিলে আমাদের শক্তিশালী করলে উই বিকাম অ্যা ব্যালেন্সিং ফ্যাক্টর। ব্যালেন্সিং ফ্যাক্টর হলে আমরা দুই দলের যে দলকেই সমর্থন দেবো, যাদের কথা আমাদের সঠিক বলে মনে হবে, তারা ওয়াদা করতে হবে, একটি কর্মীর গায়ে হাত দিতে পারবে না। একটি বাড়িতে আগুন দিতে পারবে না। একটি লোককে হত্যা করতে পারবে না। এই শর্তে যারা রাজি তাদের সমর্থন দেবো।’ তিনি যোগ করেন, ‘যে মুহূর্তে তারা শর্ত ভঙ্গ করবে, সে মুহূর্তে সমর্থন উইথড্র করে নেবো। সে কারণেই বলবো, তোমরা যদি রাজি থাকো, আল্লাহর নামে শপথ করো। তাহলে আমরা তোমাদের সাপোর্ট দেবো। তাহলেই বাংলাদেশের রাজনীতি পরিষ্কার হবে। তাহলে বাংলাদেশের সেইফ হবে। রাজনৈতিক কর্মীরা নিরাপদ হবে।’
বি চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই হলো ব্যাপারটা। বুঝতে পারছেন? ক্লিয়ার?’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি তো বলেছি, চিন্তার খোরাক দিলাম, এবার বুঝুন। চিন্তা করুন। সিনিয়র রাজনীতিবিদরা তো সব বলেন না। আপনি এখন ‘ভাঙাইয়া’ নিলেন সব কথা’’—বলেই হেসে উঠলেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।