1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাজেট ও মেগাপ্রকল্পের অগ্রাধিকার

নিরঞ্জন রায় : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩

আর এক মাস পরেই আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট মহান জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় তাই বাজেট তৈরির কাজ হয়তো শেষও করে ফেলেছে। এবারের বাজেট হবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বাজেট। সরকারকে যথেষ্ট জটিল সমীকরণ মেলাতে হবে এবারের বাজেট তৈরিতে। অতীতে আমাদের দেশে বাজেট তৈরি করা হয়েছে গতানুগতিক ধারায়, যেখানে বিগত বছরের সরকারি আয়-ব্যয়ের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট পার্সেন্ট বৃদ্ধি করে চলতি অর্থবছরের প্রাক্কলিত আয়-ব্যয়ের ভিত্তিতে জাতীয় বাজেট তৈরির কথাই আমরা শুনেছি। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতির আকার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক মেগাপ্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে এবং একের পর এক নতুন মেগাপ্রকল্প প্রতিবছর গ্রহণ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আমাদের দেশে রাজস্ব আদায়ের হার যেমন সন্তোষজনক নয়, তেমনি ইচ্ছা করলেই রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকে না। তদুপরি অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগও যথেষ্ট সীমিত। এই যেখানে অবস্থা, সেখানে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে সাপোর্ট করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় বাজেট প্রণয়ন এক ধরনের অসাধ্যকে সাধন করার শামিল।

এই বছরের বাজেট প্রণয়নের কাজটি হবে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের এবং জটিল এক কর্মযজ্ঞ। এ বছর নির্বাচনের বাজেট হবে। স্বাভাবিকভাবেই বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ তুলনামূলক বেশি নির্ধারণ করার একটা চাপ সরকারি দল এবং অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এর ওপর আছে বৈশ্বিক অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যার প্রভাব মারাত্মকভাবেই দেশের অর্থনীতিতে আছে। উন্নত বিশ্বসহ অন্যান্য দেশে সুদের হার বৃদ্ধি এবং তার প্রভাবও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তা ছাড়া গত বছর থেকে বিশ্বব্যাপী যে ডলার সংকট শুরু হয়েছে, তা-ও স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ আপাতত নেই, বরং এই ডলার সংকট প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে ব্যাংকিং খাতের সংকট। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে উন্নত বিশ্বের ব্যাংকিং খাতের সংকটের সঙ্গে আমাদের দেশের বাজেট প্রণয়নের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি মোটেই এত সহজ নয়। উন্নত বিশ্বের ব্যাংক সংকট মূলত সেখানকার অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস। সেখানে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে তার প্রভাব আমাদের দেশের অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। বিশেষ করে রপ্তানি আয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে। সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এবং মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে, তা সংগ্রহ করতে সরকার বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। এসব কারণে এবারের বাজেট প্রণয়নের কাজটি বেশ জটিল এবং এ কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের এবার যে যথেষ্ট মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা যতই থাকুক না কেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে এবং সেই সঙ্গে মেগাপ্রকল্পের কাজও এগিয়ে নিতে হবে সমান তালে। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক মেগাপ্রকল্প চলমান, যার মধ্যে দুই-তিনটির কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে আছে। আশা করা যায়, আগামী এক বছরের মধ্যে এগুলো চালুও হয়ে যাবে। চলমান মেগাপ্রকল্পের কাজ যাতে সমান তালে অব্যাহত থাকে, সেভাবেই আসন্ন বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া নতুন নতুন মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।

অনেকেই বলার চেষ্টা করেছে যে বিশ্বে বিরাজমান অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা থাকায় দেশের মেগাপ্রকল্প গ্রহণে সরকারের ধীরগতি অনুসরণ করা উচিত। দেশে মেগাপ্রকল্প চালু রাখতে এবং নতুন মেগাপ্রকল্প গ্রহণে ধীরগতি অনুসরণ করার ফল মোটেই ভালো হবে না। তেমনটা করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ধারাবাহিকতাই যে বিঘ্নিত হবে তেমন নয়, এর সঙ্গে আরো অনেক ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে যেতে পারি। যেমন—আমাদের উন্নয়নশীল দেশে উন্নতির বিষয়, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা এবং ২০৪০ সাল নাগাদ উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সবই বিঘ্নিত হবে এবং যথেষ্ট পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তা ছাড়া বিশ্বে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, তা খুব শিগগিরই কেটে যাবে, তেমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এমনকি এই সংকট কবে নাগাদ শেষ হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ এবারের সংকট যত না অর্থনৈতিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। সুতরাং এই সংকটের কারণ দেখিয়ে আমাদের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নতুন মেগাপ্রকল্প গ্রহণে বিরতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণেই মেগাপ্রকল্প চালু রাখা এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণে আগের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিতে হবে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে মেগাপ্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। যথাসম্ভব বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের বিষয়টি এড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যে ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় অপরিহার্য, সে ক্ষেত্রে বাহ্যিক (এক্সটার্নাল) ঋণ পরিহার করে প্রবাসী ডলার বন্ড বিক্রি করে নিজস্ব ফান্ড সংগ্রহ করেই বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ভার নির্বাহ করা হবে সবচেয়ে নিরাপদ ব্যবস্থা। বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণ এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর নির্ভরশীলতা অনেক কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি স্থানীয় বন্ড বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দেশের অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে এ ধরনের বন্ড ইস্যু করে অর্থ সংগ্রহ করা সবচেয়ে সুবিধাজনক পদক্ষেপ। ২৫ থেকে ৪০ বছরের বিভিন্ন মেয়াদের বন্ড সরকার বাজারে ছাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সুদের হার তুলনামূলক কম হওয়ার কথা। এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদের হার কত হবে, তা একটি ফর্মুলা বা মডেল ব্যবহার করে নিরূপণ করতে হয়, যাতে সরকার এবং বন্ড হোল্ডার উভয়েই লাভবান হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদের হার এই মুহূর্তে কোনো অবস্থায়ই ৭-৮ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সচ্ছল ব্যক্তিসহ ব্যাবসায়িক এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে এই বন্ড ক্রয়ে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এই ব্যবস্থায় বাজেট ঘাটতি মেটাতে এবং মেগাপ্রকল্পের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল কমানো সম্ভব।

আমাদের দেশে অর্থনৈতিক উন্নতির যে ধারা শুরু হয়েছে, তা যেকোনো মূল্যে অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দেশে চলমান মেগাপ্রকল্পগুলো যেমন একদিকে চালু রাখতে হবে, অন্যদিকে তেমনি একের পর এক নতুন প্রকল্প গ্রহণও অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ অর্থনৈতিক উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো নির্মাণ করা। যত বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে, তত বেশি অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। উন্নত বিশ্ব যে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতিকে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিতে পেরেছে তার বড় কারণ হচ্ছে তারা ব্যাপক হারে দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো নির্মাণ করেছিল এবং এখনো করে চলেছে। বিগত এক দশকে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে, তারও অন্যতম কারণ হচ্ছে বেশ কিছু মেগাপ্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো নির্মাণ করা। বিষয়টি এমন যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত করে নিজস্ব অর্থায়নে অবকাঠামো নির্মাণের স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না। কিন্তু দেশে অবকাঠামো নির্মাণ করে অর্থনৈতিক উন্নতিকে ত্বরান্বিত করার বিষয়টি আজ পরীক্ষিত সত্য। এই বাস্তবতার আলোকে আগামী বাজেটে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নতুন মেগাপ্রকল্প গ্রহণকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

 

লেখক: নিরঞ্জন রায় – সার্টিফায়েড অ্যান্টি মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা।


সর্বশেষ - রাজনীতি