1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রেরণার ১০ এপ্রিল : ‘মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস’

অধ্যাপক ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাঙালি জাতির এক অস্মরণীয় দিন। এদিন গঠিত হয়েছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার, প্রণীত হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। বাংলাদেশের ইতিহাসে আজকের দিনটি ‘মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস’ নামে বহুল পরিচিত। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ১০ এপ্রিল গঠিত এই সরকার প্রবাসী সরকার নামেও পরিচিত। মুজিবনগর সরকার গঠনের ফলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুবিধ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছিল। বলাবাহুল্য পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত ও পরাভূূত করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতালাভের কাক্সিক্ষত মুহূর্তে পৌঁছাতে এই সরকারের বহুমুখী প্রয়াস এবং সংগ্রামী অভিব্যক্তি সমকালের গণ্ডি অতিক্রম করে সর্বকালের প্রশংসা অর্জন করেছে। রাজনৈতিকভাবে কতটা সচেতন ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হলে যুদ্ধরত একটি জাতির পক্ষে এরূপ সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন সম্ভব তা ভেবে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমরা বিস্ময়াভিভূত হই! সেদিন প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠে আজও আমরা শিহরিত বোধ করি।

২৫ মার্চ কালরাত্রে বসামরিক, নিরস্ত্র ও সাধারণ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনী কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নির্বিচার গণহত্যা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে তাঁরই যোগ্য রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও প্রাজ্ঞ নেতৃবর্গ বিশেষত তাজউদদীন আহমদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সূক্ষ্ম কৌশলে গঠিত হয়েছিল মুজিবনগর সরকার এবং প্রণীত হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।

আজকের দিনের রাজনীতিবিদেরা যুদ্ধরত বাঙালির ক্রান্তিকালে এমন দিগনির্দেশনাপূর্ণ ঘোষণাপত্র প্রণয়নে কতটা সক্ষম হতেন তা সাম্প্রতিককালের নানা ঘটনায় বিভিন্ন দলের বিভিন্ন সারির নেতৃবৃন্দের অনৈক্যের অবয়বদৃষ্টে স্পষ্টই অনুভব সম্ভব। উপরন্তু এমন পরিস্থিতির কল্পিত অবস্থাদৃষ্টে হতাশ হওয়ার বিকল্প থাকেনা। অথচ অর্ধশত বছর আগে প্রণীত স্বল্প-পরিসরে কী বলিষ্ঠ বক্তব্যেই না সমৃদ্ধ ছিল স্বাধীনতার সেই ঘোষণাপত্র! বর্তমান প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি অধ্যয়নের বিশেষ একটি বিষয় হতে পারে বলে আমরা মনে করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দীর্ঘ সময় যে বিকৃত ইতিহাসচর্চা কয়েক প্রজন্মকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি তাদের সেই অন্ধ-আচ্ছন্নতা থেকে নিঃসন্দেহে মুক্ত করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। আমরা যদি একনজরে তাকাই তবে প্রাঞ্জল সেই ঘোষণাপত্র থেকে গভীর শিক্ষা লাভ করতে পারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালির বিরুদ্ধে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার ধারাবাহিক ইতিহাসের বিবরণ ও করণীয় দিগনির্দেশনা যেমন ছিল তেমনি দিগনির্দেশনা আমরা তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর তাজউদদীন আহমদসহ অন্যান্যদের প্রণীত ঘোষণাপত্রেও দেখতে পাই। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে পাকিস্তানি অপশাসন ও শোষণ-বঞ্চনার চিত্র ফুটিয়ে তোলে ৭ মার্চের ভাষণের প্রেরণাসহ ২৬ মার্চ কারাবন্দি হওয়ার প্রাক্কালে ঘোষিত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেরণায় গঠিত মুজিবনগর সরকারের অনিবার্যতা দেশবাসী এবং বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে। স্বাধীনতার সেই ঘোষণাপত্র আজও আমাদের অহংকৃত করে তোলে। এই অমিত অহংকার তরুণ প্রজন্মেও প্লাবিত হোক। সত্য-স্নাত ইতিহাসের আলোয় বাঙালির আগামী প্রজন্ম উজ্জীবিত হবে এ প্রত্যাশা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সবারই।

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনলাইনেও দেখা যায়। তবু পাঠকের কাছে সহজতর করার লক্ষ্যে আমরা এক-নজরে আবার তা দেখে নিতে পারি। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রথমত স্থানকাল বর্ণিত হয়েছে এভাবে : ‘মুজিবনগর, বাংলাদেশ, তারিখ: ১০ এপ্রিল ১৯৭১।’ অতঃপর প্রশাসনিক ভাষা-কাঠামোর ঋজু বক্তব্যের মাধ্যমে ঘোষণাপত্রটি এভাবে লিপিবদ্ধ আছে : ‘যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল; এবং যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল; এবং যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেন; এবং যেহেতু তিনি আহূত এই অধিবেশন স্বেচ্ছাচার এবং বে-আইনিভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন; এবং যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করেন; এবং যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান; এবং যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে; এবং যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্যা এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনার দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করে তুলেছে; এবং যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর তাদের কার্যকরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে; সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা অনুমোদন করছি; এবং এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; এবং রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন; এবং তাঁর কর ধার্য ও অর্থব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে; এবং বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য আইনানুগ ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতারও তিনি অধিকারী হবেন। বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, কোন কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি কোন কারণে রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, বিশ্বের একটি জাতি হিসাবে এবং জাতিসংঘের সনদ মোতাবেক আমাদের ওপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তেছে তা যথাযথভাবে আমরা পালন করব। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সনের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য আমরা অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলীকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রপ্রধান ও উপ-রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ ও নিযুক্ত করলাম। স্বাক্ষর : অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী বাংলাদেশ গণপরিষদের ক্ষমতা দ্বারা এবং ক্ষমতা বলে যথাবিধি সর্বাধিক ক্ষমতাধিকারী।’

মুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম ভূখণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দিন হিসেবে ১০ এপ্রিল স্মরণীয়। আজ সেই ঐতিহাসিক ঘটনার ৫২তম বার্ষিকী। ১০ এপ্রিল তাই শুধু একটি দিবস মাত্র নয়- বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামী জীবনের বংশ-পরম্পরার ইতিহাসে অনন্য এক অভিব্যক্তিরও নাম। এই দিনটির অভ্যন্তরে স্বাধীনতালাভের যে চেতনা সক্রিয় তার মর্মমূলে ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার দার্শনিক অভিপ্রায়। পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে বাঙালি কেবল স্বাধীনতা লাভের স্বপ্নই দেখেনি- দেখেছিল স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ তথা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রবর্তনের স্বপ্নও। এ ছিল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সর্বান্তকরণের প্রত্যাশা। তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র ১৫দিনের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ১০এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী সরকার বা মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। সপ্তাহান্তে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে যুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। তার অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্র্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই অস্থায়ী সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় দিকনির্দেশনাসহ দেশে ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণের পর থেকে এ দেশের অগণিত কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং সেনাসদস্যরা দেশকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামে তিরিশ লাখ শহিদ আর আড়াই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধের সফল পরিণতি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর চ‚ড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে।

মুজিবনগর সরকার একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের মতই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সকল প্রকার নীতি নির্ধারণসহ যুদ্ধের কৌশলগত বিষয়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণে গভীর প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়। মুজিবনগর সরকারের মেধাবী নেতৃত্বে পাকিস্তান পরাজিত হয়। বাংলাদেশের মানুষও বংশ-পরম্পরায় এই দিনটির গৌরব ও মাহাত্ম্যের কথা স্মরণ করে। যুদ্ধরত একটি জাতিকে, একটি সুসংগঠিত মুক্তিবাহনীকে সঠিক দিগনির্দেশনা এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে বিজয় অর্জন পর্যন্ত নিয়ে আসা মহৎ নেতৃত্বগুণেরই পরিচয়। মুজিবনগর সরকারের প্রেরণা সমকালে সাধারণের মধ্যে যেমন বিস্তৃত ছিল তেমনি তাদেরকে প্রভাবিতও করেছিল। তাই দেশমার্তৃকার প্রতি মমত্ববোধের গভীরতায় লক্ষ মানুষ প্রাণ বিসর্জনেও কুণ্ঠিত হয়নি।

কিন্তু আজ ৫২ বছর পর মুজিবনগর সরকার কিংবা সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা বাঙালিকে কতটুকু আপ্লুত রাখছে তা ভাবনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে! বাঙালির অসাম্প্রদায়িক নানা উৎসব আয়োজনে এরূপ প্রশ্ন চারদিক থেকেই আমাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে! রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় দল হিসেবে দাবি করা বিএনপি-মহাসচিব ফখরুল সাহেব এখনও মনে করেন ‘পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল’! একই দলের আরেক সিনিয়র নেতা গয়েশ্বরচন্দ্র্র মনে করেন আমাদের ‘স্বাধীনতা বাই চাঞ্চ’! তাদের এসব বক্তব্য-ভাষ্যের পশ্চাতে বিরাজিত দুরভিসন্ধি সম্পর্কেও আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে। বাঙালিত্বের গর্বিত অহংবোধ নিয়ে আমাদেরকে উদ্বিঘ্ন হতে হয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মর্যদার সাথে বাংলাদেশ যখন বিশ্বসভায় এগিয়ে যচ্ছে তখন ক্ষমতালোভীদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক রাখতে হবে। কী বিভ্রান্তিতে তরুণ প্রজন্ম আজ আচ্ছন্ন তা ভাবলেই বিমর্ষ হতে হয়! রাজনৈতিক এরূপ বিপন্ন ভ্রষ্ট-চারিতায় সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা নিশ্চয়ই গ্লানি বোধ করেন। গ্লানি বোধ করেন তিরিশ লাখ শহিদ আর সম্ভ্রম হারানো প্রায় তিন লাখ নারীও। ১০ এপ্রিলের প্রেরণা আমাদের সকলকে ইতিহাসের সত্য আলোর পথযাত্রী করে তুলুক।

লেখক : ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম – অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 


সর্বশেষ - রাজনীতি