1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আমদানি নির্ভরতা কমাতে ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে সূর্যমুখী চাষ

ফেনী জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২২

প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী। সূর্যমুখী দেখতে রূপময় শুধু নয়, গুণেও অনন্য। সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যর জন্য অসাধারণ। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে, সূর্যমুখীতে তা নেই। বরং উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় সয়াবিন অথবা সরিষার তেল বহুল ব্যবহার করে থাকি অথচ এসব তেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সূর্যমুখী ফুল থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

পুষ্টিবিদদের তথ্য মতে, সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে অলিক এসিড। সূর্যমুখীর তেলে আছে শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট। আরো আছে কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও পানি। সূর্যমুখীর তেল সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলমুক্ত। আছে ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, আছে মিনারেল। মুখের যত্নে ও দাঁতের জন্য উপকারী একমাত্র তেল। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। চমৎকার এনার্জির উৎসও সূর্যমুখীর তেল।

সূর্যমুখী ফুল হলো ৬ মাসি একটি ফসল। এটি বপনের উপযুক্ত সময় হলো কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। বৈশাখ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কর্তন চলে। সূর্যমুখী ফুল চাষের জন্য পানি জমে থাকে না এমন যে কোনো জমি উপযুক্ত। তবে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়।

১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশে সূর্যমুখী ফুল চাষ হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত সূর্যমুখীর ৩টি জাত উদ্ভাবন হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কিরণী (ডিএস-১)। ১৯৯২ সালে জাতটির অনুমোদন দেয়া হয়। এই জাতটির কাণ্ডের ব্যাস হলো দেড় থেকে দুই সেন্টিমিটার। পরিপক্ব পুষ্পমঞ্জুরি বা শাখার ব্যাস হলো ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। প্রতি মাথায় বীজের সংখ্যা ৪০০ থেকে ৬০০-এর মতো। এই জাতের বীজগুলো কালো বর্ণের হয়ে থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে ৪৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে ফেনীর ৬টি উপজেলায় ৫০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। রাজস্ব অর্থায়নে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় জেলার ৬টি উপজেলায় ৫০টি প্লটের ৪৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা প্রায় একশ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এবার সূর্যমুখীর চাষ করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, এ কর্মসূচির আওতায় ফেনী সদরে ১২টি, সোনাগাজীতে ১২টি, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৭টি, ফুলগাজীতে ৫টি, পরশুরামে ৬টি ও দাগনভূঞায় ৮টি প্রদর্শনী করা হয়েছে।
সোনাগাজীর দক্ষিণ চর ছান্দিয়ায় ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন মো. রুবেল নামে এক কৃষক। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে কৃষকরা উপকূলীয় এসব জমিতে রবি মৌসুমে তেমন কোনো ফসল করতেন না। কিছু জমিতে খাল-বিল থেকে পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে শাক-সবজি, ডাল, আলু জাতীয় ফসল চাষ করতেন। রবি মৌসুমে বাকি জমি থাকত পতিত। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় এবার পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করছেন। ফলন ভালো হওয়ায় লাভও হয়েছে। আগামীতেও চাষ করবেন।

এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার ভোরের কাগজকে জানান, সূর্যমুখীর চারা রোপণের ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুলের দানা থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হয়। এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এক একরে সূর্যমুখী উৎপাদন হয় ৩৩-৩৫ মণ। এক মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজের বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা। একরপ্রতি উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের প্রায় কমবেশি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকেন। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ সংগ্রহ করার পর গাছগুলো জমিতে পচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈবসারের ঘাটতি পূরণ হয়। অনেক কৃষক পরিবার তার দৈনন্দিন জীবনে রান্নার কাজের জ্বালানি হিসেবে সূর্যমুখীর খড়ি ব্যবহার করে থাকে।

তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোনাগাজী অঞ্চলে সরকারিভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। গত ২ বছর সোনাগাজীতে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষা হচ্ছে। এবার সোনাগাজীতে ৪৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখীসহ অন্যান্য রবিশস্য চাষের উপযোগী। তাই ফলনও ভালো হয়েছে। হেক্টরপ্রতি দুই টন উৎপাদন হয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, কৃষকের জমি এবং পরিশ্রম ছাড়া সব সার, বীজ ও ব্যবস্থাপনা করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তিনি বলেন, ফেনী সদরের ২ হেক্টর জমিতে ১২টি প্রদর্শনীর জন্য সরকার ৯০ হাজার ২৫৬ টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। এসব প্রণোদনার অর্থ দিয়ে কৃষকদের মাঝে উন্নত মানের বীজ, সার ও নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা ও সূর্যমুখী চাষের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এ কর্মসূচিতে দেশে তেলের চাহিদা পূরণ করতে সূর্যমুখী আবাদে কৃষকদের উৎসাহ ও প্রণোদনা দিচ্ছে। তিনি বলেন, এ কর্মসূচির আওতায় ফেনীতে ৪৫ হেক্টর নির্বাচিত জমিতে ৫০টি প্রদর্শনীতে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।


সর্বশেষ - রাজনীতি