রাজশাহী গোদাগাড়ীর নিমঘটু গ্রামের দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় চাকরিচ্যুত হয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন (৩০)। রোববার (৩ এপ্রিল) দুপুরে তাকে চাকরিচ্যুত করে বিএমডিএ।
রোববার বিকেলে বিএমডিএর রাজশাহী রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পানি নিয়ে কোনো সংকট ছিল না। তবে গ্রেফতারের পর অপারেটর সাখাওয়াতের নিয়োগ বাতিল করা হলো।
তিনি আরও বলেন, সাখাওয়াতের অনুপস্থিতিতে গত ২৫ মার্চ থেকেই অন্য একজন গভীর নলকূপটি পরিচালনা করছেন। এ কারণে সাখাওয়াতের নিয়োগ স্থায়ীভাবেই বাতিল করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাতে গোদাগাড়ীর কদম শহর এলাকা থেকে সাখাওয়াতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ২৫ মার্চ থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। গ্রেফতারের পর রোববার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করেছে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, আদালত আসামি সাখাওয়াতকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলেও শুনানি হয়নি। দু-একদিন পর শুনানি হতে পারে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাকে থানায় নিয়ে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত ২৩ মার্চ নিমঘটু গ্রামের সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি (৩৭) ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি (২৭) বিষপান করেন। এতে অভিনাথ ২৩ মার্চ ও রবি ২৫ মার্চ মারা যান।
পরিবারের দাবি, বিএমডিএর ঈশ্বরীপুর-২ গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত এ দুই কৃষককে বোরো ধানের জমিতে পানি দিচ্ছিলেন না। পানি না দিয়ে দুই কৃষককে বিষ খেতে বলেছিলেন অপারেটর সাখাওয়াত। তাই তারা দুজনে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। তারা বিষপানের পর তাদের জমিতে রাতে পানি দিয়েছিলেন সাখাওয়াত। এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে দুটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়। ২৫ মার্চ প্রথম মামলাটি হলেই সাখাওয়াত আত্মগোপনে যান।
তার আগ ২৪ মার্চ বাড়ি থেকে অভিনাথের মরদেহ উদ্ধারের সময় সাখাওয়াত হোসেন পুলিশের সামনেই ছিলেন। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে পানি না দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করা হয়। তারপরেও পুলিশ সাদা কাগজে কৃষক অভিনাথের স্ত্রীর সই নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা করে। পরের দিন অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম গোদাগাড়ী থানায় গিয়ে সাখাওয়াতকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। পরে হাসপাতালে রবি মারা গেলে তার ভাই সুশীল মারান্ডি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন।