পিস হিসেবে কিনে কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে তরমুজ। এভাবে পকেট কাটা হচ্ছে ক্রেতার। এমন ঘটনায় দারুণ ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। ফলে প্রশাসন বিয়য়টি নজরে নিয়ে বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করেছে। গতকাল এ আদালত বরিশাল, ময়মনসিংহ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বিক্রেতাদের জরিমানা করেছে।
বরিশাল : জেলা প্রশাসনের পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফলের আড়ত ও দোকানে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় ছয়জন ব্যবসায়ীকে ৯ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করে আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাহাতুল ইসলাম, আরাফাত হোসেন এবং নিশাত ফারাবীর ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর পোর্ট রোড, বাংলাবাজার ও বটতলা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জন তরমুজ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৯ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। জনস্বার্থে এই অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাহাতুল ইসলাম।
বরিশালে প্রতি বছর মৌসুমি রসালো ফল পিস হিসেবে বিক্রি হয়। এ বছর শুরুর দিকে বরিশালের বাজারে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি শুরু করেন বিক্রেতারা। এতে একেকটি বড় সাইজের তরমুজের দাম দাঁড়ায় ৭০০ থেকে হাজার টাকায়। এ কারণে তরমুজ এবার সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ক্ষুব্ধ হন ক্রেতারা। জনগণের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পেরে গত তিন দিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
ফল আড়ৎদার গনেশ দত্ত জানান, তারা আগে পিস হিসেবেই তরমুজ বিক্রি করতেন। এখন খুচরা ব্যবসায়ীরা পিস হিসেবে কিনে কেজি দরে বিক্রি করছেন। এতে সুবিধা-অসুবিধা দুটিই আছে বলে দাবি করেন তিনি।
রাজশাহী : রাজশাহীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা যাবে না-বলে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এক দিন পরই আবারও খুচরা ও পাইকারি বাজারে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে তাদের কাছ থেকে কেজি দরে দাম নেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারাও কেজি দরে বিক্রি করছেন। বাজারে এবার তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এই গরমে মন চাইলেও অনেকে তরমুজ ছুঁয়ে দেখতে পারছেন না।
সাধারণ ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, চাহিদা থাকায় সিন্ডিকেট করে তরমুজের দাম বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার বাজারে নামেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিত সরকার ও কৌশিক আহমেদ। তাদের সঙ্গে জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেনও ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা নগরীর শালবাগানে তরমুজের আড়তগুলোতে যান। তাদের দেখে কোনো কোনো আড়ৎদার আড়তের বেড়া লাগিয়ে পালিয়ে যান। তবে কর্মকর্তারা দুটি আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন। মামা-ভাগ্নে ফল ভান্ডারে গিয়ে দুই ম্যাজিস্ট্রেট সব আড়ত মালিকদের ডাকেন। তারপর জানিয়ে দেন, তরমুজের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। তাই বুধবার থেকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা যাবে না। পিস হিসেবে বিক্রি করতে হবে। তাহলে ক্রেতারা দাম করার সুযোগ পাবেন। দামও তাহলে কমে আসবে।
মামা-ভাগ্নে ফল ভান্ডারের মালিক শাহিন হোসেন কালু বলেন, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা তরমুজ এই আড়তে আনেন তাদেরকেও কেজি দরে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। তাই এটি বাস্তবায়ন করতে কয়েক দিন সময় লাগবে।
ময়মনসিংহ : যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তরমুজ বিক্রি, রশিদ সংরক্ষণ না করা ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ব্যবসা পরিচালনা করায় ময়মনসিংহে ১৪ ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর নতুন বাজার, স্টেশন রোড, ব্রিজ মোড় চরপাড়া মোড় ও নান্দাইল উপজেলায় পৃথক অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা হক বলেন, ভোক্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি স্থানে তরমুজের বাজার মনিটরিং করা হয়েছে।
এ সময় দেখা যায় ব্যবসায়ীরা পিস হিসেবে তরমুজ কিনে এখানে কেজি দরে বিক্রয় করছেন। এর মাধ্যমে তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, নতুন বাজার ও স্টেশন রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঈদুল ইসলাম। সেখানে ছয় ব্যবসায়ীকে ৩ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে নগরীর ব্রিজ মোড় ও চরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিক্রয়মূল্যের মধ্যে অসংগতির কারণে এবং যথাযথভাবে বিক্রি না করায় তিন ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাৎ হোসেন।
এ ছাড়াও নান্দাইল উপজেলার বাসস্ট্যান্ড বাজার ও চৌরাস্তা বাজারে তরমুজের দাম নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এরশাদ উদ্দিন। এ সময় তরমুজ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করায় ও ক্রয় রশিদ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষি বিপণণ আইনে পাঁচটি মামলায় ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।