সম্প্রতি এক নারীসহ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বিলাসবহুল রয়েল রিসোর্টের এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়েছিলেন হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হক। এরপর সশস্ত্র তাণ্ডব চালিয়ে তাকে পুলিশের থেকে ছিনিয়ে নেয় হেফাজতের কর্মীরা। ধরা পড়ার সময় এবং পরবর্তীতে ফেসবুকে এসে মামুনুল বারবার দাবি করেছেন, সেটা তার স্ত্রী। কিন্তু দ্রুতই বেরিয়ে পড়েছে থলের বেড়াল। হোটেলে সময় কাটানো নারীকে স্ত্রী প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে মামুনুলের জন্য।
গত তিনদিন ধরেই এই ইস্যু দেশজুড়ে আলোচনার হট টপিক। প্রিন্ট-অনলাইন আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় একের পর এক নিউজ হচ্ছে। আর মামুনুল অনুসারীদের রোষের কবলে পড়েছে অনলাইন মিডিয়াগুলো। যার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিটি মিডিয়ার ফেসবুক পেইজে। মামুনুলের স্বরূপ উন্মোচিত হওয়া নিউজগুলোর কমেন্টবক্সে গালির ঝড় তুলেছেন তার সমর্থকেরা। মামুনুলের সমর্থকেরা সবসময় নিজেদের সেরা ধার্মিক বলেন; তবে নিশ্চয়ই গালাগালি করা ধার্মিকের কাজ নয়।
দেখা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠ’র ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে মামুনুলকে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের একটি মন্তব্যের নিউজ শেয়ার দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে দুই শতাধিক কমেন্ট পড়ে। যার মাঝে মামুনুল সমর্থকদের কমেন্টগুলো প্রতিটি অশ্লীল গালাগালে ভরা। বিবিসি বাংলার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজেও দেখা গেছে একই দৃশ্য। দেশের সেরা কিছু মিডিয়ার ফেসবুক পেইজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সর্বত্রই গালির ফোয়ারা ছুটিয়েছে হেফাজত সমর্থকেরা। সেসব গালি এত অশ্লীল যে, স্ক্রিনশট প্রকাশযোগ্য নয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সোশ্যাল সাইট ব্যবহারকারী বলেন, মামুনুল সমর্থকদের গালাগালিতে ফেসবুক দূষিত হয়ে উঠেছে। তাদের জন্য ভদ্রলোকেরা কোনো নিউজ পোর্টালের কমেন্ট বক্সে মন্তব্যও করতে পারেন না। তখন একসঙ্গে হামলে পড়ে মামুনুল সমর্থকেরা। প্রতি মন্তব্যকারীর ব্যক্তিজীবন তারা বিষিয়ে তোলে। এমনকী অনেক সময় কারও মন্তব্য পছন্দ না হলে ভার্চুয়াল দুনিয়া ছেড়ে মন্তব্যকারীর বাড়িঘরে হামলা করে হেফাজত সমর্থকেরা। যে কারণে অনেক সোশ্যাল সাইট ব্যবহারকারী পাবলিক পোস্টে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
সোশ্যাল সাইটে মামুনুল অনুসারীদের প্রধান টার্গেট মিডিয়াগুলো। সাংবাদিকরা কেন মামুনুলের স্বরূপ উন্মোচন করছে- এটা তাদের প্রশ্ন। এছাড়া কোনো মুসলিমও যদি মামুনুল বা হেফাজতের সমালোচনা করছেন, তার ওপর হামলে পড়ছে মামুনুলের সমর্থকেরা। তাকে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকারবিরোধী হাজারো বক্তব্য ঘুরছে সোশ্যাল সাইটে। অনেকে জিহাদের ডাক দিচ্ছেন। কিন্তু কেউই তাদের নেতা মামুনুল হকের দোষ দেখছেন না। তাদের কাছে যুক্তি-বুদ্ধি-তথ্য-প্রমাণের কোনো মূল্য নেই। অন্ধের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে সোশ্যাল সাইট দূষণে।