1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মানুষ ও মানবতার জয় হোক

ড. মো. আনিসুজ্জামান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩

বাংলাদেশে ভূমিদান প্রথা প্রাচীন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, এতিমখানার জন্য জমি দান করার প্রথা রয়েছে। আমাদের দেশের অনেক বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের দান-অনুদানে গড়ে উঠেছে। প্রাচীন কালে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মঠ, মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় মানুষের দান-অনুদানে। জমি ক্রয় করে বৌদ্ধ সংঘ স্থাপন করা হয়েছিল এমন দৃষ্টান্ত নেই। বৈশালীর রাজ সুন্দরী আম্রপলী তাঁর জীবনের সব সঞ্চয় দান করেছিলেন বৌদ্ধ সংঘে। এমন বহু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যায়।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পারিবারিক সম্পত্তি থেকে এক দাগে ১৬ বিঘার অধিক জমি দান করেছেন সিআরপিকে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পুনর্বাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য। জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সিভিল সোসাইটি, মেয়রের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জমি হস্তান্তর হয়। সিআরপির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাভারে প্রতিষ্ঠিত সিআরপির অনুরূপ আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিআরপি রাজশাহী শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার গড়ে উঠবে। এই চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার মানুষ সেবার আওতায় আসবে বলে উপস্থিত সিভিল সোসাইটির অভিমত। প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে প্রতিবেশী দেশের মানুষও অল্প ব্যয়ে চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সিআরপি শুধু চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে রোগীকে ছুটি দেয় না, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন করে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ সমাজের, পরিবারের বোঝা নয়, উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় তারাও শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের উন্নয়নে সমান অংশীদারি রাখার সক্ষমতা রাখে।

বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি দান করে রাজশাহীর মেয়র অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমাদের সমাজে আরো বহু উদাহরণ আছে, যাঁরা তাঁদের উপার্জনের বড় একটি অংশ মানবসেবায় দান করে থাকেন। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, সাধারণ মানুষও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে চিকিৎসাকেন্দ্রের জন্য ভূমিদান অতীতে অনেকে করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, জন্মেছিস যখন তখন আঁচড় কেটে যা। এই আঁচড় কাটা মানুষের সংখ্যা বিরল। কিন্তু তাঁরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকেন। সিআরপির ১৮টি সেন্টার দানের ওপর গড়ে উঠেছে।

রাজশাহীর মেয়র ১৬ বিঘা জমিতে বাগানবাড়ি করতে পারতেন, দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট গড়তে পারতেন। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থান হওয়ায় তারকা মানের হোটেল-মোটেল নির্মাণ করে ব্যবসা করতে পারতেন। তিনি কিছু না করে হাসপাতালের জন্য দান করলেন। জাতীয় নেতার পরিবারের সদস্যরা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মানবসেবায় জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের পরিবার এগিয়ে এসে মানবকল্যাণে মানুষের মধ্যে মানুষকে বড় করে দেখেছেন।

সিআরপি রাজশাহী শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টারের জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিভিল সোসাইটির অনেকে নগদ অর্থ দান করেছেন, অনেকে বড় অঙ্কের অর্থ অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সিআরপি জাকাতের অর্থও গ্রহণ করে। এই অর্থ হাসপাতালের উন্নয়ন এবং রোগীর পেছনে ব্যয় করে সিআরপি। প্রতিবছর তারা আট কোটি টাকার ওপর ভর্তুকি দেয়। অর্থের অভাবে সিআরপি থেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত গেছে এমন দৃষ্টান্ত নেই।

আমাদের দেশের সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানকেই মানুষ নিজেদের প্রতিষ্ঠান মনে করে না। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থা সবচেয়ে বেশি, জনসম্পৃক্ততাহীন। বিআরটিসির বাসের বেহাল দশা, সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুরবস্থা, টেলিটক মৃতপ্রায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসের হেলপার-ড্রাইভারের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে দুই শতাধিক আহত, দোকান পুড়ল, রেললাইনে আগুন এবং স্লিপার উঠিয়ে নিয়ে রেল চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ইত্যাদি। ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের এখানে আন্দোলনের নামে বাসে, ট্রেনে, দোকানে আগুন লাগানো হয়। চিকিৎসাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্রোধের অন্যতম কারণ আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজেদের সম্পদ মনে করি না। রাষ্ট্রীয় সম্পদের সঙ্গে আমাদের আত্মার আত্মীয়তা হয় না। জাতীয় চেতনার পরিবর্তে ব্যক্তির চিন্তা বেশি গুরুত্ব পায়।

ভূমি গ্রহণ অনুষ্ঠানে সিআরপির কর্তাব্যক্তিরা অঙ্গীকার করেছেন, সিআরপি রাজশাহী শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টারকে তাঁরা জনসম্পৃক্ত করে গড়তে চান। স্থানীয় জনগণ যেন মনে করে যে এটি তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। এ জন্য সিআরপি কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা চেয়েছে। জনগণকে সংগঠিত করা সম্ভব হলে সিআরপির উদ্যোগ সফল হবে। রাজশাহীবাসীর ভালোবাসায় দ্রুত গড়ে উঠুক সিআরপি রাজশাহী শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার। মানবসেবার দৃষ্টান্ত দ্রুত মানুষের মধ্যে মাথা উঁচু করে আত্মপ্রকাশ করুক। জয় হোক মানবতার।

লেখক: ড. মো. আনিসুজ্জামান – অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি