1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

‘কালো সোনার সাদা কদম’ দোল খাচ্ছে বিস্তীর্ণ মাঠে

ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩

দু’চোখ যেদিকে যায় মাঠজুড়ে শুধুই সাদা আর সাদার সমারোহ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে মাঠের পর মাঠ সাদা চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। আসলে এগুলো পিয়াজ বীজের কদম। যেটি এখানকার কৃষকদের কাছে ‘কালো সোনা’ হিসেবেই পরিচিত। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠে।

এ ইউনিয়নের দিগন্ত মাঠজুড়ে পিয়াজ বীজের আবাদ করেছেন কৃষকরা। এখানকার বেশির ভাগ কৃষকই পিয়াজ বীজের আবাদ করে থাকে। এ বীজটি অন্য ফসলের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হয় এবং শুকানোর পর কালো দানায় পরিণত হয় বলেই এটিকে ‘কালো সোনা’ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। এ বছর ফরিদপুর জেলায় রেকর্ড সংখ্যক পরিমাণ জমিতে পিয়াজ বীজের আবাদ করেছেন কৃষকরা। মাটি ও আবহাওয়া পিয়াজ বীজের উর্বর ভূমি হওয়ায় এ জেলায় দিনকে দিন বাড়ছে পিয়াজ বীজ আবাদের সংখ্যা।

গত বছর বীজ বিক্রি করে কৃষকরা অনেকেই বেশ লাভবান হয়েছেন বলেই এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫৩ হেক্টর বেশি জমিতে পিয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। দেশের পিয়াজ বীজের যে চাহিদা রয়েছে, তার ৭০ ভাগ যোগান দেওয়া হয় ফরিদপুর জেলা থেকে।

দেশের যেকোনো অঞ্চলের উৎপাদিত বীজের তুলনায় ফরিদপুরের পিয়াজ বীজ উৎকৃষ্ট। ফলে এ জেলার পিয়াজ বীজের কদর রয়েছে সারাদেশে। এখানকার পিয়াজ বীজ বিক্রি হয় উচ্চদামে। প্রতি মণ পিয়াজ বীজ ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।

ফরিদপুর সদর উপজেলা ছাড়াও ভাঙ্গা, নগরকান্দা ও সদরপুর উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পিয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর পিয়াজ বীজ বিক্রি করে বেশ লাভবান হবেন বলে মনে করছেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার অম্বিকাপুরের দেশসেরা পিয়াজ বীজ চাষি সাহিদা বেগম জানান, গত বছর তিনি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিয়াজ বীজের আবাদ করেছিলেন। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও তিনি পিয়াজ বীজ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছিলেন। এবছরও তিনি আরও অধিক জমিতে পিয়াজ বীজের আবাদ করেছেন।

আরেক কৃষক বক্তার হোসেন জানান, পিয়াজ বীজ চাষে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এটি ছোট শিশুর মতো যত্ন করে লালন পালন করতে হয়। মাঠ তৈরি থেকে শুরু করে পিয়াজ লাগানো, মাঠ পরিচর্যা, ফুল আসার পর কীটনাশক, সেচ দিতে হয় দফায় দফায়। পিয়াজের কদম থেকে বীজ ছাড়ানো এবং তা রোদে শুকানো, ধুয়ে ফের রোদে শুকানোর পর তা অতি যত্নে বস্তায় রাখা হয়। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে বীজ নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত রোদ, ঝড়-বৃষ্টি হলে পিয়াজ বীজ নষ্ট হয়।

তিনি বলেন, পিয়াজ বীজ আবাদে প্রচুর পরিমাণ টাকা খরচ হয়। বীজ নষ্ট হয়ে গেলে কৃষকের পথে বসতে হয়। তাই অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমরা পিয়াজ বীজের আবাদ করে থাকি।

সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের কৃষক আলেপ মাতুব্বর জানান, গত বছর তিনি পিয়াজ বীজের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় নিম্নমানের বীজ কিনে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। ভাঙ্গার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে অনেকেই প্রতারিত হন বলে তিনি জানান। এ বছর অল্প কিছু জমিতে তিনি পিয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। নগরকান্দার কৃষক জয়নাল মোল্যা জানান, এ বছর বীজ, সার, সেচ দিতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাছাড়া শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় বীজ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর একর প্রতি জমিতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। প্রতি একরে গড়ে তিনশ কেজি বীজ পাওয়া গেছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে পিয়াজ বীজ বিক্রি হয়েছিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা কেজি দরে। এ বছর বীজের দাম কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

কৃষকদের প্রধান দাবি হচ্ছে, সরকার কৃষকদের মাঝে প্রণোদনার যে বীজ ক্রয় করে, তা যেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এসএমই কৃষকদের কাছ থেকে কেনেন। এটি না করা হলে কৃষকরা পিয়াজ বীজ আবাদে আগ্রহ হারাবে।

ফরিদপুর জেলায় এ বছর ১ হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে পিয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৯৩৩ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। ফরিদপুর জেলায় পিয়াজ বীজ উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহ দিতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, পিয়াজ বীজ উৎপাদন এবং তা সংরক্ষণের জন্য কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে।


সর্বশেষ - রাজনীতি