বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে এসেছে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী। এয়াকুব আলী অটো রাইস মিল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর মধ্য দিয়ে সম্প্রতি দেশের ৭৫তম বিসিক শিল্পনগরী হিসেবে এটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে মনে করছেন বিসিক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সবক’টি কারখানা চালু হলে শিল্পনগরটিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় প্লটের চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে নতুন করে জমি অধিগ্রহণের চিন্তা করা হচ্ছে।
এর আগে গত বছর মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করে। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যেতে পারেনি তারা। অবশেষে রাইস মিলটির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করল শিল্পনগরীটি। এরই মধ্যে পণ্য উৎপাদনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীকে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ দশমিক ৩২ একর জমির ওপর নির্মিত মিরসরাই বিসিক শিল্প নগরীতে ব্যয় হয় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পর বরাদ্দের জন্য ৮৮টি প্লটের বিপরীতে ১১৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে ৮৮টি শিল্পোদ্যোক্তাকে প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি। কিন্তু ১৪টি শিল্পোদ্যোক্তা সময়মতো অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় প্লটগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ১৪টি প্লটের বিপরীতে ৫৬টি আবেদন জমা পড়ে। পাঁচ বছরের মধ্যে নয়টি কিস্তিতে প্লটের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। প্লটের প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা।
মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে এ-টাইপ প্লট ২৭টি, বি-টাইপ প্লট ৩৩ ও এস-টাইপ প্লট ২৮টি। এর মধ্যে প্লট বরাদ্দ কমিটি প্রকৌশলী খাতে ১৯টি, তৈরি পোশাক খাতে ১৬, খাদ্য ও খাদ্যজাত খাতে ১৯, কেমিক্যাল অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে ১০, বন ও বনজাত খাতে তিন, প্যাকেজিং খাতে আট, সিরামিকস ও নন মেটালিক খাতে তিন, রাবার-লেদার অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে চারটি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। আর ছয়টি আগেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এয়াকুব আলী অটো রাইস মিলের মালিক পক্ষের একজন মো. সাহাব উদ্দিন মিয়া জানান, ধানের সরবরাহ অনুযায়ী তারা দৈনিক ৪০ টন আতপ চাল উৎপাদন করছেন। ৯ হাজার বর্গফুটের দুটি কারখানায় বর্তমানে ১২ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে জায়গা কম হওয়ায় তারা ব্যাপকভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না।
বিসিক চট্টগ্রামের উপব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন বলেন, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তাই এটির চাহিদা বেশি। সম্প্রতি এয়াকুব আলী অটো রাইস মিলের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠান নতুন করে কারখানা নির্মাণকাজ শুরু করেছে। শিগগিরই আরো কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে। চাহিদা বেশি হওয়ায় নতুন করে জমি অধিগ্রহণের চিন্তা করা হচ্ছে।
২০০৯ সালে মিরসরাইয়ে একটি বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরের বছর মিরসরাইয়ের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মাটি ভরাটসহ নানা জটিলতায় আটকে যায় শিল্পনগরীটি স্থাপনের কাজ। এর মধ্যে একাধিকবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়। বাড়ানো হয় প্রকল্পের সময়সীমাও। ২০১৫ সালের ১২ মে একনেক বৈঠকে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প আকারে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার মিরসরাই বিসিক প্রকল্পের অনুমোদন হয়।
