1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পায়রার তীরে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের আদ্যোপান্ত

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২

পটুয়াখালীর পায়রার তীরে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে, যে কেন্দ্র ঘিরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি ‘হাব’ গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

আজ ২১ মার্চ (সোমবার) ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসাথে তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানার কয়লাভিত্তিক এ কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মে মাসে। ওই বছরের শেষ দিকে চালু হয় দ্বিতীয় ইউনিট। এখন এর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারা হবে।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার এক দশক আগে বেশ কয়েকটি কয়লা ও পরমাণু জ্বালানিভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।যৌথ উদ্যোগের ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম।

কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াইশো কোটি মার্কিন ডলার। নির্মাণ ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পোন্নয়নে পায়রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাব গড়ে তোলার ঘোষণা এর আগেই সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালীতে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়ন করা হয়েছে, যেখানেই নির্মীত হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

প্রথম কেন্দ্রের কাজ শেষে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি কয়লাবিত্তিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কেন্দ্রের নির্মাণ চলছে বলে জানান পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম। ওই কেন্দ্র নির্মাণে ২০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পায়রাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। এছাড়া আমরা গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এখানে একটা ভাসমান টার্মিানলও নির্মাণ করা হবে।”

বিদ্যুতের দাম ও বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ

নির্মাণ শুরুর সময় বলা হয়েছিল, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৬৫ পয়সা। কিন্তু বর্তমানে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।ইন্সটিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফ্যাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইএফএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পায়রা কেন্দ্র থেকে সরকার প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনছে ৮ টাকা ৬০ পয়সা দরে।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম বলেন, কয়লার দামের ওঠানামার ওপরেও তার কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম নির্ভর করবে।

বাংলাদেশে সোলার ও ক্যাপটিভ মিলিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট। সরকারের মহাপরিকল্পনায় এই উৎপাদন ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “ক্যাপাসিটি রেখেই আমাকে কাজ করতে হবে। কোনো কারণে কোনো প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেলে তখন কী করব? সবসময় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি ক্যাপাসিটি রাখতে হয়। জাপানে ১০০ শতাংশ। ক্যাপাসিটি রাখলেইতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ক্যাপটিভ বাদ দিলে আমাদের এখানে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশও নেই। কাজেই যারা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে ক্যাপাসিটি চার্জের কথা বলেন, আমাদের ওইদিকে না গিয়ে বলতে হবে বিনিয়োগের পার্ট।”

সরকার এখানে বিনিয়োগ না করলে, ভর্তুকি না দিলে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পায়রায় পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন কবে?

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদনক্ষমতা ১৩৪৪ মেগাওয়াট। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার পিক আওয়ারে পায়রায় ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে।

মূলত সঞ্চালন লাইন সম্পূর্ণ না হওয়ায় কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না বলে জানান এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম।

তিনি বলেন, কেন্দ্র নির্মাণ হলেও পদ্মা সেতুর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সঞ্চালন লাইন সংযুক্ত করা যাচ্ছে না। এজন্য পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতাও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বর্তমানে পায়রায় যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, তা দিয়ে আশপাশের জেলার চাহিদা মেটানো হচ্ছে এবং এপ্রিলে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ খুলনা ও যশোরেও পৌঁছানো যাবে। তখন কেন্দ্রের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে।

এ বছর ডিসেম্বরেই পায়রায় পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উপাদন করা যাবে বলেন জানান প্রতিমন্ত্রী।

কয়লা আসছে যেভাবে 

১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্র চালানোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি অনুযায়ী সেখান থেকেই কয়লা কেনা হচ্ছে।

বিদ্যুতকেন্দ্রের কয়লা ওঠানামা করার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গেই জেটি করা হয়েছে। সেই জেটি থেকে কনভেয়ার বেল্টে করে স্টোরেজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কয়লা।

বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে পায়রা বন্দর ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই বলে জানান খোরশেদুল আলম।


সর্বশেষ - রাজনীতি