1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পথ কুকুরদের সংখ্যা রাজধানীতে বাড়ছেই

প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

বন্ধ্যাত্বকরণ ও টিকা কার্যক্রম ধীর গতিতে পরিচালনা করায় রাজধানীতে বেড়েই চলেছে পথ কুকুরদের সংখ্যা। ফলে সংখ্যা বাড়লেও পথেঘাটে যত্রতত্র সন্তান জন্ম নেয়া কুকুর ছানারা চোখ ফোটার আগেই অধিকাংশ মারা যাচ্ছে।

অপরদিকে কুকুরের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা খাবারের অভাবে মানুষদের কাছে বেশি ঘেষছে। ফলে কখনও তারা আক্রমণাত্মক হচ্ছে। আবার কখনও তারা খাবারের জন্য কারও গায়ে উঠায় হাতে-পায়ে আচর লাগছে। এতে অনেকে বিরক্ত, অনেকে আতঙ্কিতও হচ্ছেন।

এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের পাশাপাশি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পথ কুকুরদের টিকা ও বন্ধ্যাত্বকরণে এগিয়ে আসছে। ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেকে অর্থ বা শ্রম দিয়ে পথ কুকুরদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, থেমে থেমে কান্না করছেন তিন বছরের শিশু তূহা। পায়ের গোড়ালিতে রক্তের দাগ লেগে আছে। তার পাশেই বসে আছে, নয় বছরে ইয়ানুর। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়েছে তার অনেক আগেই। তুহা’র মা জানান, তিনি এসেছেন মিরপুর ১০ নাম্বার থেকে। দোকান থেকে কেক কিনে বাসায় ফেরার পথে কুকুর কামড় দেয়।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কুকুর-বিড়ালের আক্রমণে শিকার বেশিরভাগ শিশু। তারা আসছেন ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে। হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ২ শতাধিক নতুন রোগীসহ প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ রোগীর সেবা দিতে হচ্ছে।

তিনি জানান, গেল বছর ৭৪,৬৬২ জন চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কুকুরের আক্রমণের শিকার ৫২,০১২ ও অন্যান্য প্রাণী দ্বারা ২২,৬৫০ জন। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ১৩,৬৬৯ রোগীর ৮,৮৯১ কুকুর দ্বারা ও ৪,৭৭৮ জন অন্যান্য প্রাণী দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে মানুষ দেখলেই তারা খাবারের খোঁজে দৌড়ে যাচ্ছে। দ্রুততার সঙ্গে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। কারণ র‌্যাবিস ভাইরাসটির অন্যতম বাহক হলো কুকুর। এর ফলে জলাতঙ্ক হওয়ার আশক্সকা থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৭ লাখ কুকুর রয়েছে। প্রতি বছর কুকুরের কামড়ে আহত হয় তিন থেকে ৪ লাখ মানুষ। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৬৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ২৬ জনে নেমে এসেছে। ২০১১ সালে স্বাস্থ্য, প্রাণসীম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কার্যক্রম ব্যাপকভাবে করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেখানে পরিকল্পিতভাবে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ছিল।

কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি বিভাগের। তাদের সঙ্গে প্রাণী সম্পদ বিভাগের কিছু লোকও কাজ করেন। ঢাকা উত্তরে কমবেশি ৩০ হাজার মতো কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে ২২ হাজার কুকুরকে ভ্যাক্সিনেটেড করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কুকুরকে তার জায়গা থেকে সরানো যাবে না এই মর্মে হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার ভেটেরিনারি সাইন্স বলছে, কুকুর টেরিটোরিয়াল প্রাণী। এরা এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যাবেও না আবার অন্য এলাকার কুকুরকে সে ঢুকতেও দিবে না। এজন্য কুকুর সরানো আসলে কোনো সমাধান না।

দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, কাউকে যদি কোনো মেস ডগ কামড়ায়; আমরা সে কুকুরটাকে ধরে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এছাড়া অভিযোগের ভিত্তিতে যদি র‌্যাবিস প্রমাণিত হয় সেটাকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলি।

এখন তারা কাজ করছেন কুকুর বন্ধাত্বকরণ নিয়ে। এটি সময়সাপেক্ষ হলেও প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ টি কুকুর বন্ধাত্বকরণ করা হচ্ছে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন গত বছরে ২৮ হাজারের অধিক কুকুরকে ভ্যাক্সিনেটেড করেছে। এ বছর এখনো এ কর্মসূচি আওতায় টিকা প্রদান শুরু হয়নি।
এদিকে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে গৃহীত কর্মকৌশলের মধ্যে রয়েছে, কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর কামড়/ আঁচড়ে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রদান। ব্যাপকহারে কুকুরের জলাতঙ্ক টিকা প্রদান, জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা, সার্ভিলেন্স ও গবেষণা।

সিডিসি কর্তৃক সারাদেশের সকল জেলা সদর হাসপাতাল, বিআইটিআইডি হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, মহাখালী ছাড়াও ১১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যাক্তির আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ করা গেছে।
র‌্যাবিসের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১০ দিন থেকে শুরু করে ১০ বছর সময় ও লাগতে পারে। রোগী ভেদে ও ক্ষতের অবস্থান অনুসারে এটি ভিন্ন হয়। মাথার কাছে ক্ষত হলে লক্ষণ আগে প্রকাশ পায়। কিন্তু রোগ প্রকাশ পেলে মৃত্যু অনিবার্য বলা যায়।

কুকুর ছাড়াও শিয়াল, বিড়াল, বানর, বেজি, বাদুড় ইত্যাদি র‍্যাবিস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং আক্রান্ত উল্লেখিত প্রাণি মানুষকে কামড়ালে মানুষের এ রোগ হয়। এসব আক্রান্ত প্রাণির মুখের লালায় র‍্যাবিস ভাইরাস থাকে।


সর্বশেষ - রাজনীতি