1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জাতীয় শিশু দিবস – ছোটদের বঙ্গবন্ধু

ইবার্তা সম্পাদকীয় : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর মমতা। ছোটদের তিনি খুব ভালোবাসতেন। স্নেহ করতেন। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। খুব সহজে সবাইকে আপন করে নিতেন। শিশুদের সবকিছুকে সহজে বুঝতে পারতেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ভারি দয়ালু। তিনি দেখলেন, কোনো ছেলে ভীষণ গরিব, টাকার অভাবে ছাতা কিনতে পারে না, রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট পাচ্ছে, অমনি তার ছাতাটা দিয়ে দিতেন। কিংবা টাকার অভাবে কোনো ছেলে বইপত্র কিনতে পারছে না, দিয়ে দিলেন নিজের বইপত্র। এমনকি একদিন এক ছেলেকে ছেঁড়া কাপড় পরে থাকতে দেখে নিজের পরনের কাপড় খুলে দিয়েছিলেন তিনি। দেশে ও জনগণের বিভিন্ন কাজে বঙ্গবন্ধু যখন গ্রামে-গঞ্জে যেতেন, তখন চলার পথে শিশুদের দেখলে গাড়ি থামিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করতেন। খোঁজখবর নিতেন। দুস্থ ও গরিব শিশুদের দেখলে কাছে টানতেন। কখনো কখনো নিজের গাড়িতে উঠিয়ে অফিসে বা নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। এরপর কাপড়চোপড়সহ নানা উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতেন।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আইয়ুব খান জোর করেই দেশের ক্ষমতা দখল করে নেন। শেখ মুজিবসহ বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে আটকে রাখেন। পাঁচ বছরের জন্য পুরো দেশে রাজনীতি বন্ধ করে দিলে গ্রেপ্তার হওয়ার আগমুহূর্তে শেখ মুজিবুর রহমান তরুণদের এক যুগান্তকারী নির্দেশ দিয়ে গেলেন। বললেন, ‘এই পাঁচ বছর তোমরা শিশু সংগঠন কচি-কাঁচার মেলার মাধ্যমে কাজ করো। নিজেদের সচল রাখো।’ দেশের ঐতিহ্যবাহী এই শিশু সংগঠনটি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের মাত্র দুই বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫৬ সালের ৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্যই তিনি এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ বঙ্গবন্ধু জানতেন, কচি-কাঁচার মেলা প্রগতিশীল একটি শিশু সংগঠন। শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, দেশ ও মানুষকে ভালোবাসার মানসিকতা বিকাশে শিশুরা সেখানে নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠার প্রেরণা পাচ্ছে। শিশুরা দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে।

১৯৬৩ সালে তিনি শিশুদের টানে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে কচি-কাঁচার মেলা আয়োজিত শিশু আনন্দমেলায় এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘এই পবিত্র শিশুদের সঙ্গে মিশি মনটাকে একটু হালকা করার জন্য।’ ছোট্ট এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শিশুদের প্রতি তার আন্তরিক ভালোবাসা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ১৯৭২ সালে একদিন কচি-কাঁচার মেলার কয়েকজন খুদে বন্ধু তাদের আঁকা মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন গণভবনে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিজের চোখে দেখে শিশুরা প্রায় ৩০০ ছবি আঁকে। এর মধ্যে বাছাই করা ৭০টি ছবি রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই দেখান বঙ্গবন্ধুকে। ছবিগুলো বঙ্গবন্ধু রাশিয়া সফরের সময় সে দেশের শিশুদের জন্য নিয়ে যাবেন শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে।

বঙ্গবন্ধু খুব খুশি হলেন খুদে শিল্পীবন্ধুদের কাছে পেয়ে। তিনি তাদের হাসিমুখে আদর করলেন। তিনি আগ্রহভরে বাচ্চাদের আঁকা ছবিগুলো দেখছিলেন আর মন খুলে ছবি ও ছবির আঁকিয়েদের প্রশংসা করছিলেন। তিনি মুগ্ধ হয়ে বললেন, ‘আমার দেশের শিশুরা এমন নিখুঁত ছবি আঁকতে পারে, এসব না দেখলে তা বিশ্বাস করা যায় না।’ তিনি শিশুদের সঙ্গে সে দিন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা কাটান এবং যত্নের সঙ্গে খাবার পরিবেশন করেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ঘর থেকে শিশুরা বেরিয়ে আসার সময় তিনি গভীর তৃপ্তিভরা কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আজকের কর্মব্যস্ত সারাটা দিনের মধ্যে এই একটুখানি সময়ের জন্য আমি শান্তি পেলাম। শিশুদের সান্নিধ্য আমাকে সব অবসাদ থেকে মুক্তি দিয়েছে।’ শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে কচি-কাঁচার মেলা, খেলাঘরসহ অন্যান্য সংগঠনের শিশুবন্ধুদের অনুষ্ঠান ও সমাবেশে গিয়েছেন। তাদের মার্চপাস্ট, লাঠিখেলা, নাটক প্রভৃতি পরিবেশনা উপভোগ করেছেন। শিশুদের এমন উপস্থাপনা দেখে অভিভূত হয়েছেন। প্রশংসা করেছেন। তিনি এত সহজে, এত আন্তরিকভাবে শিশুদের সঙ্গে মিশে যেতেন, শিশুরাও তাকে খুব কম সময়ের মধ্যেই আপন করে নিত।

১৯৭২ সালের একদিন সকালে বঙ্গবন্ধু হাঁটতে বেরিয়েছেন, সঙ্গে বড় ছেলে শেখ কামাল। হঠাৎ বঙ্গবন্ধু দেখলেন কাঁধে বইয়ের ব্যাগ ঝুলানো একটি ছোট ছেলে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। বঙ্গবন্ধু ছেলেটিকে কাছে ডেকে জানতে চাইলেন খুঁড়িয়ে হাঁটার কারণ। ছেলেটি জানাল তার পায়ে কী যেন ফুটছে, ব্যথা করছে। বঙ্গবন্ধু ছেলেটির পায়ের জুতা খুলে দেখেন জুতার ভেতর লোহার সুচালো মাথা বের হয়ে আছে। যার খোঁচায় পা দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ছেলেটির চিকিৎসার জন্য তার দেহরক্ষীকে নির্দেশ দিলেন। হাতে কিছু টাকা দিয়ে পরম মমতায় ছেলেটিকে বিদায় নিলেন। শিশুদের প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধু শিশুদের কল্যাণে ১৯৭৪ সালের ২২ জুন জাতীয় শিশু আইন (চিলড্রেন অ্যাক্ট) জারি করেন। এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ - রাজনীতি