1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নিভৃতচারী এক কবি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হামজা

eb-editor : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২

এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি আমির হামজার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে। যার জীবনের পুরো অংশ জুড়েই ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেম।

১৯৩১ সালে জন্ম নেয়া দীর্ঘদেহী আমির হামজা মধ্য বয়সে সংসারের মায়া ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দেন। ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় তিনি এক হাতে রাইফেল আর অন্য হাতে ধরেছিলেন কলম। সম্মুখ যুদ্ধে রাইফেলের গুলি বর্ষণে শত্রু ঘাটি যেমন ধ্বংস করেছেন-তেমনি কলম হাতে সৃষ্টির আনন্দে মেতেছেন। মহানায়কের কণ্ঠ যেন ধ্বনিত হয়েছে কবির লেখা কবিতায়।

অবশেষে দেশ স্বাধীন হলো। যুদ্ধজয়ী বীরের দল যে যার ঘরে ফিরে গেল। কবিও ফিরলেন বটে তবে মনটা তার আটকে ছিল বঙ্গবন্ধুতে।

মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। প্রথমে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন বরিশাট কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ভর্তি হন শ্রীপুর মহেশচন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে।

তার বাবা ইমারত সরদার, মা আবিরণ নেছা। কবি আমির হামজা একাধারে কবি, গীতিকার ও সুরকার। অপরদিকে তিনি গায়কও। তিনি প্রতিযোগিতামূলক কৰি গান ও পালাগানে অনেক খ্যাতি অর্জন করেন। তার এটা ছিল অনন্য-বৈশিষ্ট্য। তিনি গানের আসরেই গান লিখে, সুর করে, শিল্পী হয়ে তা পরিবেশন করতে পারতেন।

বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে তিনি লিখেছেন-‘যে ক্ষতি তুমি করিতে পারো না পূরণ/কেন সেই মহাপ্রাণ করিলে হরণ/কারে নিয়ে বলো আজ কবিতা লিখি/একটি মুজিব এনে দাওতো দেখি…।’

অথবা ‘এই প্রার্থনা বঙ্গজননী আমার কথা নিও/যুগে যুগে তুমি শেখের মতো দু’একটা ছেলে দিও।’ এটি কোন সাধারণ লেখা নয় কিংবা সাধারণ কোন প্রশ্নও নয়। তিনি কোন রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী বা ইতিহাসবেত্তা নন। প্রত্যন্ত গ্রামের অতি সাধারণ একজন মানুষ কবিতার ছন্দে আঠারো কোটি বাঙালির হয়ে ঘাতকদের কাছে রেখেছেন এই কঠিন প্রশ্ন।

সহজ সরল কবি বুঝতে পারেননি জাতির পিতাকে হত্যায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপট। বুঝতে পারেননি কেন ও কোন স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের আশির্বাদপুষ্ট গণশত্রুরা দেশ ও জাতির এত বড় ক্ষতিসাধন করলো। তিনি তার লেখার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন দেশ ও মাটি রক্ষায় ‘যুগে যুগে শেখের মতো দু’একটি ছেলে দিও’। তার এসব লেখায় বোঝা যায় যায় তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবতেন।

কবি আমির হামজা ছিলেন দক্ষিণ বঙ্গের বিখ্যাত কবিয়াল বিজয় সরকারের শিষ্য। অনেক বাঘা বাঘা কবিয়ালদের সঙ্গে পালা ও কবিগানের টক্করে আসর মাত করার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ছিল তার। এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি নাম হলো- নিতাই সরকার, গৌরপদ সরকার, দিদার, জহির, খালেক দেওয়ান ও আব্দুর রহমান বয়াতি। সমগ্র গ্রামবাংলা ছিল কবি আমির হামজার চারণক্ষেত্র। বাংলার সংস্কৃতির বাহক হিসেবে জারি ও কবিগানের মধ্যযুগীয় ধারাকে আধুনিকায়নে কবি আমির হামজার অবদান অনস্বীকার্য। মধ্যযুগীয় ধারায় কবিগানের মূল বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম, পীর-ফকির ও দেব-দেবীর পরস্পর বিরোধী মহিমা কীর্তন ও আদি রসাত্মক চিত্তবিনোদন। আধুনিক যুগে এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিবর্তনের এই ধারায় কবিয়াল আমির হামজা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন। তিনি জারি ও কবিগানে দেশপ্রেম, প্রকৃতি, মাটি ও মানুষকে অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করেন।

কবির এ যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩টি। বাঘের থাবা, পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি ও একুশের পাঁচালি। তিনটি গ্রন্থই দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনী ‘অন্যপ্রকাশ’ থেকে মুদ্রিত হয়েছে। কবির অপর দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘কাব্যরাণী’ ও ‘ইকরা’ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

বরিশাট গ্রামবাসি ও কবির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, আমির হামজা গানের আসরে গান লিখে, সুর করে, শিল্পী হয়ে তা পরিবেশন করতে পারতেন। তার কবি জীবনের অপর বৈশিষ্ট্য হলো তিনি তাৎক্ষণিক দেশ ও জাতির হয়ে এমন গান ও কবিতা লিখতেন, যা মানুষ তার কাছে আশা করত। অন্যদিকে রণাঙ্গণের দুর্ধর্ষ গেরিলা আমির হামজা ছিলেন অসীম সাহসের অধিকারী। ১৯৮৩ সালে যখন রাষ্ট্রীয় কোন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যেত না সে সময় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে কবি প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে জাতির পিতার উপর তার রচিত গান পরিবেশন করেছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিংবদন্তী সুরকার শেখ সাদী খান কবি আমির হামজার ‘একটি মুজিব এনে দাওতো দেখি’ গানটিতে সুর করেছেন। বর্তমানে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আরেক কিংবদন্তী শিল্পী রফিকুল আলম।

তিনি লিখেছেন এবং গেয়েছেন আপন মনে। কোন প্রতিদান অথবা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আশা করেননি। যে কারণে তার অনেক সৃষ্টি সংরক্ষিত হয়নি। বর্তমানে কবির পরিবার তার সংগৃহিত কিছু সৃষ্টি পাঠকের জন্য প্রকাশের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যাকে নিয়ে এই লেখা, এত সব আয়োজন, পাঠক বন্দনা সেই নিভৃতচারি কবিয়াল আমির হামজা অনেকটা নিভৃতেই ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য কবিকে সারথী ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০১৫ প্রদান করা হয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি