1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কম জায়গায় অধিক ফসল ফলাতে সচেষ্ট ‘বিনা’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২

অধিক জনঘনত্বের দেশগুলোর অন্যতম এই ছোট্ট বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্যের জোগানটা চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। কম জায়গায় অধিক ফসল ফলাতে চলছে তাদের নিরন্তর গবেষণা। সে সুবাদে উদ্ভাবন হচ্ছে নতুন নতুন উচ্চফলনশীল জাত।

বিনার হাত ধরেই ধান, গমসহ নানা ফসলের উচ্চফলনশীল জাতের বিস্তার ঘটেছে সারা দেশে। স্বল্প ও বিনা মূল্যে কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণ চলছে। আর অল্প জমিতে বেশি ফসল পেয়ে বিনা উদ্ভাবিত বীজ ব্যবহারে কৃষকরাও অধিক হারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

বিনা ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি গম, ডাল, তেলবীজ, মসলাসহ উচ্চমানের দুটি সবজি উদ্ভাবন করেছে। ফসলের রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন, জীবনকাল কমিয়ে আনতে বহুমুখী গবেষণা চালিয়েছে বিনা।

ইনস্টিটিউট জানায়, বিনার গবেষকরা এ পর্যন্ত ১৮টি ফসলের উচ্চফলনশীল ১১৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে। এর বেশির ভাগই কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দুই থেকে পাঁচ বছর গবেষণার পর সফলতা এসেছে। এখন আরও তিন শতাধিক জাত নিয়ে গবেষণা চলছে। এসব আগামী তিন বছরের মধ্যে জাতীয় বীজ বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়াসাপেক্ষে উন্মুক্ত করার পর্যায়ে রয়েছে।

উদ্ভাবিত উল্লেখযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বিনাশাইল (ধান), বিনাধান ৪ থেকে ২৪, বিনাগম-১, অ্যাটমপাট-৩৮, বিনাদেশিপাট-২, বিনাপাটশাক-১, সফল (সরিষা), অগ্রণী (সরিষা), বিনাসরিষা-৩ থেকে ১০, বিনাচীনাবাদাম-১ থেকে ১০, বিনাতিল-১ থেকে ৪, বিনাসয়াবিন-১ থেকে ৬, বিনামসুর ১ থেকে ১১, বিনামুগ-১ থেকে ১০, হাইপ্রোছোলা (ছোলা), বিনাছোলা-২ থেকে ১০, বিনামাস-১ (মাসকালাইয়ের জাত), বিনাখেসারি-১, বাহার (টমেটো), বিনাটম্যাটো-২ থেকে ১৩, বিনালেবু-১ ও ২, বিনারসুন-১, বিনামরিচ-১ ও ২, বিনাপিঁয়াজ-১ ও ২, বিনাহলুদ-১।

গবেষকরা জানান, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন জাতের সঙ্গে শংকরায়ণ ও গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে মিউট্যান্ট লাইন উদ্ভাবন করা হয়। এরপর মিউট্যান্ট লাইনটি ফলন ও উন্নত বৈশিষ্ট্যের হলে অনুমোদন দেয়া হয়। বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়। প্রত্যেকটি জাত প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক বেশি ফলন দেয়৷ এ ছাড়া রোগসহিষ্ণুসহ বিভিন্ন গুণ রয়েছে এসব জাতের।

বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম মিঠু জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা তিন শর বেশি জাতের ১ হাজার ৩০০ মাতৃগাছ রয়েছে বিনার কাছে। এগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। এই মুহূর্তে ১৯টি দেশের ৩৬ রকমের বিদেশি ফল রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ভারত, আমেরিকা, চীন, জাপান, কানাডা, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ফলের জাত আমাদের সংগ্রহে আছে। ভিয়েতনাম থেকে আমরা কাজুবাদাম ও কফি সংগ্রহ করেছি। মিল্ক ফ্রুট বা স্টার আপেলও সংগ্রহ করেছি। গবেষণাধীন রয়েছে উন্নত জাতের ডালিম, জাম, পেয়ারা, সফেদা ও কদবেল।

‘এ ছাড়া বাজারে আমরা যে বরই পাই সেগুলো মার্চ-এপ্রিলেই শেষ হয়ে যায়। এ জন্য পাঁচ বছরের গবেষণায় বিনাবরই-১ নামে টক-মিষ্টি স্বাদের একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছি। নতুন জাতটি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে লাগানো হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ফুল আসবে এবং মার্চ-এপ্রিলে ফল তোলা শুরু হবে। আর যদি মার্চ-এপ্রিলে লাগানো হয়, তাহলে এপ্রিল-মে মাসে ফল তোলা যাবে। প্রতিটি গাছে তিন মাস পর্যন্ত বরই উৎপাদন করা যাবে। এটি এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় বীজ বোর্ডের ছাড়পত্র নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষের আওতায় আনা হবে।’

বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর জন্য বিনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ উদ্ভাবিত জাত সারা দেশে চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন জাতের বীজ বিনা মূল্যে ও অল্প মূল্যে কৃষকদের বিতরণ করছি। কৃষকরাও আমাদের উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাত চাষে ব্যাপক আগ্রহী হচ্ছেন।’

গবেষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সিলেকশনের মাধ্যমে যেটা ভালো পারফর্ম করে সেটা নিয়ে গবেষণা করি। এ ছাড়া ফিজিক্যাল মিউটেশনে গামা রেডিয়েশন দিই। কেমিক্যাল মিউটেশনে ইথেন, মিথেন, সালফেনামাইড দিয়ে ভেতরে জেনেটিক্যাল লেভেলে পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন ভ্যারাইটি আনার চেষ্টা করি।’

বিনার প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিসের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গবেষণার ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত উচ্চফলনশীল ১১৯টি জাত উদ্ভাবন হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ জাত চাষ হচ্ছে। উন্নত জাত উদ্ভাবনে বিনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নে গবেষণা করছি। এতে উৎপাদন প্রতিনিয়ত বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিনার উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণুসহ অনেক জাত মাঠপর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। এতে কৃষকরাও উপকৃত হচ্ছেন। পাহাড়ের ফল সমতলে চাষ, শীতের ফল গ্রীষ্মের আবহাওয়ায় চাষ, বারোমাসি বিভিন্ন ফলের জাতে উদ্ভাবনের ফলে কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে এসব ফসল চাষ করছেন।’


সর্বশেষ - রাজনীতি