1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আগরতলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’!

সাইফুল হক মোল্লা দুলু : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০২২

ভারতের আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের একটি পেয়ারা বাগানের ভেতরে প্রায় দেড় একর জমির ওপর বাঁশ-বেতের দোচালা একটি বাড়ি। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ৪০০ শয্যার একটি হাসপাতাল। হাসপাতালটির ইতিহাস আজ অনেকেরই জানা নেই। অথচ মুক্তিযুদ্ধের দুঃসময়ে আহত মুক্তিযোদ্ধা, সৈনিক এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা করে হাসপাতালটি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

হাসপাতালটির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশাররফ। তার মুখ থেকেই শোনা যাক হাসপাতাটির জন্মকথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘সৈনিক এবং গণবাহিনীর জন্য চিকিৎসার বন্দোবস্ত ছিল না, আমার সঙ্গে শুধু সেনাবাহিনীর একজন ডাক্তার ছিল- ক্যাপ্টেন আখতার। অফিসার-স্বল্পতার কারণে তাকেও একটা কোম্পানির কমান্ডার বানিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োগ করেছিলাম। অথচ ক্রমেই বাড়তে থাকে আহতের সংখ্যা। দ্রুত চিকিৎসার অভাবে যখন অনেক সৈনিক বা গণবাহিনীর ছেলে রক্তক্ষয় হয়ে মারা যেতে থাকে, তখন বুঝতে পারলাম, সেক্টরেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাপ্টেন আখতারকে অতিসত্বর আমার সদর দপ্তরের কাছে একটি চিকিৎসালয় স্থাপন করার নির্দেশ দিই।’

মতিনগরে খালেদ মোশাররফের হেডকোয়ার্টারের কাছে কয়েকটি তাঁবুতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম বাংলাদেশ হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেন ক্যাপ্টেন আখতার। আখতারের দলে ছিলেন বেগম সুফিয়া কামালের দুই মেয়ে টুলু এবং লুলু, মেডিকেল ছাত্রী ডালিয়া, আসমা, রেশমা, সবিতা, শামসুদ্দিন প্রমুখ। নিজেদের সুখ ও আরাম ত্যাগ করে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিক এবং মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের সেবাশুশ্রূষা ও চিকিৎসা করে এই দল।

জুনে লন্ডন থেকে ডা. মবিন এই হাসপাতালে এসে যোগ দেন। কিছুদিন পর লন্ডন থেকে এসে যোগ দেন ডা. মবিনের বন্ধু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দু’জনে লন্ডনে এফআরসিএস করছিলেন। তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হাসপাতালটি নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেন খালেদ মোশাররফ। ডা. মবিন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাকে আশ্বাস দেন- লন্ডনের প্রবাসী বাঙালিরা মাতৃভূমির জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রস্তুত; আর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে এ হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা তারা করতে পারবেন।

ভারতীয় ব্যবসায়ী হাবুল ব্যানার্জি স্বেচ্ছায় বিশ্রামগঞ্জে তার নিজস্ব পেয়ারা বাগানের প্রায় দেড় একর জমি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন। সেখানেই মে মাসের মধ্যে বাঁশ, কাঠ ও ছন দিয়ে ২০০ শয্যার একটি হাসপাতাল তৈরি করে ফেলে আখতার বাহিনী। আস্তে আস্তে শয্যাসংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। উদয়পুরের ডিসি ব্যানার্জি ও আগরতলা শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক ড. চ্যাটার্জি এ হাসপাতালের জন্য প্রচুর সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। কিছুদিন পর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. মবিনের প্রচেষ্টায় এবং লন্ডন প্রবাসী বাঙালি ডাক্তারদের সহায়তায় হাসপাতালের জন্য অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম ও ওষুধপত্র চলে আসে।

জুলাইয়ের শেষদিকে হাসপাতালের কমান্ডিং অফিসার (সিও) হিসেবে যোগ দেন ডা. ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম। ডাক্তার হওয়ার পর ৭০-এর জুলাই মাসে সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগ দেন সিতারা। ছুটিতে থাকা অবস্থায় অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি আর চাকরিতে ফিরে যাননি। পরে যুদ্ধ শুরু হলে ভারতে পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ হাসপাতালে যোগ দেন। তিনি যোগ দেওয়ার পর গোটা হাসপাতালের পরিবেশ আরও সুশৃঙ্খল হয়। মেধা, শ্রম, দক্ষতা ও সেবা দিয়ে সবার মন জয় করেন তিনি। এই হাসপাতালে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্যাপ্টেন সিতারাকে পরে বীরপ্রতীক উপাধি দেওয়া হয়। একজন মেয়ে হয়েও যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের সাহসী কাজ করার জন্য মূলত তাকে এ উপাধি দেওয়া হয়।

এই হাসপাতালে যে শুধু বাঙালি রোগী, আহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধরাই চিকিৎসার জন্য আসতেন, তা নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও বাংলাদেশ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। শরণার্থী বাঙালি, স্থানীয় লোকজনেরও প্রচুর ভিড় হতো। কর্নেল ওসমানী হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন এবং ৩০ হাজার টাকা অনুদান দেন। সেপ্টেম্বর মাসে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালটি পরিদর্শন ও এর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিশ্রামগঞ্জের এ হাসপাতালটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। যেসব চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য পর্যায়ের কর্মী এ হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা সবাই এ জাতির গর্বিত সন্তান। বাঙালি জাতি চিরদিন তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মান জানিয়ে যাবে।

লেখক : সাইফুল হক মোল্লা দুলু – সিনিয়র সাংবাদিক, সমকাল। dulu1963@gmail.com


সর্বশেষ - রাজনীতি