বিএনপির সাবেক নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর তদন্তে কোনো তথ্য প্রমাণ পায়নি পুলিশ। পুলিশের ধারণা, হারিছ চৌধুরীর পরিবার পরিকল্পনা করে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে থাকা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থেকে নাম প্রত্যাহার মামলা থেকে বাঁচতে এ গুজব ছড়ানো হয়েছে।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়ে যে খবর ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে তার পরিবার ভালো করে বলতে পারবেন, আমাদের কাছে কোনও মৃত্যুর তথ্য নেই।’
এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিএনপির সাবেক নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে। সত্যিই মারা গেছেন কিনা তা জানতে চেয়ে সিআইডিকে চিঠি দেয় ইন্টারপোল। তার বিরুদ্ধে থাকা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ প্রত্যাহারের জন্য নিজ উদ্যোগে তার মৃত্যুর প্রমাণ জানার চেষ্টা করে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। মৃত্যুর সত্যতা যাচাইয়ে মাঠে নেমে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি সংস্থাটি। দেশে থাকা স্বজনদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, কিন্তু কেউ মৃত্যুর প্রমাণ দিতে পারেনি। সবাই অন্যের মুখে শুনেছেন বলে সিআইডিকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ করে। কারও বিষয়ে রেড নোটিশ জারি কিংবা প্রত্যাহারের বিষয়টিও তারাই তদারকি করে। তারা বলছে, রেড নোটিশ প্রত্যাহারের আগে হারিছের মৃত্যুর সঠিক তথ্য প্রমাণ দরকার। তাই সিআইডিকে এ বিষয়ে দ্রুত লিখিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত এখনও অব্যাহত রয়েছে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মহিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ধারণা, এই গুজবটি তার পরিবার থেকে ছড়ানো হয়েছে, যাতে রেড নোটিশ সরিয়ে ফেলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ থাকবে।’
গত ১১ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে হারিছ চৌধুরী চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরীর বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে মারা যান। এরপর হারিছ চৌধুরীর মেয়ের বরাত দিয়ে কেউ কেউ খবর প্রকাশ করেন তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামি ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা সিলেটের হারিছ চৌধুরী। ওই হামলার টার্গেট ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই হামলা মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। অভিযোগপত্রে তাকে লাপাত্তা দেখানো হয়।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর হারিছ চৌধুরী গা ঢাকা দেন। ২১ আগস্ট হামলা মামলায় তিনি অভিযুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, ‘খুন এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশে হ্যান্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ।’ রেড নোটিশে তার ছবিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্যও উল্লেখ রয়েছে।