ফেসবুক পেজ বা আইডি খুলতে টাকা পয়সা কিছুই লাগে না। নামে-বেনামে, ফুল-পাখি, লতা-পাতার ছবি দিয়ে গন্ডায় গন্ডায় ফেসবুক আইডি এবং পেজ খোলা যায় এই সামাজিক যোগযোগের প্ল্যাটফর্মে। তবে সাইবার জগতের একটা অমোঘ সত্য হলো- যা কিছুই করা হোক না কেন, সব কিছুরই ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট থেকে যায়।
বছরখানেক আগে হঠাৎ ফেসবুকে হট আইটেম হিসেবে পরিচিত ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন। অপরাধ, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি নিজের অর্থায়নে তরুণ যুব সমাজকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে আনতে খুলেছেন ফুটবল একাডেমিও। তার এ সকল সামাজিক কর্মকাণ্ড অনেক মানুষকে নাড়া দেয়।
যার কারণে রাতারাতি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রেজে পরিণত হন। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। ফেসবুকে তার নিজের আইডি ছাড়াও ভক্ত অনুরাগীরা তার নামে পেজ খোলেন। আবার এসব পেজে লাখ লাখ ভক্ত অনুরাগী তাকে অনুসরণ করেন, যুক্ত হন নেটওয়ার্কে। আর এই সুযোগে ওঁৎ পেতে থাকা জালিয়াত চক্র শুরু করে তাদের কর্মকাণ্ড। অনেক জায়গায় তার পেজ থেকে সাহায্য চাওয়ার নামে চাঁদাবাজি পর্যন্ত হয়েছে বলে জানা যায়।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমনের ফুটবল ক্লাবের নামে ১ জুলাই, ২০১৯ইং তারিখে এমনই একটি পেজ খোলে একটি বিশেষ চক্র। সুমনের ভিডিও, বক্তব্য নিয়মিত প্রচারিত হয় সেখানে। তার সেসব বক্তব্য এবং ভিডিওকে কাটছাঁট করে সরকারবিরোধী বক্তব্য হিসেবে প্রচারণা চলে। রাতারাথি হাজার থেকে লাখে পৌঁছে যায় ফলোয়ার। অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে পেজের প্রচারণা বাড়ানো হয়।
একই মাসের ২০ তারিখে সেই পেজ রূপান্তরিত হয় ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন- নামে। মাত্র ২০ দিনেই ক্লাব থেকে ব্যাক্তিতে রূপ নেয় সেই পেজ। হু হু করে বাড়তে থাকে পেজের রিচ। যে কোনো পোস্টই হয়ে যায় ভাইরাল। ব্যরিস্টার সুমনের পোস্ট ধীরে ধীরে কমতে থাকে, বাড়তে থাকে সরকারবিরোধী প্রপাগান্ডা, গুজব আর দেশবিরোধী বক্তব্য। সুমনের গ্রহণযোগ্যতাকে পুঁজি করে অপপ্রচারের বিস্তার বাড়তে থাকে গাণিতিক হারে।
এই সংঘবদ্ধ চক্রের আসল চেহারাটা প্রকাশ পায় অক্টোবরের ১৩ তারিখ, একই বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নেতা নুরুল হক নুরু স্বরূপে বেরিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে বিপুল ফলোয়ার আর রিচের কল্যাণে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের তকমা পেয়ে যান ফেসবুক থেকে।
ফেসবুকে নুরুর নামে ফেসবুকে ৬৩টিরও বেশি আইডি ও পেজ রয়েছে। ৩১টি আইডি, বাংলা নামে ১৯টি পেজ এবং ইংরেজিতে ১৩টিসহ মোট ৬৩টি আইডি ও পেজের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে নুরুর দাবি, ফেসবুকে তার ২টি ছাড়া আর কোনো পেজ নেই। যদিও এই দুটির বাইরে তার নামে একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে (ওপরে বর্ণিত)।
এর আগে ডয়েচে ভেলের এক অনুষ্ঠানের ভিডিও সম্পাদনা করে একাত্তরের রাজাকার নূর হোসেনের পুত্র শিবির নেতা ইলিয়াস হোসেনের ভিডিও কন্টেন্ট লাগিয়ে দেয়। ভিডিওটি ইউটিউবে ভাইরাল হয়। সেই ভুয়া ভিডিওটি শেয়ার করা হয় ‘ভিপি নুরুল হক নুর’ নামে ওই পেজ থেকে।
অথচ নুরু দাবি করেন, ফেসবুকে তার কোনো আইডি নেই। শুধুমাত্র ২টি পেজ আছে। ২টি পেজ একটি আরেকটির বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া তার আর কোনো আইডি বা পেজ নেই।
নুরুর দাবি অনুযায়ী এই ২টি পেজ বাদ দিলে বাকি ৬১টি আইডি ও পেজ তাহলে কে চালায়- এমন প্রশ্নের জবাবে নুরু গণমাধ্যমকে এর আগে বলেছিলেন, আমার নামে ভুয়া একটি পেজ থেকে ভিডিও শেয়ার দেওয়া হয়। আমার নামে বিভিন্ন আইডি খুলে নানা রকম ‘ফালতু’ পোস্ট করার অভিযোগ পাওয়ার পর আমি এসব আইডি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য থানায় জিডি করেছি।
ভেরিফায়েড আইডির মালিকানা অ’স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার আগে একটি আইডি ছিল। সেটি কে বা কারা হ্যাক করে নেয়। ওই আইডির সঙ্গে পেজ সংযুক্ত ছিল। হ্যাকাররা ওই পেজ পরবর্তীতে ভেরিফায়েড করে নেয়।
যদি বাকি ৬১টি আইডি এবং পেজের ব্যাপারে নুরুর কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকে, তাহলে কোটা বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপগুলোতে, যেখানে নুরু নিজে এবং ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পষিদের নেতারা এডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে সেই গ্রুপগুলোতে ওই ৬১টি আইডি এবং পেজ থেকে দেওয়া পোস্ট এপ্রুভ হয় কী করে- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।