1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাঙ্গালিদের প্রতি মেজর জিয়ার আচরন ছিলো খুবই রুক্ষ

সিরু বাঙালি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১

২৩ মার্চ ১৯৭১ বিস্ফোরণােন্মুখ সময়ে আমরা কজন ২০/২৫ বা বয়সী টগবগে তরুণ ষােলশহর ২নং রেল গেইটে বায়েজিদ বােস্তামী রােডের উপর একটি ৮ বগিসম্পন্ন মালবাহী রেলওয়াগন দিয়ে রােড ব্লক করে তা পাহারা দিচ্ছিলাম। সন্ধ্যা তখন প্রায় সাড়ে সাতটা হবে। মার্চ মাসের সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা মানে সূর্য ডােবার অব্যবহিত পর। অন্ধকার নেমে এসেছে। তবে তা গাঢ় নয়। মানুষের অবয়ব দেখা যায়। ঠিক সেসময় চট্টগ্রাম নতুনপাড়া সেনানিবাসের দিক থেকে একটি জিপ নিয়ে একজন সামরিক অফিসার এসে আমাদের রােড ব্লকের সামনে দাঁড়াল। জিপের পেছনে দুজন সাধারণ বাঙালি সৈনিক। ড্রাইভার পাঞ্জাবী।
রেল ওয়াগান দিয়ে রােড ব্লক। সুতরাং সামরিক সেনা অফিসারটি জিপ থেকে নামতে বাধ্য হলেন। কালাে ও মাঝারি গড়নের সেই সেনাঅফিসারটি জিপ থেকে নেমে খটাখট শব্দ তুলে জোরকদমে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। বললেন, রেলক্রসিং থেকে ওয়াগান সরাও। আমাকে রাস্তার ওদিকে যেতে হবে।
 
মুখে বাংলা বুলি শুনে আমরা যারপর নাই আনন্দিত হলাম, বাঙালি সেনা অফিসার যখন, তখন অবশ্যই আমাদের পক্ষের লােক হবে; ভাবলাম আমরা। আমাদের দলের একজন বলল, রেল ওয়াগান সরানাে যাবেনা। কোনও পাকিস্তানি সৈন্যবাহী গাড়িকে ওপারে যেতে দেয়া হবে না। বাঙালি সেনা অফিসার চোখ কটমট করে আমাদের দিকে চাইলেন। সঙ্গে পাঞ্জাবী ড্রাইভারটি পারলে আমাদের চিবিয়ে খায়। কিন্তু আমরা তখন স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত। ওসব চোখ রাঙানি থােড়াই কেয়ার করি। আমাদের সঙ্গের এক প্রতিবাদী যুবক উচ্চকণ্ঠে বলল, চোখ রাঙাচ্ছেন কেন?
আপনিওতাে আমাদের মতাে বাঙালি। বােঝেন না, দেশের হালচাল? কালােবরণ সেনাঅফিসারটি রেগে গেলেন বলে মনে হল। পেছনের সিটে বসা বাঙালি সাধারণ সৈনিক দু’জনও এবার নেমে এলেন গাড়ি থেকে। এসেই অফিসারের দু’পাশে দু’জন দাঁড়াল। কালােবরণ অফিসার রাগান্বিত কণ্ঠে আমাদেরকে বললেন, চুপ কর। কথা বাড়িও না। রেল ব্যারিকেড সরাও। আমাদের যেতে দাও। তিনি আমাদেরকে এমনভাবে নির্দেশ দিচ্ছিলেন, শুনে মনে হচ্ছিল, আমরা যেন তারই অধীনস্থ সৈন্য। তার হাবভাব ও হম্বিতম্বি দেখে আমাদের মাথায় খুন চেপে গেল। আমরা সকলে সমস্বরে চিৎকার করে বললাম, রেল ব্যারিকেড সারানাে হবে না। কোনও পাকিস্তানি সৈন্যবাহী যানবাহনকে শহরের দিকে যেতে দেয়া হবে না। আমাদের জান গেলেও না।
 
আমাদের মত তার গলাও সপ্তমে উঠল। তিনিও চিৎকার করে বললেন, জানাে, আমি কে? এ পর্যন্ত বলে তিনি তার পেছনে দাঁড়ানাে সৈন্য দুজনের দিকে পলকের জন্য চাইলেন। তারপর বললেন, আমার নাম মেজর জিয়াউর রহমান। আমি ষােলশহর সিডিএ মার্কেটে অবস্থিত ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড। দরকারি কাজে আমাকে আমার স্টেশন হেড কোয়ার্টারে যেতে হবে। ব্যারিকেড হঠাও।
আমরা বললাম, আপনি মেজর জিয়াউর রহমান হন, আর জেনারেল ইয়াহিয়া খান হন, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। রেল ক্রসিং এর ওপারে কোনও সামরিক যানবাহন যেতে পারবেনা। আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে এটা ঘটবে না।
আমাদের সকলের সম্মলিত চিতকারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেই সেনাঅফিসারটি যে দারুণভাবে ক্ষেপে গেলেন, সেটা তাঁর চেহারা দেখেই বােঝা গেল। ভীষণ রুক্ষ ও রূঢ় ভাষায় তিনি আমাদেরকে এর পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। বললেন, তােমরা অপরিণামদর্শী যুবক। এর খেসারত তােমাদেরকে দিতে হবে। তৈরী থেকো। এই বলে তিনি তার জিপ নিয়ে দ্রুত চট্টগ্রাম সেনানিবাসের দিতে চলে গেলেন।
বাঙালি হয়েও বাঙালি জাতির গৌরবজনক কার্যের প্রতি একজন বাঙালি সেনাঅফিসারের এহেন রুক্ষ ও রূঢ় আচরণ আমাদেরকে দস্তরমত বিস্মিত ও হতভম্ব করল। মেজর জিয়াউর রহমান নামের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনুগত এই বাঙালি সেনাঅফিসার ব্যারিকেড স্থান ত্যাগ করার পর স্থানীয় বহুলােক আমাদের সঙ্গে যােগ দিয়ে নানা রকম মুখরােচক আলােচনায় অংশ নিল।
 
সূত্রঃ যুদ্ধের ময়দান থেকে মেজর জিয়ার পলায়ন, সিরু বাঙালি


সর্বশেষ - রাজনীতি