খালেদার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের চক্রান্তের স্ক্র্যাপ
তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তান রিসালপুর মিলিটারি একাডেমিতে ইন্সট্রাকটর। বাংলাদেশে তার আগমণও ঘটে গোয়েন্দা হিসেবেই। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে অস্ত্র খালাসের সময় জুনিয়র অফিসারদের তোপের মুখে বাধ্য হয়েই তাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়। তবে জিয়া কোনদিন সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেননি অর্থাৎ তার মধ্যে গা বাঁচানো এবং সুযোগসন্ধানী স্বভাবটি চিরকালই ছিলো।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম খলনায়ক ফারুক রহমান আবুধাবীতে পাকিস্তানী এক আর্মড রেজিমেন্টের স্কোয়াড্রন কমান্ডার ছিলেন, ১২ ডিসেম্বর সে পক্ষ বদলে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, আরেক স্বার্থান্বেষী সুযোগসন্ধানী আব্দুর রশীদ যোগ দেন তার এক মাস আগে। এর আগে পশ্চিম পাকিস্তানেই ছিলেন তিনি, যুদ্ধে যোগ দেন পালিয়ে নয়, ছুটি নিয়ে!
উল্লেখ্য রিসালপুরেই জিয়াউর রহমানের সঙ্গে এদের দুজনের প্রথম পরিচয়।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ মোটেই স্বেচ্ছায় ছিল না। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশেই তারা এসেছিল। এদিকে জিয়াউর রহমানও তার মিশনে ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে অনেক বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলেও কারও হয়তো সমীকরণ মেলানোর সময় ছিল না।
স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার নীল নকশাটি যারা করেছিল তারা আসলেই মুক্তিযোদ্ধা হলে নিশ্চয়ই রাজাকারদের পুনর্বাসনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতো না।
অশোক রায়নার বই ‘ইনসাইড র দ্যা স্টোরি অব ইন্ডিয়াস্ সিক্রেট সার্ভিস’ থেকে জানা যায় বেগম জিয়ার বাড়ির ট্রেস থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল তিন ঘণ্টা মিটিংয়ের পরে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ক্যু-এর একটি স্ক্রাপ পেপার। কাগজটি যত্নসহকারে গার্বেজ করা হলে একজন গুপ্তচর গৃহভৃত্যের মাধ্যমে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দিল্লীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বার্তা পেয়ে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য ‘র’এর পরিচালক মি. কাউ পান বিক্রেতার ছদ্মবেশে বাংলাদেশে আসেন। বঙ্গবন্ধু সেটাকে যথারীতি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ওরা আমার সন্তানের মতো। এই চিরকুটে যাদের নাম ছিল, জিয়াউর রহমান, মেজর রশিদ, মেজর ফারুক, জেনারেল ওসমানী এবং মেজর শাহরিয়ার।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চক্রান্ত বাস্তবায়নের পুরস্কার স্বরূপ জিয়াউর রহমান ঘাতকদের মধ্যে মেজর (বরখাস্ত) বজলুল হুদাকে সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালের ৫ জুন ইসলামাবাদের হাইকমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর ৮ জুন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরীকে তেহরান দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ও ১৪ জুন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে জাকার্তা দূতাবাসের একই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২ জুলাই লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজিয়ার্স দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব, ৫ জুলাই ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবুধাবি দূতাবাসের তৃতীয় সচিব, ৭ জুলাই মেজর (বরখাস্ত) খায়রুজ্জামানানকে কায়রো দূতাবাসের তৃতীয় সচিব, ৮ জুলাই লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) মোহাম্মাদ আব্দুল আজিজ পাশাকে বুয়েন্স আয়ার্স দূতাবাসের প্রথম সচিব, ১৫ জুলাই মেজর (বরখাস্ত) আহমেদ শরফুল হোসেনকে কুয়েত দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ও ২৬ জুলাই ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) নাজমুল হোসাইন আনসারিকে অটোয়া হাইকমিশনের তৃতীয় সচিব পদে নিয়োগ পান।
এছাড়া ২ আগস্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) এ এম রাশেদ চৌধুরীকে জেদ্দা কন্স্যুলেট জেনারেলের দ্বিতীয় সচিব এবং ২৫ সেপ্টেম্বর মেজর (অব.) শরীফুল হক ডালিমকে বেইজিং দূতাবাসের প্রথম সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন জিয়উর রহমান।