1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্মার্ট বাংলাদেশ: স্মার্ট ব্যাংকিং ও ক্যাশলেস লেনদেন

ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন বা ক্যাশলেস ট্রানজেকশনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে আধুনিক প্রযুক্তি কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোডের মাধ্যমে এই কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল কম্পানি (এমএফসি) ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক। কিউআর কোড হলো সাদা-কালো কিছু পিক্সেলে ভরা একটি বর্গাকার বাক্স, যার মধ্যে সংরক্ষণ করা যেতে পারে প্রায় সাত হাজারের মতো অক্ষর অথবা সংখ্যা। বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবাদে কিউআর কোড আমাদের কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দোকানে ফোন নম্বর স্ক্যান করতে, কোনো ওয়েবসাইটের লিংকে প্রবেশ করতে কিউআর কোডের জুড়ি নেই। আজকাল বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং শপিং মলও তাদের পণ্যের মেন্যু কিউআর কোডে নিয়ে আসছে। স্মার্টফোনের ক্যামেরা বের করে স্ক্যান করলেই তৎক্ষণাৎ পণ্যের ছবিসহ লিস্ট স্ক্রিনে চলে আসে। হাতে স্পর্শের কোনো ঝামেলা নেই। মেন্যু প্রিন্ট করানোর কোনো ঝামেলা নেই। এ রকম হাজারটা ঝামেলা থেকে মুক্ত কিউআর কোড। ফলে মোবাইল অ্যাপে স্ক্যান করে দ্রুত আর্থিক লেনদেন করা যায়। এ জন্য প্রথমে মোবাইলে ব্যাংক বা এমএফএস বা পিএসপির অ্যাপ ডাউনলোড করতে হয়। অ্যাপে পিন টাইপ করে লগইন করে যে দোকান বা মার্চেন্ট থেকে কিনতে হবে, সেখানে আউটলেট প্রদর্শিত কিউআর কোড স্ক্যান করলেই ছবিসংবলিত বিক্রেতার তথ্য প্রদর্শিত হয়। এরপর পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ করার জন্য টাকার পরিমাণ লিখলে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) আসবে, যা দেওয়ার পর পেমেন্টের কনফারমেশন ও ডিজিটাল রিসিট পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকে কিউআর কোডের আবিষ্কার করা হলেও জনসাধারণের মধ্যে তা জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে স্মার্টফোনের মাধ্যমে, এর কন্টাক্টলেস বৈশিষ্ট্যের কারণে। বর্তমানে যেকোনো স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়েই কিউআর কোড স্ক্যান করা যায়। ফোনে বিল্ট ইন স্ক্যানার না থাকলেও গুগল-প্লে স্টোর থেকে এই সুবিধা নেওয়া যায়। চীনে আলিপে, উইচ্যাট পে, ভারতে পেটিএম এবং কিউআর খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ বাংলা কিউআর স্ট্যান্ডার্ড ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার দেশের সব ব্যবসায়ী, বিশেষ করে ফুটপাতের ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে কিউআর কোডে সব তথ্য বাংলায় রাখা হয়েছে। ফলে এখন থেকে গ্রাহকদের বিভিন্ন নেটওয়ার্কের একাধিক কিউআর কোড ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। এই পদ্ধতি ছাড়াও দেশে বিকাশ, নেক্সাস পে, ইউপে ইত্যাদি মোবাইল ফিন্যান্সিং সার্ভিসে কিউআর কোড সেবা চালু রয়েছে। রয়েছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) এবং ই-কমার্স তথা অনলাইনভিত্তিক লেনদেন। গত নভেম্বরে (২০২২) দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, এমএফএস ও পেমেন্ট সিস্টেমকে নিয়ে অ্যাপ ও ওয়েবভিত্তিক ক্যাশলেস সেবা ‘বিনিময়’ চালু হয়েছে। আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি (আইডিয়া) প্রকল্প এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে ভেলওয়্যার লিমিটেড, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ ও ওরিয়ন ইনফরমেটিকস লিমিটেড। সব ধরনের আর্থিক লেনদেনকে সাশ্রয়ী, সহজ এবং স্বচ্ছ করেছে ‘বিনিময়’, যার মধ্যে রয়েছে কর্মচারীদের বেতন প্রদান, রেমিট্যান্স পাঠানো, ট্যাক্স/ভ্যাট প্রদান, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ এবং ই-কমার্স লেনদেন। এমনকি এমএফএস বা ব্যাংকের যেকোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে বিকাশ, রকেট, উপায় কিংবা এমক্যাশে ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে টাকা লেনদেনের সুযোগ রয়েছে।

২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্যে সরকার সব উদ্যোগ নিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বস্তরের জনগণ যাতে স্বল্প খরচে নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে আইসিটি ডিভিশন। আশা করা হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলা যাবে। প্রযুক্তির বাইরে থাকা সাধারণ মানুষও যাতে এসব নতুন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হয় সেই লক্ষ্যে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সহজ মেন্যু ও অপশন রাখা হয়েছে। খরচ রাখা হয়েছে একেবারেই ন্যূনতম। যেমন—‘বিনিময়ে’ খরচ নগদ, বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ ও এমক্যাশের চেয়ে অনেক কম। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক টু ব্যাংক যেকোনো অঙ্কের লেনদেনে সর্বোচ্চ কর্তন মাত্র ১০ টাকা এবং গ্রাহক পর্যায়ে বিকাশ থেকে রকেটে লেনদেনে প্রতি হাজারে মাত্র পাঁচ টাকা। আর (পেমেন্ট সার্ভিস প্রভাইডার) পিএসপি থেকে পিএসপি ও এমএফএসে টাকা পাঠালে গ্রাহককে দিতে হবে প্রতি হাজারে পাঁচ টাকা। নতুন চালুকৃত কিউআর কোডের খরচ আরো কম।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা কত, সে বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য নেই। তবে জাতিসংঘ পুঁজি উন্নয়ন তহবিল কর্তৃক ২০১৮ সালে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩.১০ লাখ অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁদের বছরে টার্নওভার প্রায় ১৮.৪২ বিলিয়ন টাকা এবং প্রায় ২০ লাখ লোক এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত। প্রায় পাঁচ-ছয় কোটি গ্রামবাসীসহ বিপুলসংখ্যক এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ৯০ শতাংশের নেই কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা প্রযুক্তিগত জ্ঞান। অর্থ লেনদেনে প্রতিনিয়তই তাঁরা হচ্ছেন প্রতারণার শিকার। এসব জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ভয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্যাশলেস লেনদেনের আওতায় আনার জন্যই সরকারের এই উদ্যোগ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং ক্যাশলেস লেনদেনে ধনী ব্যবসায়ী, উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী ও বিত্তবানদের সঙ্গে দেশের হতদরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত এবং অতি ক্ষুদ্র ভাসমান ব্যবসায়ীরও অবদান রাখার এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

লেখক : ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার – অধ্যাপক, আইআইটি , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 


সর্বশেষ - রাজনীতি