1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কৃষিতে আমাদের যা কিছু অর্জন

ড. মো. তাসদিকুর রহমান সনেট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

কৃষিই বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রাণ। অনাদিকাল থেকে এদেশের মানুষ খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কৃষির ওপর নির্ভর করে আসছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে স্বাধীনতা উত্তরকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিশিক্ষা, গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষির উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জাতির পিতার প্রদর্শিত পথেই কৃষির সার্বিক উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার। ফলশ্রুতিতে আমরা এখন দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পাশাপাশি শাক-সবজি ও দেশীয় ফল-মূলের ব্যাপক উৎপাদন জাতীয় পর্যায়ে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কৃষক ও কৃষিবিদদের অসামান্য অবদানের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম উৎপাদনে ৭ম, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম, চা উৎপাদনে ৪র্থ, পাট উৎপাদনে ২য়, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মাছ উৎপাদনে ৩য় এবং ইলিশ উৎপাদনে ১ম স্থানে অবস্থান করে বিশ্বপরিমণ্ডলে সমাদৃত। এ সবকিছু অর্জন সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া প্রথম শ্রেণির মর্যাদা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কৃষিবান্ধব নীতির কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে বর্তমানে বিশ্বে দানাদার শস্য উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদদের নিরলস প্রচেষ্টায় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃষিবান্ধব নীতির কারণে আমরা আজ কৃষিতে সমৃদ্ধ। কৃষির এই অভাবনীয় সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ১১১টি জাত, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ধান, পাঠ, গম, তেলবীজ, সবজি ও মসলা জাতীয় শস্যের ১৯টি উচ্চ ফলনশীল এবং উন্নত গুণসম্পন্ন ১১৪টি জাত, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২১০টির অধিক ফসলের ৭০০টি প্রযুক্তি, তুলা উন্নয়ন বোর্ড ২১টি জাত, বিজেআরআই ৬৪টি জাত, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ইক্ষুর ৪৮টি ও সুগারবিট তাল ও স্টিভিয়ার জাত উদ্ভাবন ও উন্মুক্ত করা হয়েছে। জিএমও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটি বেগুনের ৪টি জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং বিটি তুলার জাত উদ্ভাবনের কাজ চলমান রয়েছে। দেশী ও তোষা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারসহ পাঁচশতাধিক ফসলের ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। পাট ও পাটজাতীয় আঁশ ফসলের ৫৪টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে কৃষি উৎপাদন পৌঁছেছে এক অভাবনীয় উচ্চতায়।

ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে সোনালি ফসলে ভরপুর দেখতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে কারণে স্বাধীনতার পর তিনি ডাক দিয়েছিলেন সবুজ বিপ্লবের, কৃষিকে দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’। তিনি উপলব্ধি করতেন কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারলে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নের ভিত্তি টেকসই হবে। তাই তিনি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, সংস্কার-পুনঃসংস্কার, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনসহ কৃষির অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান করেন এবং পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে কৃষি গবেষণা ও প্রযুক্তি চর্চায় শিক্ষিত যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার জন্য কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের কৃষি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছিলেন। সে সময় কৃষিবিদ নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে বঙ্গবন্ধু বললেন ‘তোরা ইঞ্জিনিয়ারদের সমান চাস কেন? তোরা বেশি চাবি। আমার কাছে তো ফাইল সইয়ের জন্য আসবেই। কেউ না দিলে আমি তো তোদের দেব।’ সে সময়ের বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের (বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র কৃষিবিদ জাতির পিতার কাছে এই দাবি জানালে তিনি সে মর্যাদা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সরকার নতুন পে-কমিশন বানালেন এবং সে পে-কমিশনে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অবনমন করেন। পুনরায় কৃষিবিদরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সিনিয়র কৃষিবিদ ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের দাবির মুখে জিয়াউর রহমান বাধ্য হয়ে ১৯৭৮-এর মে মাসে সে দাবি মেনে নেন এবং ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন বঙ্গবন্ধুর দেওয়া কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা।

সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে দেশে বর্তমানে ৮টি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, দুটি বেসরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া আরও ৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও কৃষিশিক্ষা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা ৩২ হাজার এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট কৃষি গ্র্যাজুয়েট বের হয়েছেন প্রায় ৫৬ হাজার। সরকারি পর্যায়ে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মিলে বর্তমানে প্রায় ২৪টি কৃষিভিত্তিক সংস্থার পাশাপাশি কৃষিবিদরা ৮টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বীমাসহ পুলিশ ও প্রশাসনে কর্মরত জনবলের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার, বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ করে ক্রপ প্রোটেকশন ও বীজ কোম্পানিতে কর্মরত জনবলের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার রয়েছে। যে পেশায় থাকুক না কেন সর্বক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তারা। রাজনীতিতেও রয়েছে কৃষিবিদদের আধিপত্য। বর্তমানে সরকারের দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রী কৃষিবিদ। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীও কৃষিবিদ। প্রধানমন্ত্রীর সচিব, প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার ও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেও কৃষিবিদগণ কাজ করেছেন। বর্তমান সরকারের ৮ জন সচিব রয়েছেন কৃষিবিদ। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত ও কর্মরত কৃষিবিদের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। তাছাড়াও ব্যবসা-ব্যাণিজ্য ও রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন প্রায় শতাধিক কৃষিবিদ। এক কথায় সোনার বাংলা বিনির্মাণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এবং দেশে-বিদেশে আমাদের কৃষিবিদগণ মেধা ও দক্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া প্রথম শ্রেণির মর্যাদার কারণে।

কৃষি সেক্টর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তার মূল চালিকাশক্তি সরকারের কৃষিনীতি ও কৃষির প্রতি আন্তরিকতা। তাছাড়া কৃষক ও কৃষিবিদদের প্রচেষ্টা ও উর্বর ভূমি নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। দেশের কৃষিবিদগণ তাদের মেধা ও মননশীলতা দিয়ে জয় করেছেন মূলত এই অর্জন। আমাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠী তাই সৃষ্টিকর্তার রহমতে দীর্ঘদিন যাবৎ খাদ্য কষ্ট থেকে পেয়েছে পরিত্রাণ। তবে এতকিছু প্রাপ্তির পরেও আমাদের প্রত্যাশা এখনো অপূর্ণ রয়েছে। আমাদের জেনারেশনে আজ আলফা জেনারেশনের অবস্থান। তারা আজ প্রযুক্তিনির্ভর। আমরা যারা এক্স জেনারেশনের মানুষ অর্থাৎ ১৯৮০ সালের পূর্বে জন্ম তারা আছি পরিকল্পনা প্রণয়নে। ইতোমধ্যে আরও দুটি জেনারেশন ওয়াই এবং জেড অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টাপ্লান ২১০০ রয়েছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে মেধাবী ও তরুণ প্রজন্মকে কৃষি পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের প্রণয়ন করতে হবে যুগপোযোগী পরিকল্পনা। প্রতি বছর যে সকল কৃষি গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন তাদের কর্মস্থান তৈরি করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। তাছাড়া কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজারজাতকরণ ও ভার্টিকাল কৃষিতে তরুণ কৃষিবিদদের গ্রামীণ পর্যায়ে সম্পৃক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। আর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রফেশনাল অর্গানাইজেশনে পরিণত করতে হবে সবাই মিলে।

কৃষিবিদদের এই মর্যাদা প্রাপ্তির দীর্ঘকাল পর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের ২৭ নভেম্বর ২০১০ তারিখের সভায় ১৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘কৃষিবিদ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১১ সাল থেকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ১৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি কৃষিবিদ দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করে আসছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন এই যে, দিনটিকে কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদদের জন্য জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য এবং পাশাপাশি কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি সংরক্ষণের জন্য রাজধানীর বুকে একটি কৃষি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা। আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় নিজেদের উৎসর্গ করা।

লেখক : ড. মো. তাসদিকুর রহমান সনেট – কৃষিবিদ, সাধারণ সম্পাদক, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ


সর্বশেষ - রাজনীতি