১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর। জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠনের পর কিছুদিন সম্পর্কে জটিলতা থাকলেও পরবর্তীতে তা রাজনৈতিক জোটে রূপ নেয়। ক্ষমতার দুই মেয়াদে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীদের দ্বারা ছাত্রদল-যুবদল ও বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী আহত ও নিহত হলেও জামায়াতের মন জুগিয়ে চলেছে বিএনপি। কিন্তু ২০০৮ এর নির্বাচনে পরাজয়ের পর, বিশেষত ২০১৩-২০১৪ সালে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে জনমত ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপে বিএনপি-জামাতের সম্পর্কে টানাপোড়ন শুরু হয়।
২০১৮ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন না দেয়ায় এক বিবৃতিতে জামায়াতের নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরোয়ার ১৯৯১ সালে সরকার গঠনে সহায়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুলকে ধিক্কার জানিয়েছিলেন।
এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের একাংশ স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে অপছন্দ করে। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারণে দেশ-বিদেশের সব মহলের পরামর্শ উপেক্ষা করে জামায়াতকে নিয়েই পথ চলছে বিএনপি।
জামায়াত-শিবিরকে ছাড়তে চান বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূল:
গত ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তারেক রহমান জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে নারাজ। জানা গেছে, খালেদা জিয়াও কয়েকবার জামায়াতকে বাদ দিতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু এত বিতর্ক ও অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতাবিরোধী দলটির সঙ্গে তারেক জিয়া জোট ভাঙতে সম্মত নন। এ নিয়ে দুই ধরণের অভিমত পাওয়া যায়।
অর্থের লোভ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে জামাত-শিবির:
বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সহ সমর্থকদের অনেকে মনে করেন অর্থের লোভ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে জামায়াত-শিবিরকে পেশিশক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে চায় তারেক জিয়া।
জানা গেছে, বিএনপির রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণে জামায়াতকে ব্যবহার করা ছাড়াও জামায়াতের পক্ষ থেকে তারেক নিয়মিতভাবে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পান। এছাড়া সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পরিচিত জামায়াত শিবিরের সারাদেশে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক রয়েছে যা বিএনপির পক্ষে কাজে লাগাতে চান তারেক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অনেক নেতা প্রায়শই বিভিন্ন ঘরোয়া আলোচনায় মন্তব্য করেন যে, অর্থ-বিত্ত ও ক্ষমতার ফাঁদে পড়ে জামায়াতকে ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না তারেক। তাই বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও প্রগতিশীল সমাজের পক্ষ থেকে বার বার অনুরোধ ও পরামর্শের পরও বিএনপি জামায়াতকে ছাড়তে রাজি হয় নি।
তারেক কি জামায়াতের ব্ল্যাকমেইলের শিকার?
বর্তমানে অনেকেই তারেককে জামায়াতের মুখপাত্র বলে থাকেন। জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য থেকে বের হতে না পারার কারণ হিসেবে জামায়াতের বড় ধরনের বিনিয়োগ ও প্রতিমাসে তারেককে বিপুল অঙ্কের অর্থ দেয়ার বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে তারেক জামায়াতকে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী অপতৎপরতায় ব্যবহার করেছে। ৬৩ জেলায় বোমা হামলা, কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড, বৃটিশ রাষ্ট্রদূতের উপর গ্রেনেড নিক্ষেপ, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জামায়াতকে ব্যবহার করেছে। ধারণা করা হয় জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলে বহু স্পর্শকাতর ও গোপন বিষয় প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসতে পারে যা তারেকের ভাবমূর্তি ধ্বংসের কারণ হতে পারে।
জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া জানালেও এ কথা নিশ্চিত যে, জামায়াত ছাড়ার ঝুঁকি নেবে না তারেক জিয়া।