1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রস ছাড়াই ক্ষতিকর উপকরণে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়

প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

খেজুরের রস ছাড়াই রাজশাহীতে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়। পানির সঙ্গে চিনি মিশিয়ে তাতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা ও চুন মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এই গুড়। এভাবে গুড় তৈরির সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার শতাধিক গুড় ব্যবসায়ী। তাদের তৈরি এই গুড় বাজারজাত করা হচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে।
 
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খেজুর গুড়ের জন্য দেশব্যাপী পরিচিত বাঘা উপজেলার আড়ানীতে অভিযান চালিয়ে এমন একটি ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা আবিষ্কার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে জব্দ করা হয়েছে খেজুর রস ছাড়া তৈরি অর্ধশত মণ ভেজাল ‘খেজুর গুড়’। কারখানা থেকে জব্দ করা হয়েছে গুড়ে মেশানোর জন্য রাখা ১০ মণ চিনি, হাইড্রোজ, চুন, ডালডাসহ নানা উপকরণ। আটক করা হয়েছে কারখানার মালিক বাঘার আড়ানী চকরপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রকিব আলী (৪২) ও তার ছয়জন সহযোগীকে।
 
সোমবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আটককৃতদের মুখোমুখি করা হয় সাংবাদিকদের সামনে।
 
পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানিয়েছেন তারা পরস্পর যোগসাজশে দু-তিন মাস ধরে ওই কারখানায় চিনি, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা ও বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করে আসছেন। খেজুর গুড় নামে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব বাজারজাত করা হলেও গুড়ে খেজুর রসের কোনো অস্তিত্বই নেই।
 
পুলিশ সুপার জানান, রোববার বিকালে আড়ানী পৌরসভার চকপাড়া মহল্লার একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৫০ মন ভেজাল খেজুর গুড় এবং গুড় তৈরির বিভিন্ন উপকরণ ও কেমিক্যাল জব্দ করা হয়েছে। এ সময় কারখানা মালিক রকিব আলী ছাড়াও তার ছয় সহযোগীকে আটক করা হয়েছে। এরা হলেন একই এলাকার আকবর আলীর ছেলে সুমন আলী (৪২), মৃত মাজদার রহমানের ছেলে অনিক আলী পাইলট (৩০), মোসলেম আলীর ছেলে মাসুদ রানা (৩০), আব্দুল হান্নানের ছেলে বিপ্লব হোসেন সাজু (২৫), ওহাব আলীর ছেলে মামুন আলী (২৭) ও মোহাম্মদ বাবু (২৫)।
 
পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, গুড় তৈরির ক্ষেত্রে যেসব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও জটিল রোগের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় বাঘা থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের বাঘা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আর কারা জড়িত, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
 
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, সনাতন চক্রবর্তী, ইফতে খায়ের আলম, অলক বিশ্বাস প্রমুখ।
 
চুন, হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা দিয়ে তৈরি গুড় খেলে মানুষের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। এসব কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি গুড় অল্প পরিমাণ এবং এক আধবার খেলে পেটের নানা ধরনের পীড়া হবে। এসব উপাদান দিয়ে তৈরি গুড় কেউ নিয়মিত খেলে দীর্ঘমেয়াদে তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি কিংবা ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
 
অনলাইনে খাঁটি খেজুর গুড়ের অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করে থাকেন নগরীর গ্রেটার রোডের ব্যবসায়ী এনামুল হক। তিনি বলেন, বাজারে খেজুর গুড় খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এই দামে ক্রেতাকে ঠকতেই হবে। এই দামে কোনো ব্যবসায়ীই খাঁটি খেজুর গুড় দিতে পারবেন না। কারণ, এক কেজি খেজুর গুড় তৈরি করতে ৭ থেকে ৮ কেজি খেজুর রস লাগে। ২০ টাকা কেজি ধরলেও এক কেজি গুড় তৈরিতে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকার শুধু রসই লাগে। এরপর শ্রমিক খরচ ও পরিবহন ব্যয় ধরে খেজুরের খাঁটি গুড় ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি করলে কিছু লাভ হবে। এর নিচে বেচলে পুঁজি হারাতে হবে।
 
এনামুল হক বলেন, সাধারণ মানুষ ২৫০ টাকা কেজি দরে গুড় কিনতে চায় না। তারা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তাও করে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা খেজুর রস ছাড়াই গুড় তৈরি করে খেজুর গুড় নামে বাজারে বিক্রি করছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার অধিদফতর, বিএসটিআই কিংবা জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ভেজাল গুড়ের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালালে অসাধু ব্যবসায়ীরা আর ঝুঁকি নেবে না। তখন দামে বেশি হলেও মানুষ নিরাপদ খেজুর গুড় পাবে।


সর্বশেষ - রাজনীতি